নিউটাউনে এনকাউন্টারে খতম গ্যাংস্টার ভুল্লারের খলিস্তানি জঙ্গিযোগ, পুরোটা জানলে চমকে উঠবেন

0
3

নিউটাউনে এনকাউন্টারে খতম পাঞ্জাবের মোস্ট ওয়ান্টেড গ্যাংস্টার জয়পাল সিং ভুল্লার সম্পর্কে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সহজে বড় লোক হওয়ার নেশায় প্রতিভাবান খেলোয়াড় থেকে কুখ্যাত গ্যাংস্টার হয়ে যায় অবসরপ্রাপ্ত অ্যাসিসট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টরের ছেলে জয়পাল।

অপরাধ জগতের যে উচ্চতায় জয়পাল নিজেকে পৌঁছে দিয়েছে সেখানে থেকে ফেরা আর সম্ভব ছিল না। তার সঙ্গে খালিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগসূত্র মিলছে। তদন্তে উঠে এসেছে, পাকিস্তান থেকে চোরাপথে আনা মাদকের কারবারের বিপুল অর্থ খালিস্তানি জঙ্গি সংগঠনের তহবিলে ঢালত ভুল্লার। ব্যাকফুটে চলে যাওয়া খালিস্তানি আন্দোলনকে নতুন করে অক্সিজেন জুগিয়ে চাঙ্গা করাই ছিল পাঞ্জাব পুলিশের প্রাক্তন কর্মীর গুণধর ছেলের টার্গেট।

নিউটাউনের সাপুরজি আবাসনের বি-ব্লকের ২০১ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে ভুল্লার ও তার সহযোগীর মৃতদেহের সঙ্গেই মিলেছে এমন বেশ কিছু তথ্য, যা থেকে পাকিস্তান এবং খালিস্তানপন্থীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আরও প্রতিষ্ঠিত হয়। জয়পাল জীবিত ধরা পড়লে, এই তদন্ত আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত বলে মনে করছেন পাঞ্জাব পুলিশের আধিকারিকরা। তবে এনকাউন্টরে ভুল্লারের মৃত্যু পাঞ্জাবকে স্বস্তি দেবে বলেই মনে করেন তাঁরা।

ভুল্লার সম্পর্কে উঠে এসেছে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। জঙ্গি যোগ, পাক মাফিয়াদের সঙ্গে মাদক কারবার ছাড়াও ডাকাতি, অপহরণ, তোলাবাজি ও লুটপাটেও ভুল্লার বাহিনী ছিল পারদর্শী।

এক নজরে জয়পাল ভুল্লারের অপরাধমূলক কীর্তিকলাপ–

(১) ২০০৪ সালে অপরাধ জগতে হাতেখড়ি ভুল্লারের। সঙ্গী
হ্যাপিকে নিয়ে জয়পাল তার নিকটাত্মীয়র ছেলে চিরাগকে অপহরণের ছক কষে। একলাফে বড়লোক হতে চেয়েছিল তারা। তবে সফল হয়নি পরিকল্পনা। লুধিয়ানার জেলে ঠাঁই হয় জয়পাল ও হ্যাপির। জেলে রাজীব ওরফে রাজার সঙ্গে আলাপ হয় জয়পালের। আরও বড় অপরাধের দিকে পা বাড়ায় তারা।

(২) ২০০৬ সালে লুধিয়ানার ৩ জন গয়না দোকানিকে খুন ও লুঠের দায়ে অভিযুক্ত ছিল রাজা। জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে শেরার সঙ্গে দেখা হয় জয়পালের। শেরা আবার জাতীয়স্তরের হ্যামার থ্রোয়ার। সে নিউজিল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। সেজন্য দরকার ছিল টাকা। ২০০৯ সালে বারনালা বাস স্ট্যান্ড থেকে রাজাকে পুলিশের হেফাজতকে ছিনিয়ে আনে তারা। লুধিয়ানা থেকে বাঠিন্ডার জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাকে। তিন জনে মিলে ‘গ্যাং’ করে তারা।

(৩) ২০০৯ সালের শুরুতে হোসিয়ারপুরের কারখানা থেকে বন্দুক লুঠ করে তারা। এরপর পঞ্চকুল্লা ও মোহালিতে ব্যাঙ্ক ডাকাতি, চণ্ডীগড়ের ব্যবসায়ী এবং বিজেপি নেতাকে লুঠ ও হাইওয়ে থেকে গাড়ি ছিনতাই করে। হরিয়ানায় গ্যাং চালাত রাজা। পঞ্জাবে জয়পাল। ওই বছরের জুনে রাজা ও তার গ্যাংয়ের লোকজনকে গ্রেফতার করে পঞ্চকুল্লা পুলিশ। তার মাসখানেকের মধ্যে চণ্ডীগড় পুলিশ পাকড়াও করে জয়পালকে। পঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লির ২৭টি থানার মামলায় তাদের আদালতে তোলা হয়।

(৪) ২০১২ সালে চণ্ডীগড়ের বুরারি জেলে রকির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় জয়পালের। তবে বেশিদিন বন্ধুত্ব টেকেনি। পাঞ্জাবে জয়পাল গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় শেরা। রাজস্থানে মাদক ব্যবসা শুরু করে জয়পাল। রকির হয়ে কাজ করতে শুরু করে হ্যাপি। ২০১২ সালে হ্যাপিকে খুন করে শেরা। তার ২ মাস পর এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় তার। শেরার খবর পুলিশকে দিয়েছিল রকির দলের লোকজন।

(৫) ২০১৭ সালে চণ্ডীগড়ের বুরানে নিরাপত্তা রক্ষীদের মাথায় আগেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ক্যাশ ভ্যান থেকে ১.৩৩ কোটি টাকা লুট।

(৬) ২০১৮ সালেও একই ধরনের অপরাধ ঘটায় ভুল্লার গ্যাং।

(৭) ২০২০ সালে সোনা বন্ধক রেখে টাকা ঋণ প্রদানকারী সংস্থায় ডাকাতি করে ৩০কেজি সোনা লুট।

(৮) ২০২১ সালে পাঞ্জাবের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টরকে খুন করার পর তাদের আর্মস লুট।

(৯) আন্তর্জাতিক অস্ত্র কারবারীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বেআইনি অস্ত্র ব্যবসা।

(১০) পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা খালিস্তানি ‘মেন্টর’দের সঙ্গে যোগাযোগ।

(১১) উত্তর ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, দিল্লি এবং হিমাচল প্রদেশেও নিজের অপরাধমূলক নেটওয়ার্কের বিস্তার।

Advt