শাহ ঘনিষ্ঠ প্রশাসকের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ক্ষোভ বাড়ছে লাক্ষাদ্বীপে

0
2

একটা সময় অবধি লাক্ষাদ্বীপের(Lakshadweep) মত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে নিয়োগ করা হত উচ্চপদস্থ আমলাকে। সেই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে গতবছর এই অঞ্চলের প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় গুজরাটের(Gujarat) বিতর্কিত রাজনীতিবিদ প্রফুল প্যাটেলকে(Praful Patel)। এরপরই ক্ষমতার অলিন্দে বসেই প্রশাসকের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে রীতিমতো ক্ষুব্ধ সেখানকার স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি গোটা দেশের রাজনৈতিক মহল। যার জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ট্রেন্ড হতে শুরু করেছে ‘সেভ লাক্ষাদ্বীপ’।

গত বছর ৫ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অনুমোদনে লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় প্রফুল প্যাটেলকে। ক্ষমতায় বসার মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই একের পর এক বিতর্কিত আইন চালু করেন এই প্রশাসক। যা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। শুরুতেই আইন করে সেখানকার পঞ্চায়েতের হাতে থাকা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আরো একাধিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়। আইন করা হয় দুইয়ের অধিক সন্তান থাকলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানে অংশ নেওয়া যাবে না। লাক্ষাদ্বীপের অপরাধের হার একেবারে তলানিতে অথচ এখানে লাগু করা হয় বিতর্কিত গুন্ডা দমন আইন। যার ফলে কোনওরকম বিচার প্রক্রিয়া ছাড়াই এক বছর যে কাউকে আটকে রাখা হতে পারে জেলে। শুধু তাই নয় গেরুয়া রাজ্যের নীতি মেনে এখানেও করা হয়েছে গোমাংস নিষেধাজ্ঞা। পাশাপাশি মদ বিক্রিতে বরাবরের নিষেধাজ্ঞা থাকা লাক্ষাদ্বীপে ঢালাও মদের দোকান খোলার লাইসেন্সও দিয়ে দিয়েছেন এই প্রশাসক। এমনই একের পর এক বিতর্কিত পদক্ষেপের জেরে লাক্ষা দ্বীপের স্থানীয় মানুষের অভিযোগ তাদের চিরাচরিত সংস্কৃতি ও সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকাকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছেন প্রফুল। স্মার্ট সিটির নাম করে ইচ্ছে মত সাধারন মানুষের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি গোটা ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন লাক্ষাদ্বীপের একমাত্র সাংসদ মহম্মদ ফয়জল পিপি। প্রতিবাদ জানিয়েছে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সহ দেশের একাধিক বিরোধী নেতৃত্ব।

আরও পড়ুন-ভারতে এই প্রথম, অ্যান্টিবডি ককটেল প্রয়োগে সুস্থ ৮৪ বছর বয়সী করোনা আক্রান্ত

ইতিমধ্যেই কেরলের বাম ও কংগ্রেস সাংসদদের পাশাপাশি লাক্ষাদ্বীপের সাংসদ মহম্মদ ফয়জল গোটা ঘটনার কথা লিখে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠিয়েছেন। আবেদন জানিয়েছেন, অবিলম্বে এই প্রশাসককে সরিয়ে নেওয়া হোক এবং যে সকল আইন লাগু করা হয়েছে তা তুলে নেওয়া হোক। একইসঙ্গে স্থানীয় মানুষ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করে নিজের ইচ্ছে মতো একের পর এক সিদ্ধান্ত প্রশাসক নিয়ে চলেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। পাশাপাশি ওই সাংসদ আরও অভিযোগ তুলেছেন ‘এখানে মানুষের জমি কেড়ে নেওয়ার একটা চক্রান্ত চলছে। জাতীয় সড়কের ন্যায় বড় সড়ক নির্মাণের জন্য জমি কেড়ে নিতে চাইছে কেন্দ্র। কিন্তু লাক্ষাদ্বীপের মানুষের বিশাল সড়ক কেন প্রয়োজন? ব্যবসায়িক স্বার্থে কেন্দ্রকে খুশি করতে এইসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন প্রশাসক।’

তবে ‘লাক্ষাদ্বীপের উন্নয়ন চলছে’, এমনটা দাবি করে পাল্টা প্রফুল প্যাটেলের দাবি, ‘গত ৭০ বছরে লাক্ষাদ্বীপে কোনও উন্নয়নই হয়নি। প্রশাসন সেই কাজটাই করতে চাইছে। দ্বীপের মানুষ নয়, কিছু ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করা মানুষ এই নীতিগুলির বিরোধিতা করছে। এটাতে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখছি না আমি। মালদ্বীপ থেকে খুব একটা দূরে নয় লাক্ষাদ্বীপ। কিন্তু মালদ্বীপ এখন বিশ্ব পর্যটনের কেন্দ্র। আর লাক্ষাদ্বীপে কোনও উন্নয়নই হয়নি। আমরা একে বিশ্ব পর্যটনের কেন্দ্র করতে চাইছি।’ তবে মানুষের জমি কেড়ে নিয়ে, কার্যত অপরাধমুক্ত লাক্ষাদ্বীপে বিতর্কিত আইন লাগু করে এটা কী ধরনের উন্নয়ন চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে গোটা দেশে।

Advt