
এআবার কী ?
গোটা দেশের সর্বাধিনায়ক হিসাবে যার নাম প্রচার করা হয়, যার কথায় গোটা দেশ থালা বাজায়, প্রদীপ জ্বালায়, সেই নরেন্দ্র মোদিকে কেন সরাসরি ‘রিজেক্ট’ করলো বারাণসীর পড়ুয়ারা ? ওই বারাণসীই তো মোদিকে জিতিয়ে সংসদে পাঠিয়েছে ৷
তাহলে কী ‘গ্রাউণ্ড জিরো’ নতুন বার্তা দিচ্ছে ? দেওয়ালের লিখন কি পড়তে পারছেন ভক্তরা ?
বারাণসীর সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচনে ফের গো-হারা হেরেছে মোদির বিজেপি’র ছাত্রশাখা ABVP বা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ৷ এবারই যে প্রথম হারলো তা নয়৷ ২০২০ সালের নির্বাচনেও হেরেছে৷ ২০১৮ এবং ২০১৯-এর ভোটে কোনক্রমে শুধু সভাপতি পদে জিততে পেরেছিলো ABVP, ২০২০ থেকে সেটাও হাতছাড়া৷ আর এবার তো বিজেপি’র ছাত্র শাখা খাতাই খুলতে পারেনি৷
সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের মোট ৭ আসনের নির্বাচন হয়েছে রবিবার৷ কংগ্রেসের ছাত্র শাখা NSUI বা ভারতের জাতীয় ছাত্র ইউনিয়ন ৭টি আসনেই জয়ী হয়েছে৷ নরেন্দ্র মোদির লোকসভা কেন্দ্রে মোদির ‘সুশাসন’- এর বার্তা ছড়িয়েও ABVP মুখ থুবড়ে পড়েছে বারাণসীর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভোটে৷ সংসদের সভাপতি, সহ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, গ্রন্থাগার-সম্পাদক এবং কার্যনির্বাহী সদস্য, কোনও আসনেই জিততে পারেনি ABVP ৷ NSUI-এর চার প্রার্থী, সভাপতি পদে কৃষ্ণমোহন শুক্লা, সহ-সভাপতি পদে অজিতকুমার চৌবে, সাধারণ সম্পাদক পদে শিবম চৌবে এবং
গ্রন্থাগার-সম্পাদক পদে আশুতোষ কুমার মিশ্র, চার প্রার্থীই বিপুল ভোটে পরাজিত করেছেন ABVP প্রার্থীদের৷ ফের বলতে হচ্ছে, মোদির কেন্দ্রের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর পর দু’বছর, বিজেপির ছাত্র শাখা ABVP প্রার্থীদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছে৷ দেশের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির থেকে৷
এ কিসের ইঙ্গিত ?
প্রথমত, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন কেন্দ্র বারাণসীর অন্তর্গত৷ এবং দ্বিতীয়ত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, যে সংস্কৃত ভাষা নিয়ে ধারাবাহিকভাবেই বড়াই করে বিজেপি, এমনভাবে প্রচার চালায়, যাতে বিভ্রান্ত হতে হয়, এ দেশে
সংস্কৃত ভাষার ‘সোল কাস্টোডিয়ান’ একমাত্র বিজেপি তথা আরএসএস৷ তা হলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা কেন বার বার অপছন্দ করছে ABVP-কে ?
মোদির নাম ব্যবহার করে, মোদির ছবি লাগিয়েও কেন সংখ্যাগরিষ্ঠ পড়ুয়াদের পাশে আনতে ব্যর্থ হলো বিজেপি’র ABVP ? এই মুহুর্তে বিজেপি যে কেন্দ্রটিকে ‘মডেল’ হিসাবে তুলে ধরেছে, সেই বারাণসী-ই বার্তা দিচ্ছে নরেন্দ্র মোদিকে প্রত্যাখ্যান করার, সেই কেন্দ্রই আরও একবার বুঝিয়ে দিলো, শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি আর ভাষণে চিঁড়ে ভিজছে না৷
বিজেপি আর মোদি এই ছাত্রভোট থেকে কিছু শিক্ষা নিলে মঙ্গল, না হলে গোটা দেশেই এই বার্তা ছড়িয়ে যাওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা ৷