অক্সিজেন (oxygen) থেকে ওষুধ। করোনা (covid) মোকাবিলায় নির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়ে কেন্দ্রকে (central govt) পাঁচ মাস আগেই সতর্ক করেছিল সংসদীয় কমিটি (parliamentary committee)। অথচ আজ যখন করোনা সুনামির ধাক্কায় সময়মত অক্সিজেন না পেয়ে বেঘোরে প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের, রাজ্যে রাজ্যে ওষুধ, ভ্যাকসিনের হাহাকার; তখন চাঞ্চল্যকরভাবে সামনে আসছে সংসদীয় কমিটির পেশ করা নভেম্বর মাসের সেই রিপোর্ট, যা বাস্তবায়িত হলে এখনকার লড়াই অনেক সহজ হত, এভাবে মরতে হত না মানুষকে। অথচ তখন বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসে আমল না দিয়ে দেশ থেকে করোনা বিদায় নিয়েছে বলে প্রচার করছিল মোদি সরকার। সেই আত্মসন্তুষ্টি থেকে সংসদীয় কমিটির প্রস্তাব ও সতর্কবার্তায় পাত্তাই দেয়নি কেন্দ্র। সরকারের এই উদাসীনতার খেসারত আজ দিতে হচ্ছে দেশবাসীকে।
পাঁচমাস আগে ভারতে করোনা পরিস্থিতি যখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে তখনও বিশেষজ্ঞরা ব্রিটেন সহ কয়েকটি দেশের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলছিলেন, এদেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসা সময়ের অপেক্ষা। তাই সময় থাকতে দ্রুত ভ্যাকসিন দেওয়ার পাশাপাশি অক্সিজেন ও ওষুধের সরবরাহ মসৃণ রাখতে পর্যাপ্ত বন্দোবস্ত রাখুক সরকার। বিশেষজ্ঞদের সতর্কতার পূর্বাভাস উল্লেখ করেই সময়মত পরিকাঠামো উন্নয়নের গুচ্ছ সুপারিশ করে সংসদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কমিটি, যার নেতৃত্বে ছিলেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রামগোপাল যাদব। এখন দেখা যাচ্ছে, প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পেয়েও সংসদীয় কমিটির সুপারিশ মেনে কোনও প্রস্তাব বাস্তবায়নের চেষ্টা করেনি সরকার। সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট পড়েছিল ঠাণ্ডাঘরেই। আর এই খবর সামনে আসতেই এখন নতুন বিড়ম্বনায় পড়েছে কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বরে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। তাতে নেতৃত্ব দেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রামগোপাল যাদব। বৈঠকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্য হ্রাসের পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। তাঁর যুক্তি ছিল, দাম কমানো হলে একদিকে অক্সিজেনের জোগান যেমন বাড়বে, তেমনই কোভিডের চিকিৎসা বাবদ খরচও সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে চলে আসবে। একইসঙ্গে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধপত্রের দাম বেঁধে দেওয়ার জন্য নিযুক্ত জাতীয় কমিটিকে (এনপিপিএ) প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে কেন্দ্রকে আর্জিও জানান তিনি। শুধু তাই নয়, রামগোপালের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, হাসপাতালগুলির চাহিদা অনুসারে যাতে অক্সিজেন পর্যাপ্ত জোগান দেওয়া যায়, তার জন্য অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়াতে হবে। যেভাবে সংক্রমণের উর্ধগতির আগাম আশঙ্কা করে বলা হয়, সরকারি হাসপাতালগুলির শয্যাসংখ্যা, ভেন্টিলেটরের সংখ্যা এবং পরিষেবা যথেষ্ট নয়। এতে আগামী দিনে অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারকে বেগ পেতে হতে পারে। সেজন্য সময় থাকতেই আগেভাগে সতর্ক হওয়া উচিত। পরিস্থিতি উল্লেখ করে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্যও সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য পরিষেবার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে বলে জানায় কমিটি।
কিন্তু কমিটির রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেও এব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও উচ্চবাচ্য করেনি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। বিরোধীরা বলছেন, সংসদের কমিটির রিপোর্টকে যথাযথ গুরুত্বই দেয়নি মোদি সরকার। যদিও তার একমাস আগে ১৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের সচিব নিজেই জানিয়েছিলেন যে, কেন্দ্রের তরফে অক্সিজেনের দাম নির্ধারণের আনুরোধ জানানো হয়েছে এনপিপিএ-কে। কিন্তু সেই অনুরোধ শেষপর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। আর তার জেরে এখন সারা দেশে অক্সিজেনের ঘাটতি শুরু হয়েছে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীরাও অসহায়ভাবে অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন।



































































































































