কিশোর সাহা:দার্জিলিংয়ের পার্বত্য এলাকার স্বশাসনের ভার বিমল গুরুং কিংবা বিনয় তামাংদের কারও হাতেই দিলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জায়গায় রাজ্য সরকার মনোনীত করল একজন আইএএস অফিসারকে। সোমবার সরকারি নির্দেশনামায় গোর্খাল্যান্ড টেরিটেরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেসনের (জিটিএ) প্রশাসক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে আইএএস সুরেন্দ্র গুপ্তাকে। যিনি ২০১৯ সালের জুন মাস থেকে জিটিএ-এর প্রধান সচিব হিসেবের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
এই ঘটনাকে নজিরবিহীন ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পাহাড়ের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই। বেনজির বলা হচ্ছে কারণ, অতীতে প্রশাসক বোর্ডের ভার কোনও না কোনও রাজনৈতিক নেতার হাতেই দেওয়া হয়েছে। বাম আমলে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের মেয়াদ ফুরানোর পরে দীর্ঘদিন সুবাস ঘিসিংকে প্রশাসক পদে মনোনীত করে রাখা হয়েছিল।
জিটিএ গঠনের পরে বিমল গুরুং তা ছেড়ে আত্মগোপনের পরে ২০১৭ সালে বিনয় তামাংকে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোনীত করে নবান্ন। পরে বিনয় ভোটে দাঁড়াতে অনীত থাপাকে মনোনীত করা হয়। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটের আগে অনীতকে সরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে বিনয় বা অনীত কিংবা মাস চারেক আগে তৃণমূলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা বিমল গুরুং কিংবা তাঁর অনুগামী কাউকেই মনোনীত বোর্ডে রাখেননি। সেজন্যই একে বেনজির হিসেবে দেখছেন রাজনীতিবিদরা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, বিমল-বিনয়দের কাউকে মনোনীত না করার তাৎপর্য হল উভয়কেই সমমর্যাদা সম্পন্ন মনে করছে তৃণমূল। কারণ, সদ্য সমাপ্ত ভোটে পাহাড়ের তিনটি আসনের দুটি বিজেপি ও একটি বিনয়পন্থীরা পেয়েছেন। কিন্তু, বিমল গুরুংরাও বিনয় তামাংদের গায়ে গাঁ ঘেষে রয়েছেন। বিমল-বিনয়দের ভোট একজোট হলে পাহাড়ে বিজেপি একটি আসনও পেত না। উপরন্তু, বিমল গুরুং, তরাই ও ডুয়ার্সের অনেক আসনে লাগাতার প্রচার চালানোর সুফল কিছুটা হলেও পেয়েছে তৃণমূল।
তাই বিনয় তামাংয়ের কাউকে মনোনীত করে জিটিএ-তে বসালে বিমল গুরুংয়ের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধার আশঙ্কা ছিল। উল্টোদিকে, বিমল গুরুংদের কাউকে মনোনীত করে প্রশাসক বোর্ডে রাখলে বিনয়পন্থীরা ক্ষুব্ধ হতে পারত। সে কারণেই আগামী দিনে জিটিএ ভোটে লড়াই করে বিমল এবং বিনয়পন্থীদের ক্ষমতা দখলের বার্তা দিতেই প্রশাসক বোর্ডে একজন আইএএস অফিসারকে রাখা হয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের অনেকেই।
জিটিএ-এর নির্বাচন তিন বছর আগেই হওয়ার কথা ছিল। নানা কারণে তা হয়নি। এবার কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই যে পাহাড়ে জিটিএ-এর ভোট হবে তা নিয়ে কারও সংশয় নেই। সে জন্যই জনতার মন জয় করতে আসরে নেমে পড়েছেন বিমল ও বিনয় উভয় শিবিরের লোকজনই। খোদ বিমল গুরুং স্যানিটাইজার স্প্রে গান নিয়ে সকাল থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিনয়-অনীতরাও মাস্ক বিলি করছেন, গ্রামে-শহরে ঘুরছেন।
Sign in
Welcome! Log into your account
Forgot your password? Get help
Password recovery
Recover your password
A password will be e-mailed to you.