সবে মাত্র চার দফার ভোট শেষ হয়েছে। এখনও বাকি আরও চার দফা। অথচ নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বিজেপি নেতাদের ভাষণ শুনলে মনে হবে, এখনই জয়ী হয়ে গিয়েছেন তারা। ফলাফল নিয়ে এমন গ্যারান্টি দিতে এর আগে কোনও রাজনৈতিক দল পেরেছে কিনা জানা নেই। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আসলে ভোটারদের ওপর একটি মানসিক চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়। দিল্লি থেকে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ থেকে উত্তর প্রদেশ, অসম সব জায়গাতেই একই ছকে খেলে জয়ের মুখ দেখেছে বিজেপি । তাই এই রাজ্যের নির্বাচনেও সেই ছকই অনুসরণ করছে। কিন্তু সত্যিই কী এভাবে একজন ভোটারের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব? মনস্তত্ত্ববিদরা কিন্তু বলছেন , অবশ্যই সম্ভব। যারা ভোট দেওয়ার সময় ইভিএমের সামনে গিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন যে কাকে ভোট দেবেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের বক্তব্য অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করে।
আর তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হাতের কাছেই আছে । রাজ্যে এখন চায়ের দোকান থেকে বাস- ট্রাম- ট্রেন, রাস্তাঘাট সর্বত্র একটাই আলোচনার বিষয়বস্তু । এবার তবে বিজেপি আসছে কি? নাকি ফের তৃণমূল সরকার গড়বে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন তারা আগেভাগেই স্থির করে ফেলেন কাকে ভোট দেবেন। কিন্তু একটি অংশের ভোটার আছেন, যারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাদের ক্ষেত্রে এই ‘মাইন্ড গেম’ কিন্তু অনেকটাই কাজে লাগে। আর সেই ‘মাইন্ড গেম’ কে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের নির্বাচনে বাজিমাত করতে চাইছে বিজেপি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক অধ্যাপক জানিয়েছেন, ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে থেকেই লাগাতর সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের প্রচার করে বিজেপি আগেভাগেই ভোটারদের ওপর সুকৌশলে মানসিক চাপ তৈরি করেছে। এই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছিল বিশ্বযুদ্ধের সময় ।কেননা বিশ্বযুদ্ধে জাপান- জার্মানি- ইতালির লড়াইয়ের রসদ ছিল এই ‘মাইন্ড গেম’। এমনকি হেরে যাবে বুঝতে পেরেও হিটলার-মুসোলিনিরাও প্রচারমাধ্যমে জয়ের হাওয়া তুলেছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা একটা ছায়া যুদ্ধের মতো । বাস্তবের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক না থাকলেও বিরোধীদের মানসিকভাবে পর্যদুস্ত করার পাশাপাশি নিজের দলের কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতেও মাইন্ড গেমের মতো ভোকাল টনিকের কোনও জুড়ি মেলা ভার।
এমনকি মাইন্ড গেমের পাল্টা মাইন্ড গেম হওয়া উচিত বলে মনোবিদদের মত। এভাবে ভোটারদের বোকা বানিয়ে কি যুদ্ধ জয় করা সম্ভব? বিশেষজ্ঞদের মত, সচেতন মানুষ কিন্তু এই খেলা সহজে ধরে ফেলেন । ভোট কুশলীদের মতে, এই পদ্ধতি পার্সেপশন সিফট অর্থাৎ ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে মানুষের ধারণাটা বদলে দেওয়ার চেষ্টা । আর সেই খেলাতেই মেতেছে বিজেপি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এক্সিট পোল, নির্বাচনী প্রচার সব ক্ষেত্রেই প্রত্যেক নেতার বক্তৃতা এক সুরে বাধা। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শিক্ষিত মানুষও মিথ্যাকে সত্যি ভাবতে শুরু করেন। তাদের মনে হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ যে দিকে ভোট দেবে সেদিকেই তাদের ভোট দেওয়া উচিত। আর কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষার পরই স্পষ্ট হয়ে যাবে, বিজেপির এই ‘মাইন্ড গেম’ এর কৌশল কতটা সাফল্য পায় এ রাজ্যের নির্বাচনে।
Sign in
Welcome! Log into your account
Forgot your password? Get help
Password recovery
Recover your password
A password will be e-mailed to you.