দেশের বর্তমান করোনা (corona) পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ আখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অক্সিজেন, ওষুধ, ভ্যাকসিনের সংকটে মানুষের সীমাহীন দুর্দশা আর ভোগান্তি। সংক্রমণ ঠেকাতে একাধিক রাজ্যে লকডাউনের জেরে অনিশ্চয়তার মুখে জীবন-জীবিকা। দিল্লি হাইকোর্টের মন্তব্য, দেখে মনে হচ্ছে করোনায় মানুষ মরুক, তাই যেন চাইছে সরকার। আদালতের উপর্যুপরি তিরস্কার আর কোভিড অতিমারির (covid pandemic) সুনামির মুখে দেশ বিপন্ন হলেও আত্মপ্রচারের বিজ্ঞাপন ছাড়তে নারাজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (narendra modi)। করোনা পরিস্থিতির যুক্তি দিয়ে সংসদ সদস্যদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলে কাটছাঁট করেছে কেন্দ্র, অথচ মোদির সাধের সেন্ট্রাল ভিস্তা (central vista) প্রকল্পে কোনও নড়চড় নেই। টাকার অপ্রতুলতার যুক্তিতে দেশের সব মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না বলে বলছে সরকার, অথচ ২০ হাজার কোটি টাকার সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পে কোনও কাটছাঁট নেই। রাজধানী দিল্লিতে যখন করোনায় মৃতদের প্লাস্টিকবন্দি দেহের সারি, গণচিতা প্রজ্জ্বলনের মর্মন্তুদ দৃশ্য, তখনও দেশের নতুন সংসদ ভবন, সরকারি অনান্য ভবন, প্রধানমন্ত্রীর নয়া বাসভবন, দিল্লির সৌন্দর্যায়নের জন্য সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প কাজ বন্ধ হয়নি। উল্টে লকডাউনের মধ্যেও মোদির স্বপ্নের বিলাসবহুল প্রকল্প যাতে থমকে না যায় সেজন্য প্রকল্পের গায়ে অত্যাবশ্যক তকমা লাগানো হয়েছে। দেখেশুনে অনেকের মনে পড়ছে প্রজ্জ্বলিত রোম নগরীতে সম্রাট নিরোর বেহালা বাদনের উপমা।
আগামী লোকসভা ভোটের আগে নিজের সাফল্যের বিজ্ঞাপন তুলে ধরতে দিল্লিকে নতুন করে সাজাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার জন্য আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। আর করোনা অতিমারিতেও সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনও খামতি নেই বলে অভিযোগ। যা নিয়ে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক মহল, নাগরিক সমাজ ও সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কেন্দ্রীয় সরকার পরিকল্পনা করেছে, পুরনো সংসদ ভবনের সামনে একটি নতুন সংসদ ভবন তৈরি হবে। আর ব্রিটিশ আমলে তৈরি ৯৪ বছরের পুরনো সংসদ ভবনটি মিউজিয়াম বানিয়ে সাজানো হবে। সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি নতুন বাসভবন ও একাধিক সরকারি ভবন তৈরি হবে। সেন্ট্রাল দিল্লিতে প্রায় ৫০ টি ফুটবল মাঠের সমান জায়গায় বহু বৃক্ষ ছেদন করে চলছে এই কর্মকাণ্ড। আর ভারতে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে, ২০২২ সালে এই ভবন উদ্বোধনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। সেজন্য অতিমারিতে রোজ হাজার হাজার মানুষ মরুক বা সারি সারি গণচিতা জ্বলুক, কেন্দ্রীয় সরকার সেন্ট্রাল ভিস্তার কাজ যথাসময়ে শেষ করতে বদ্ধপরিকর। অথচ দেশের রাজধানীতে যেরকম বিদ্যুতগতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তার পরেও কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া সংসদ ভবন নির্মাণ এবং সংসদ ভবন চত্বরের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া নিয়ে তোপ দেগেছেন বিরোধীরা। এমনকি, রাজধানীতে দৈনিক সংক্রমণ যেদিন ৩০ হাজার ছুঁইছুঁই, সেই দিনই তিনটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। করোনার সময় যেখানে চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন, সেখানে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এমন পরিকল্পনার কী দরকার ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন সর্বস্তরে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে দিল্লি। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আগামী ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার। জরুরি পরিষেবার বাইরে সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ইন্ডিয়া গেট সংলগ্ন যে এলাকা দিল্লির প্রাণকেন্দ্র, সেই এলাকা গমগম করছে রাজমিস্ত্রি, খননকর্মী এবং ট্রাক–লরির আনাগোনায়। কারণ সব বন্ধ থাকলেও মোদির সাধের সেন্ট্রাল ভিস্তা অ্যাভিনিউ নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকতে পারে না যে! বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, মোদি সরকার এতটাই অসংবেদনশীল যে তাদের কাছে মানুষের জীবনের মূল্যের চেয়ে বিলাসিতার মূল্য অনেক বেশি। তাই দেশবাসীর জীবন বাঁচাতে টাকার অভাবের কথা বলা হলেও সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পে ২০ হাজার কোটি খরচ করতে সরকারের লজ্জা হয়