“গভীরভাবে ভাবনাচিন্তা না করে ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’-র সঙ্গে জোট করার ফলেই পশ্চিমবঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়েছে কংগ্রেস।”
বিধানসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে কেন দল কার্যত মুছে গেলো, তার কারণ খুঁজতে কেন্দ্রীয় নেতা অশোক চৌহানের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করেছে কংগ্রেস হাইকম্যাণ্ড।চৌহান ছাড়াও এই কমিটিতে রয়েছেন সলমন খুরশিদ এবং মনীশ তিওয়ারিও। পাঁচ সদস্যের এই কমিটির রিপোর্টে ঠিক এ কথাই বলা হয়েছে৷ এর অর্থ, এরাজ্যে প্রথমবার ‘কংগ্রেসমুক্ত’ বিধানসভা হওয়ার জন্য আব্বাস সিদ্দিকির ISF-কেই দায়ী করেছে কংগ্রেস হাইকম্যাণ্ড।
চৌহান কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, গোটা বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে না দেখে, জেলাস্তরে আলোচনা না করে, প্রদেশ নেতাদের ইচ্ছাতেই ISF- এর সঙ্গে জোট গঠন করার মাশুল দিতে হয়েছে কংগ্রেসকে ৷ সূত্রের খবর, প্রদেশ কংগ্রেসে বদল আনার প্রয়োজনীয়তার কথাও হাই কম্যাণ্ডকে জানিয়েছে চৌহান-কমিটি।
আরও পড়ুন-দাবিদার নেই, কোভিডে মৃত সহস্রাধিক চিতাভস্ম কাবেরী নদীতে ভাসাল সরকার
বাংলায় কংগ্রেসের শোচনীয় ফলের কারণ জানতে গত কয়েকদিন ধরেই কেন্দ্রের এই কমিটি ধরে ধরে ফলাফল নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছে। প্রশ্ন উঠেছে অধীর চৌধুরির ভূমিকা নিয়েও। তাঁকে সরিয়ে বিকল্প মুখ তুলে আনার দাবি জানিয়েছে জেলার নেতারা। দুর্বল সংগঠনের কারণেই ভোটে এমন বিপর্যয় বলে জানানো হয়েছে কমিটির রিপোর্টে। বলা হয়েছে, গত কয়েক বছর ধরেই সংগঠনকে মজবুত করার কোনও চেষ্টাই করেনি প্রদেশ নেতারা৷ আব্বাস সিদ্দিকির দলের সঙ্গে জোট করার ফলে কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে করছে এই কমিটি। চৌহান কমিটিকে প্রদেশ কংগ্রেস এবং জেলা কংগ্রেসের একাধিক নেতা ভার্চুয়ালি জানিয়েছেন, জোট হয়েছে শুধু বামফ্রন্টের সঙ্গে, এমনই বলা হয়েছিল। এরপর বামফ্রন্ট সংযুক্ত মোর্চায় ISF-কে সামিল করে। আব্বাসের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনওরকম সমঝোতা হয়নি৷ কিন্তু অধীর- মান্নানরা ISF- এর সঙ্গে জোটকে মেনে নিয়েছেন৷ এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোটাররাও বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন। কেন ISF – এর সঙ্গে জোট কংগ্রেস করেছে, তার কারণ এখনও স্পষ্টভাবে জানায়নি প্রদেশ পদাধিকারীরা৷
ওদিকে প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের পুত্র রোহন মিত্র বলেছেন, “অধীর-মান্নানের জন্যই হার হয়েছে৷ এখনও কংগ্রেসে লবিবাজি চলছে৷” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি ও আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে রোহন দলের ভরাডুবির জন্য অধীর-মান্নানকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন৷ ISF-এর সঙ্গে জোট নিয়েও প্রশ্ন তুলে রোহন বলেছেন, “কংগ্রেসে এখনও লবিবাজি চলছে৷ মান্নান এখন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হতে চাইছেন৷ এমন হলে আমরা দল ছাড়ব”। রোহন মিত্র বলেছেন, “আবদুল মান্নানই অধীর চৌধুরিকে ফুরফুরা শরিফে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওটা ধর্মীয়স্থল৷ কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দলের ওখানে রাজনৈতিক আলোচনা করা ঠিক হয়নি”। মান্নানের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সোমেন-পুত্র বলেছেন, “এই ধরনের চাপ মান্নান আমার বাবাকেও দিতেন”। রোহনের বক্তব্য, “লজ্জাজনক পরাজয়ের পরেও কংগ্রেসে কোন্দল চলছে। মান্নান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হলে আমরা দল ছাড়ব।”
রোহন বলেছেন, “নির্বাচনে আমরা বিজেপি-কে আক্রমণ না করে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে গেলাম। এর খেসারতই দল দিয়েছে”৷