বৈশাখীর ‘নাটক’ আর শোভনের পদক্ষেপে সর্বনাশ হচ্ছে তিনজনের

0
1

বেনজির ভাবে সকালবেলায় রাজ্যের দুই মন্ত্রী, এক বিধায়ক এবং এক প্রাক্তন বিধায়ককে গ্রেফতার, দিনভর টানাপোড়েন, সন্ধেয় অন্তর্বর্তীকালীন জামিন এবং ফের রাতে জামিনের স্থগিতাদেশ, জেল হেফাজত। চূড়ান্ত নাটকীয়তা কেটেছে সোমবার দিন। কিন্তু তার থেকেও বড় নাটক দেখা গেল সোমবার মাঝরাতে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের সামনে। তখন চার হেভিওয়েট নেতা- সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukharjee), ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim), মদন মিত্র (Madan Mitra) ও শোভন চট্টোপাধ্যায়(Shobhan Chattopadhyay) কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সংশোধনাগারের ভিতরে। আর বাইরে রাত ১টা ১৫মিনিট নাগাদ জেলের লোহার দরজা ধাক্কাচ্ছেন শোভন-বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় (Boishskhi Benarjee)। কী দাবি তার? জেলের মধ্যে ঢুকে তাকে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে। অজুহাত শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সব ওষুধ রয়েছে তার কাছে। কিন্তু যে বৈশাখী দাবি করেছেন, সারাদিন তিনি নিজাম পালেস ছিলেন, তিনি সেই সময়ের মধ্যে কেন ওষুধ শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে দেননি?

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাকি যে ৩ নেতার জেল হেফাজত হয়েছে, তাদের মধ্যে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায় স্ত্রী ছন্দা মুখোপাধ্যায় নিয়ম মাফিক নিজাম প্যালেস এগিয়ে তার প্রয়োজনীয় জিনিস, ওষুধ, খাবার দিয়ে চলে আসেন। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হননি তিনি।

অপর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিম যান নিজাম পালেসে। তিনি সেখানে অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। উপস্থিত তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের শান্ত থাকার আবেদন জানান। এবং বলেন তারা যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন, তাহলে আইনি লড়াই আরো জটিল হতে পারে। একথা প্রিয়দর্শিনী বুঝতে পারছেন, অথচ বৈশাখী বুঝতে পারছেন না কেন? এদের ৩ জনের মধ্যে কারোর পরিবার আইন ভেঙে কোনো কিছু করার চেষ্টা করেনি। অথচ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় মাঝরাতে জেলের দরজা ধাক্কাচ্ছেন। চিৎকার করছেন। রীতিমতো হুমকি দিচ্ছেন তাকে ঢুকতে না দিলে তিনি এখানেই বসে থাকবেন। তার লাশ সেখান থেকে বেরোবে। এই চাপ সৃষ্টি করে তিনি শুধু শোভন চট্টোপাধ্যায় নন, তার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া বাকি আরো তিন জনকেই সমস্যায় ফেলছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের।

কারণ এর আগেও এই উদাহরণ দেখা গিয়েছে প্রভাবশালীর তকমা দিয়ে এই রাজ্য থেকে ভিন রাজ্যে অভিযুক্তদের নিয়ে গিয়েছে সিবিআই। এক্ষেত্রে যদি এইভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয় তাহলে সেই আশঙ্কা দেখা দেবে। তাতে একা শোভন নন, সমস্যায় পড়বেন তার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া বাকি তিনজনও। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্চশিক্ষিত। তিনি একটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন। এই সহজ কথাটা তার বুঝতে এত সময় লাগছে কেন?

প্রভাবশালী বা ভিআইপি পরিষেবা পাওয়ার আরো চেষ্টা করছেন স্বয়ং শোভন চট্টোপাধ্যায়। এসএসকেএম-এ ভর্তি করা হয়েছে তাকে ও মদন মিত্রকে। কয়েকদিন আগেই কামারহাটির বিধায়ক করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন। তার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে। সোমবার দিনভর টানাপোড়েনের পর রাতে জেলে থেকে তার অসুস্থ হয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। শোভন চট্টোপাধ্যায় কী কারণে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার কারণ হাইপ্রেসার এবং সুগার; অন্তত সূত্রের খবর তাই। এখানেও প্রশ্ন যখন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় মাঝ রাতে গিয়ে তার সব ওষুধ জেলে পৌঁছে দিয়ে এলেন, তখন ভোরবেলায় তিনি আবার কীভাবে অসুস্থ হলেন? আর যদি অসুস্থ হন তা কতটা মারাত্মক যে জেল হাসপাতালে রেখে তার চিকিৎসা করা গেল না, তাকে নিয়ে যাওয়া হল এসএসকেএম-এ! অর্থাৎ এখানেও ভিআইপি ট্রিটমেন্টের পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন শোভন। তার এবং তার বান্ধবীর এহেন আচরণ বুমেরাং হয়ে যাবে না তো? বুধবারের শুনানিতে যদি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এইসব উদাহরণ তুলে বলে, যে এরা মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। সুতরাং রাজ্য থেকে মামলা সরাতে হবে। তাহলে শোভন-বৈশাখী কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে সুব্রত, ফিরহাদ, মদনদের। তার দায়কে নেবে? প্রশ্ন এখন সেটাই।

Advt