নারদে চার অভিযুক্তের জামিনের আবেদনের শুনানি শুক্রবার, আপাতত গৃহবন্দিই

0
1

কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চেও বৃহস্পতিবার জামিন হলো না নারদ-মামলায় গৃহবন্দি থাকা ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের৷ এদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, জামিনের আবেদনের শুনানি হবে আগামীকাল, শুক্রবার৷ ফলে চার অভিযুক্তের গৃহবন্দি থাকার মেয়াদ আপাতত একদিন বৃদ্ধি পেলো৷ বাকিটা স্পষ্ট হবে শুক্রবার হাইকোর্ট কী নির্দেশ জারি করে, তার উপর৷ বৃহত্তর বেঞ্চে এদিনও যথারীতি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্ৰধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ ট্যাণ্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ৷

বৃহত্তর বেঞ্চ এর ৫ বিচারপতি

 

সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে ফের হাইকোর্টের ৫ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে নারদ মামলার শুনানি হয়েছে বৃহস্পতিবার৷ এদিন CBI-এর দাখিল করা ‘মামলা স্থানান্তর’-এর আবেদনের শুনানি হয়েছে৷ শুক্রবার চার অভিযুক্তের জামিনের আবেদনের শুনানি হবে বলে আদালত জানিয়েছে৷ এদিনের শুনানির শুরু থেকেই সওয়াল-পাল্টা সওয়ালে সরগরম ছিলো আদালত৷ সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহেতা আর্জি রেখেছিলেন এই মামলা অন্যত্র সরানো হোক। এই ইস্যুতে দু’তরফের তরজায় শুনানি শুরু থেকেই জমজমাট ছিলো৷ তুষার মেহেতা বলেন, তিনি জামিন বা মামলা স্থানান্তর নিয়ে কথা বলছেন না, তাঁর সওয়ালের প্রেক্ষিত বৃহত্তর৷ তিনি এই রাজ্যে আইনের শাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন৷ তিনি বলেন, “ধরে নিচ্ছি চারজনের অ্যারেস্ট অনৈতিক ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হল, গত ১৭ মে যেভাবে বিচার ব্যবস্থায় নাক গলানো হলো, তা কি বিচার ব্যবস্থ্যা সম্পর্কে জনতার বিশ্বাসের উপর আঘাত হানবে না? যে পাঁচ বিচারপতি এখানে রয়েছেন, তারা শুধু জামিন হবে, কি হবে না, তা স্থির করতেই বসেননি। আলোচনা হোক আরও বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে এনে। আমার মতকে রাজনৈতিক ভাববেন না। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এখানেই আটকাতে না পারলে বহু রাজ্যেই পর পর ঘটবে।”

এরপরেই একের পর এক বিচারপতি প্রশ্ন করে মেহেতাকে৷ বিচারপতি আইপি মুখোপাধ্যায় বলেন, দেশে এর আগেও কোনও গ্রেফতারি নিয়ে জনবিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আপনি যদি দেখাতে না পারেন যে সংশ্লিষ্ট বিচারক ওই বিক্ষোভে প্রভাবিত হয়েছে, ততক্ষণ এই নিয়ে কথা বলা গঠনমূলক কাজ নয়।

বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন বলেন, সাধারণ মানুষ আবেগের বশবর্তী হয়ে এ ধরনের কাজে করে। তবে আবেগ যেমনই হোক, আইন তা কখনই অনুমোদন করে না। আবার এটাও মনে রাখতে হবে, সাধারণ মানুষের ক্ষোভ- বিক্ষোভ বিচারব্যবস্থাকে কখনই প্রভাবিত করতে পারে না৷”

এইসময়ই অভিযুক্তদের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দেশের সলিসিটার জেনারেল ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা চালিয়ে যাবেন, আর আমাদের কথা শোনা হবে না, এমন হতে পারে না।‌ পাঁচদিন ধরে কথাবার্তা চলবে আর অভিযুক্তরা হেফাজতে থাকবেন, এটা তো চলতে পারে না। এটা স্বাধীনতার প্রশ্ন। আমাদের আবেদন টেবিলের এক কোণায় পড়ে থাকতে পারে না। আগে জামিনের আবেদনের শুনানি করতে হবে৷”

এর পরেই কল্যাণ কার্যত বিস্ফোরক সওয়াল করে বলেন, ” মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীকে এই মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন, ডাকা’ই বা হচ্ছে না কেন ? ওরা তৃণমূল কংগ্রেস করে না বলে ?” CBI কৌঁসুলি তথা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতাকে লক্ষ্য করেই শুধু নয়, কল্যাণ একইসঙ্গে পাঁচ বিচারপতির উদ্দেশ্যেও প্রশ্ন করেন ‘‘শুভেন্দু আর মুকুলকে ডাকা হচ্ছে না কেন? ওঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে?’’ জবাবে মেহতা বললেন, ‘‘আমি শুধুমাত্র আইনি প্রশ্নের জবাব দেব।’’ কল্যাণ বলেন, ” এ কেমন কথা, শুনানি দিনের পর দিন ধরে চলবে। আর আমার মক্কেলরা হেফাজতে থাকবেন?” কল্যান বলেন, সাইক্লোন হয়ে গেল, কাজ করতে পারলেন না ফিরহাদ হাকিম, আর ভুগছে সাধারণ মানুষ৷ অভিযুক্তদের তরফে এদিন কল্যাণ ছাড়াও সওয়াল করেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি, সিদ্ধার্থ লুথরা৷ রাজ্য সরকারের তরফে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল৷ এদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জানান, এই মামলায় মুখ্যমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকে যুক্ত করা হয়েছে৷ অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, তিনিই মুখ্যমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করবেন৷

শুনানির শেষ পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জানান, বৃহস্পতিবার CBI-এর পেশ করা মামলা স্থান্তরের শুনানি হয়েছে শুক্রবার গৃহবন্দি চার অভিযুক্তের জামিনের আবেদনের শুনানি হবে শুক্রবার বেলা ১২টায় নারদ মামলার ফের শুনানি হবে পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর এজলাসে৷