উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য হিসেবে ঘোষণার দাবি তুলেছেন বিজেপি সাংসদ জন বার্লা(John barla)। তার এহেন দাবিতে রীতিমতো উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে বঙ্গভঙ্গে মদতের অভিযোগ করছে শাসকদল তৃণমূল। বার্লার দাবিতে পদ্মবনে অস্বস্তি ক্রমশ বাড়ছে। গুরুতর এই পরিস্থিতিতেই বঙ্গবাসীর মন পেতে এবার ড্যামেজ কন্ট্রোলে(damage control) নামল গেরুয়া শিবির। একদিকে বঙ্গভঙ্গের দাবি তোলার পর এবার সেই বিজেপি সরব হল পশ্চিমবঙ্গ দিবস(West Bengal day) পালনের দাবিতে। রবিবার বিধানসভায় সামনে শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) নেতৃত্বে বিজেপির তরফে দাবি তোলা হলো দলমত নির্বিশেষে রাজ্যে পালন করতে হবে পশ্চিমবঙ্গ দিবস। তবে বিজেপির(BJP) এহেন উদ্যোগে ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মারার ছক দেখতে পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল।
এদিন শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে রীতিমতো পোস্টার ব্যানার হাতে বিধানসভার সামনে কর্মসূচি করতে দেখা যায় বিজেপি বিধায়কদের। তাদের দাবি, দলমত নির্বিশেষে বিধানসভায় সমস্ত বিধায়কদের পালন করতে হবে পশ্চিমবঙ্গ দিবস। তবে বিজেপির এহেন কর্মসূচির পিছনে রাজনৈতিক মহল অবশ্য অন্য পরিকল্পনা দেখছে। রাজনৈতিক ফায়দা তো বটেই পাশাপাশি সম্প্রতি বঙ্গভঙ্গের দাবি তুলে গেরুয়া শিবির যেভাবে অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে তা কাটাতেই বিজেপির এই উদ্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে শুধুমাত্র ‘বাংলা’ করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সরব তৃণমূল সরকার। এই নাম পরিবর্তনের ফলে সরকারি ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে রাজ্য। তবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সে দাবি মানতে নারাজ। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক স্বার্থে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের দাবিতে বাংলার ‘আবেগ’ নিয়ে এই মাতামাতিতে সেই উদ্যোগকে কিছুটা ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়া যাবে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির।
আরও পড়ুন:পরাজয় মানতে না পেরে ৩৫৬-র দাবি তুলছে বিজেপি: তীব্র কটাক্ষ কুণালের
শুধু তাই নয়, বঙ্গে এতদিন রীতিমতো ব্রাত্য থাকা ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের মাধ্যমে মানুষের কাছে তুলে ধরতে আরো বেশি সুবিধা হবে বিজেপির। এসব কিছুর পাশাপাশি বঙ্গভঙ্গের যে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র তলে তলে কষা হচ্ছে সেটাকে আপাতভাবে মানুষের মন থেকে মুছে ফেলা সম্ভব হবে। বঙ্গবাসীর আবেগকে হাতিয়ার করে পশ্চিমবঙ্গ দিবসকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার এমন সুযোগ কোনওভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নয় বিজেপি।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ দিবসের পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস। স্বাধীনতার আগে বিভাজনের প্রস্তাব দেওয়া হলে, ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় আইন পরিষদ একটি বৈঠকের আয়োজন করে। যেখানে বাংলা পাকিস্তানের সঙ্গে এক হয়ে যাবে, নাকি ভারতের সঙ্গে এক থাকবে, না বিভক্ত হয়ে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ তর্ক-বিতর্ক এবং আলোচনার পর বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করার এবং পশ্চিমবঙ্গের ভিত্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই থেকেই এই দিনটিকে “পশ্চিমবঙ্গ দিবস” হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়। এর অগ্রভাগে ছিলেন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বে কয়েক মাসের নিরলস প্রচেষ্টা এবং উদ্যোগের পর পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশ হিসেবে থাকবে বলে এই সিদ্ধান্ত হয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডঃ মেঘনাদ সাহা, ডঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদার, ডঃ সুনীতি কুমার চ্যাটার্জি এবং ডঃ যদুনাথ সরকারের মতো বিশিষ্টরা। এখন সেই ইস্যুকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে ময়দানে নামল গেরুয়া শিবির।















































































































































