এখনও হল না নারদ মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। বৃহস্পতিবার ফের কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলছে। মামলা স্থানান্তর নিয়ে এদিনও অব্যাহত ছিল সওয়াল৷ নতুন কোনও বিষয় সামনে না এলে, চলতি সপ্তাহেই নারদ মামলার শুনানি নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন আইনিমহল।
গত ১৭ মে-র পর থেকে কলকাতা হাইকোর্টে প্রায় রোজ চলছে নারদ মামলার শুনানি। শুনছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতি। মামলার বিচার্য মূলত দু’টি বিষয়৷ প্রথমটি অভিযুক্তদের জামিন মঞ্জুর হবে কি’না এবং দ্বিতীয়টি মামলাটি ব্যাঙ্কশাল কোর্ট থেকে অন্যত্র স্থানান্তর হবে কি’না৷ প্রথমটিতে CBI হেরেছে, হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছে চার হেভিওয়েট অভিযুক্তকে৷ এবার মামলা স্থানান্তর নিয়ে CBI ঝাঁপিয়ে পড়েছে৷ এখন বৃহত্তর বেঞ্চে চলছে দ্বিতীয় বিষয়ের শুনানি। আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, মামলাটি ধীরগতিতে এগোচ্ছে। দিন প্রতি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা করে শুনানি হচ্ছে। কম সময়ের শুনানি। এ কারণে মামলার পরিণতি এখনই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হবে না। তবে এই সপ্তাহেই শুনানি শেষ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হয়তো আগামী সপ্তাহেই মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে৷
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে নারদ- মামলা স্থানান্তরের শুনানিতে অভিযুক্তদের কৌঁসুলি সিদ্ধার্থ লুথরা তাঁর সওয়ালে নারদ- মামলায় CBI-এর ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন৷
লুথরা এদিন সওয়ালে CBI-এর ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে বলেন, “যে কোনও মামলায় একজন জিতবে, একজন হারবে। আদালতের নিয়ম বলছে, রায় পছন্দ না হলে উচ্চতর আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। আর এখানে একটা রায় CBI-এর বিরুদ্ধে গিয়েছে বলে ওরা মামলা স্থানান্তরের আবেদন জানিয়েছে৷ এটাই একমাত্র মামলা স্থানান্তরের কোনও কারণ হতে পারে না।”
এর পর ধাপে ধাপে এই মামলায় CBI-এর আইনবহির্ভূত কাজের দৃষ্টান্তও তুলে ধরে লুথরা বলেন,
◾১) CBI যখন গ্রেফতার চার অভিযুক্তের বাড়ি যায়, তখন তাঁদের ‘গ্রাউন্ড অফ অ্যারেস্ট’ জানানো হয়নি৷
◾২) নিম্ন আদালতে শুনানির আগে CBI চার্জশিট পেশ করেনি৷ পরে কলকাতা পুলিশের সাহায্য নিয়ে চার্জশিট পেশ করে।
◾৩) রাজ্যপালকেও CBI জানায় গ্রেফতারের পর৷
◾৪) CBI সেদিন সকাল ৮টা ১০ মিনিটে গ্রেফতার করেছে৷ কিন্তু অ্যারেস্ট মেমোতে ৮.৪৫ দেখিয়েছে।
◾৫) জনপ্রতিনিধিদের গ্রেফতার করার আগে অনুমতি নিতে হয়, এখানে গ্রেফতারের পরে নেওয়া হয়েছে। CBI-এর আধিকারিকরা দুপুর ১ টার সময় রাজ্যপালের কার্যালয়ের বাইরে বসে ছিলেন।
◾৬) এই নিয়মেই কি CBI এখন চলছে ?
এর পর অভিযুক্তদের কৌঁসুলি সিদ্ধার্থ লুথরা সওয়ালে বলেন,
◾লুথরা – নিম্ন আদালতের বিচারকরা নির্দিষ্ট সার্ভিস রুল মেনেই নিযুক্ত হন। কাজ শুরুর আগে তারা সংবিধানকে সামনে রেখে কাজ শুরু করেন। তাই বিচার করার সময় তারা কারুর পক্ষপাতিত্ব করতে পারেন না।
◾ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি –
মি: লুথরা, আপনি কি বলতে চাইছেন বিচারক শপথের সময় যা অঙ্গীকার করেছিলেন, তা মানেননি?
◾লুথরা – তা নয়, আমি বলতে চাইছি যে নিম্ন আদালতের বিচারকরা শপথের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ভয়ে রায়দান করেন। যে শপথের মর্যাদা রক্ষার কথা আমরা সবসময় বলি, বিশেষ বিচারক কি সেটা রক্ষা করবেন না ?
◾লুথরা – বিচারপতিরা সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করার শপথ নেন। তারা মানুষের ধারণার দ্বারা প্রভাবিত হন না। আমরা যদি CBI-এর তরফে সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য স্বীকার করে নিই , তাহলে আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ব। তাহলে এটাই মেনে নিতে হবে মাননীয় বিচারপতিরা যে শপথবাক্য পাঠ করেছেন সেটা একটা কাগজ ছাড়া কিছু নয়।
◾লুথরা – আমার বিশ্বাস যে মাননীয় বিচারপতিরা জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দিতেন না। ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা জামিন স্থগিত করেছেন। CBI অত্যন্ত কৌশল করেই তাদের বক্তব্য পেশ করেছে।
◾লুথরা – আমরা সকলেই জানি, জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের সমতুল ক্ষমতা নিম্ন আদালতের আছে।
◾বিচারপতি আই পি মুখোপাধ্যায় – মি: লুথরা, শপথের শর্ত মেনে বিচারক বা বিচারপতিরা কাজ করবেন এটা ঠিক। কিন্তু বিষয়টা মানতে গেলে মামলার উপযুক্ত তথ্য প্রমান বা উপযুক্ত নথি থাকা দরকার। বিচারকরা তো কম্পিউটার নয়। বিচারক বা বিচারপতিরা শপথ মেনে চলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁরাও মানুষ, কম্পিউটার বা রোবট নন। তাঁরাও নির্ভুল নন।
◾বিচারপতি আই পি মুখোপাধ্যায় – যখন মামলায় উপযুক্ত তথ্য প্রমান থাকেনা, তখনই বিচারকদের সিদ্ধান্তকে পক্ষপাতদুষ্ট বা Biased বলা হয়।
◾লুথরা – CBI-এর নির্দিষ্ট কোনও গ্রাউন্ড নেই। নিম্ন আদালতের রায় অন্তর্বর্তীকালীন। তাই, জামিনের পর ওই নির্দেশের ওপর যে রায় হয়েছে সেটা CBI-এর পক্ষে গিয়েছে। ওই রায়কে পক্ষপাতদুষ্ট বলা যায় না৷
◾লুথরা – বাইরে যদি প্রচণ্ড গন্ডগোলও চলে, তাহলেও কোর্টের ভিতরে মাননীয় বিচারপতিদের কাজে বাধাদান করবে কে ?