বিজেপি সংক্রান্ত সব মামলা কৌশিক চন্দর এজলাসে কেন? কী বলছেন মমতার আইনজীবী সঞ্জয় বসু?

0
2

কলকাতা হাইকোর্টে এর আগে কবে এমন ঘটনা ঘটেছে অথবা আদৌ ঘটেছে কি’না, প্রবীণ আইনজীবীরাও তা মনে করতে পারছেন না৷ একের পর এক দৃষ্টান্ত সামনে এনে আইনজীবীদের অভিযোগ, কলকাতা হাইকোর্টের বিরুদ্ধে এই কারণেই ইদানিং ‘রাজনৈতিক-দৃষ্টিভঙ্গি’-তে চালিত হওয়ার অভিযোগ উঠছে৷ এ ধরণের অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক ৷ অভিযোগের পক্ষে বলা হয়েছে,

⚫ নন্দীগ্রাম-পুনর্গণনা মামলাটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে৷ সেই মামলা সরানো হয়েছে বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে৷

⚫ শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ত্রিপল-চুরির অভিযোগ এনেছে কাঁথি পুরসভা৷ শুভেন্দু সেই মামলা ও অভিযোগ খারিজের দাবিতে হাইকোর্টে মামলা করেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে৷ এই মামলা সরানো হয়েছে বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে৷

⚫ মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে প্ররোচনামূলক ভাষণ দিয়ে রাজ্যে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ এনেছে যুব তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় পাল৷ মিঠুন চক্রবর্তী এই মামলা ও অভিযোগ খারিজের দাবিতে হাইকোর্টে মামলা করেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে৷ এই মামলাও সরানো হয়েছে বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে৷

তো, কে এই বিচারপতি কৌশিক চন্দ ? কেন বিজেপি’র স্বার্থযুক্ত যে কোনও মামলা ঘুরে ফিরে এই বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসেই পাঠাচ্ছেন হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল ?

গত ২৪ জুন নন্দীগ্রাম-পুনর্গণনা মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি কৌশিক চন্দের কিছু মন্তব্যের মধ্যেই এসব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে বলে জোরালো দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সঞ্জয় বসু৷ বিশিষ্ট এই আইনজীবীর ব্যাখ্যা, বিচারপতি কৌশিক চন্দের সঙ্গে বিজেপি’র সুসম্পর্ক থাকার বিষয়টি আর ‘সন্দেহ’-র মধ্যে নেই৷ বিচারপতির সঙ্গে বিজেপির যোগ কতখানি দৃঢ়, তা ২৪ তারিখ এই মামলা চলাকালীন এজলাসে বসে ব্যাখ্যা করেছেন বিচারপতি নিজেই৷ সেদিন কী কী বলেছেন বিচারপতি চন্দ:

◾(১) আমি এক সময়ে বিজেপি-র লিগাল সেলের পদাধিকারী ছিলাম৷

◾(২) আমার সম্পর্কে আপনাদের দু’টি অভিযোগ, (এক) বিচারপতি হওয়ার আগে বিজেপি করতাম এবং (দুই) আমার বিচারপতির পদ স্থায়ীকরণে মুখ্যমন্ত্রী সুপারিশ করেননি, আপত্তি জানিয়েছেন৷

◾(৩) আমি এক সময়ে বিজেপি-র লিগাল সেলের প্রধান ছিলাম বলেই আপনাদের অসুবিধা?

◾(৪) আমি স্বীকার করছি অমিত শাহের সঙ্গে আমার ছবি আছে৷ বিজেপির হয়ে যে কেউই মামলা করতে পারে৷
◾(৫) ২০১৪ সালে আমি ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপির সভার অনুমতি আদায় করি মামলা করে৷ বিজেপির হয়ে আমি আদালতে সওয়াল করি৷ ওই সভায় আমি অমিত শাহের সঙ্গে এক মঞ্চে ছিলাম৷ এবং সেদিন আমাকে সম্বর্ধনাও দেওয়া হয়৷

◾(৬) কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল পদের দায়িত্ব নেওয়ার আগে আমি বিজেপির একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলাম৷

এই তথ্যগুলি একের পর এক তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সঞ্জয় বসু বলেছেন, এজলাসে বসেই বিচারপতি কৌশিক চন্দ সেদিন নিজেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিজেপির পদাধিকারী ছিলেন এবং বিজেপির প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, প্রেম এখনও অটুট৷ ফলে এই বিচারপতির সঙ্গে বিজেপির সুদৃঢ় যোগাযোগের বিষয়টি আর স্রেফ অনুমান বা সন্দেহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই৷ বিষয়টি কঠোর বাস্তব ৷ সঞ্জয় বসুর স্পষ্ট বক্তব্য, কৌশিক চন্দের সঙ্গে বিজেপি’র যোগাযোগ এখনও নিবিড় বলেই বিজেপি’র সরাসরি স্বার্থ যে মামলায় আছে, যেমন এই নন্দীগ্রাম- পুনর্গণনা মামলা, শুভেন্দু অধিকারীর ত্রিপল-চুরির মামলা বা মিঠুন চক্রবর্তীর মামলার বিচার করার দায়িত্ব বিচারপতি কৌশিক চন্দকেই দেওয়া হয়েছে৷ এবং এই কারণেই নন্দীগ্রাম-পুণর্গণনা মামলা বিচারপতি চন্দের এজলাস থেকে সরানোর আবেদন করেছেন মামলাকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ প্রসঙ্গত, গত ২৪ জুন
মামলা সরানোর এই আবেদনের শুনানি হয়েছে৷ রায়দান স্থগিত রেখেছেন বিচারপতি চন্দ৷

মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে প্ররোচনামূলক ভাষণ দিয়ে রাজ্যে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ আনা যুব তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় পালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তীও এই একই অভিযোগ এনেছেন৷
ইতিমধ্যেই এই মামলা বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাস থেকে সরানোর আর্জি জানিয়েছেন আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তীও ৷ তাঁর বক্তব্য, এই এজলাসে নিরপেক্ষ বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন অভিযোগকারী মৃত্যুঞ্জয় পাল৷ মামলাটি বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাস থেকে বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে সরানোর কারনেই এই আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে৷ মিঠুন চক্রবর্তী শুধুই একজন অভিনেতা নন, তিনি বিজেপির একজন নেতাও৷

এইসব অভিযোগকে কেন্দ্র করেই কলকাতা হাইকোর্টের নিরপেক্ষতা নিয়ে বেনজির প্রশ্ন সামনে এনেছেন আইনজীবীদের একাংশ৷ হাইকোর্টের কাছে এর উত্তর আশা করছেন তাঁরা৷