হাইকোর্টের বিচারপতিরা হাসির খোরাক হচ্ছেন’, বিস্ফোরক চিঠি বিচারপতির

0
1

নারদ-মামলাকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে গেলো কলকাতা হাইকোর্টে৷ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ বিচারপতির এক বৃহত্তর বেঞ্চের কাজের ধরণ এবং এক্তিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুললেন হাইকোর্টেরই এক বিচারপতি৷ আর প্রশ্ন তুলেছেন সরাসরি ওই পাঁচ বিচারপতিকেই চিঠি লিখে৷ এমন কাণ্ড হাইকোর্টে অতীতে কবে ঘটেছে, কোনও প্রবীণ আইনজীবীও তা মনে করতে পারছেন না৷

নারদ-কাণ্ডে CBI-এর মামলা স্থানান্তরের আবেদন এবং চার নেতা-মন্ত্রীর জামিনের আর্জির নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পাঁচ বিচারপতি এক বিশেষ বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়৷ ভারপ্রাপ্ত প্ৰধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল-এর নেতৃত্বাধীন এই বৃহত্তর বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ ট্যাণ্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ৷

এই বৃহত্তর বেঞ্চই CBI-এর দাখিল করা নারদ-মামলা স্থানান্তরের আবেদন গ্রহণ করে বিচারের জন্য৷ আর পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের এই সিদ্ধান্তই কার্যত চ্যালেঞ্জ করছেন বিচারপতি অরিন্দম সিনহা৷ পাঁচ বিচারপতিকেই চিঠি লিখে বিচারপতি সিনহা বলেছেন, CBI-এর ওই মামলা স্থানান্তরের আবেদন সিঙ্গল বেঞ্চের বিচার্য বিষয়৷ সিঙ্গল বেঞ্চের এক্তিয়ার যে আবেদনটি, সেই আবেদন কোন আইনে ডিভিশন বেঞ্চে তোলা হলো? এই কাজে গোটা দেশের কাছে কলকাতা হাইকোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতিরা হাসির খোরাক হয়েছেন, বিদ্রূপের পাত্র হয়ে উঠেছেন৷ যে মামলা সিঙ্গল বেঞ্চের এক্তিয়ারে, সেই মামলা ডিভিশন বেঞ্চে পাঠানোর কোনও আইন নেই৷ কেন আইনে এই কাজ হয়েছে, তাও জানতে চেয়েছেন বিচারপতি অরিন্দম সিনহা৷

Pp

গত ১৭ মে CBI নারদ-কাণ্ডে চার হেভিওয়েট মন্ত্রী ও নেতা, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে৷ সেইদিনই CBI-এর বিশেষ আদালত ওই চারজনকেই অন্তবর্তী জামিন দেয়। জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর ১৭ তারিখ রাতেই CBI অনলাইনে স্থানান্তর করার আবেদন জানানোর পাশাপাশি, জামিনে স্থগিতাদেশের আবেদন জানায়৷ ওই রাতেই CBI-এর এই আর্জির শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে।

আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি অরিন্দম সিনহা৷ চিঠিতে তিনি লিখেছেন, সিঙ্গল বেঞ্চের বিচার্য বিষয়টি শুনানি কোন আইনে সেদিন ডিভিশন বেঞ্চে করা হলো ? এই কাজ হাইকোর্টের নিয়মের বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি অরিন্দম সিনহা৷ এখানেই শেষ নয়, গত ১৭ মে কেন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিম্ন আদালতের জামিনের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হল,তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি সিনহা৷

বিচারপতি তাঁর বিস্ফোরক চিঠিতে বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতিদের মধ্যে মতানৈক্য থাকলে তৃতীয় কোনও বিচারপতির মতামত নেওয়া হয়, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। সরাসরি পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নারদ মামলা। এমন কাজও হাইকোর্টের নিয়মের বিরোধী বলে দাবি করেছেন বিচারপতি অরিন্দম সিনহা৷ বিচারপতি সিংহের দাবি, শুধুমাত্র সিঙ্গল বেঞ্চেই কোনও মামলা স্থানান্তরের দাবি জানানো যায়। তা জানা সত্ত্বেও ডিভিশন বেঞ্চ CBI-এর আবেদন গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে তিনি চিঠিতে লিখেছেন, CBI-এর ওই আবেদন ‘রিট পিটিশন’ হিসেবে কেন গ্রহণ করা হল, তাও রহস্য৷ বিচারপতি সিনহার প্রশ্ন, কোনও ডিভিশন বেঞ্চ কি রিট পিটিশনের ভিত্তিতে মামলা গ্রহণ করতে পারে? তার শুনানি করতে পারে?

বিচারপতি সিনহার তোলা এই সব প্রশ্ন ঘিরে শোরগোল উঠেছে আইনি মহলে৷ বেনজির এই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের মাথা হেঁট হয়েছে বলেও আইনি মহল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে৷ বিশিষ্ট আইনজীবীদের প্রায় সবাই সহমত প্রকাশ করেছেন বিচারপতি অরিন্দম সিনহার চিঠির বিষয়বস্তুর সঙ্গে৷ আইনজীবীদের বক্তব্য, “হাইকোর্টে এমন কোনও নিয়মই নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বিন্দল যা করেছেন তা বেনজির। CBI আবেদন করেছে, রাজ্যের মধ্যে মামলা স্থানান্তর করতে চেয়ে৷ সেই আবেদন শোনার এক্তিয়ার সিঙ্গল বেঞ্চের৷ প্রধান বিচারপতি নিজের পদাধিকার বলে এই কাজ করেছেন, আইনে এমন অনুমোদন নেই৷” পাশাপাশি আইনিমহল বিস্ময়প্রকাশ করে বলেছেন, “চার অভিযুক্তের তরফে তো বড় বড় সব আইনজ্ঞরা সওয়াল করলেন, তাঁরা কেউ আদালতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বিন্দলকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারলেন না যে, “তোমার এই মামলা শোনার অধিকারই নেই? তাহলে তো চার নেতা-মন্ত্রীকে এতদিন হেফাজতে থাকতেই হতো না ৷”এটাও আর এক বিস্ময় !