২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির ভাবখানা এমন ছিল যেন বাংলা তারা প্রায় দখল করে ফেলেছে। জয়ের ঘোষণা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। দিল্লির নেতারা ডেইলি প্যাসেঞ্জারি শুরু করেছিলেন বঙ্গে। তবে, স্পষ্টভাবে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে সামনে রেখে এগোয়নি গেরুয়া শিবির। কিন্তু তা সত্বেও জল্পনা ছিল স্বপন দাশগুপ্তকে (Swapan Dasgupta) ঘিরে। স্বপন দাশগুপ্তের নাম বঙ্গ বিজেপি (Bjp) ততটা পরিচিত না হলেও, দিল্লির পদ্ম শিবিরে তাঁর প্রভাব যথেষ্ট। রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। এবার তাঁকে তারকেশ্বর থেকে প্রার্থী করে বিজেপি। তখনও তিনি রাজ্যসভার সাংসদ পদে ইস্তফা দেননি। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay) নন্দীগ্রামের মনোনয়ন ঘিরে জলঘোলা করা শুরু করে বিজেপি। তাঁর মনোনয়ন বাতিল করার দাবিতে সরব হন নন্দীগ্রামের বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী (Shubhendu Adhikari)। এরপরেই তৃণমূল শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়, কীভাবে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে স্বপন দাশগুপ্ত ভোটে দাঁড়িয়েছেন? কারণ একজন মনোনীত রাজ্যসভার সাংসদ যদি কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেন তাহলে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়। স্বপন মনোনীত সাংসদ। তাই তাঁকে বিজেপি প্রার্থী করায় আপত্তি তোলে তৃণমূল (Tmc)। শাসকদলের তরফে জানানো হয়, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে চিঠি লিখে স্বপন দাশগুপ্তকে বরখাস্ত করার আবেদন জানানো হবে। এই প্রেক্ষিতে সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়েই ভোটে লড়েন তিনি।
কিন্তু বিজেপি বাংলা দখল করা তো দূরস্ত, তারকেশ্বর থেকে বিধায়ক হিসেবে জিততে পারেননি স্বপন দাশগুপ্ত। এখন কী হবে তাঁর? বাংলায় একটা কথা আছে “আমও গেল ছালাও গেল”। অর্থাৎ হাতে রইল পেন্সিল। কারণ রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছেড়েছেন তিনি। বিজেপি ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী না হলেও, উচ্চশিক্ষিত এই রাজনীতিবিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী হতেন এমনকী উপ মুখ্যমন্ত্রীও হতে পারতেন স্বপন দাশগুপ্ত। আর ভোটে যদি নাও দাঁড়াতেন, তাহলেও তিনি রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে দিব্যি থাকতে পারতেন। পাঁচ বছর পূর্ণ করলে মিলত পেনশন-সহ অন্যান্য সুবিধা। কিন্তু এখন আর কোনও দিকেই তিনি নেই। বেশির ভাগেরই মতে, যেভাবে তিনি দিল্লিতে রাজনীতি করতেন তারকেশ্বরের রাজনীতি তা নয় সেটা বুঝতে ভুল করেই এই দশা হল স্বপন দাশগুপ্তের। তাঁর একুল-ওকুল দুকুল গেল।
কারণ, তাঁর জায়গায় ইতিমধ্যেই বর্ষীয়ান আইনজীবী রাম জেঠমালানি ছেলেকে রাজ্যসভার সাংসদ করেছে বিজেপি। সুতরাং, পুরনো পদ এই মুহূর্তে ফিরে পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা স্বপন দাশগুপ্তের নেই। এখন যদি অন্য কোনও রাজ্য থেকে বিজেপি তাঁকে রাজ্যসভায় মনোনীত সাংসদ করে আনতে পারে, সেটা সম্ভব। কিন্তু এক্ষুনি সেটা হচ্ছে না।
এবার কী করবেন স্বপন দাসগুপ্ত? কারো কারো মতে, বিজেপি হয়তো তাঁর মতো শিক্ষিত মানুষকে সাংগঠনিক কোন পথ দিয়ে রাখবেন। তবে তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নটা দিবাস্বপ্নই রয়ে গেল বলে মত রাজনৈতিক মহলের।