ভার্চুয়ালেও সায় নেই চিকিৎসকদের, ব্রিগেডে পাঠ করা হবে বুদ্ধবাবুর লিখিত বার্তাই

0
1

মনের জোর অটুট থাকলেও শরীর আর সায় দিচ্ছে না৷ শারীরিক কারনে চিকিৎসকরা রাজি নন ‘ভার্চুয়াল’ ভাষণেও৷

তবে, দল ও ফ্রন্টের সর্বস্তরের ‘দাবি’-কে মান্যতা দিয়েছেন তিনি৷ সূত্রের খবর, বামেদের ২৮শের ব্রিগেডে (Brigade Rally) প্রাক্তণ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ( Buddhadeb Bhattacherjee) লিখিত বার্তাই পাঠ করা হবে৷

সেই ছয়ের দশক থেকে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, সিপিএম তথা বামেদের ডাকা প্রতিটি ব্রিগেড সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বুদ্ধবাবু৷ একুশের তাৎপর্যপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বামফ্রন্টের ডাকা এবং শরিক কংগ্রেসের সমর্থন করা আগামী রবিবারের ব্রিগেড এই প্রথমবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে থাকতে পারবেন না প্রবীন সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

আরও পড়ুন-ভীত-সন্ত্রস্থ মানুষকে সাহস যোগাতে এবার প্রশাসনকে ‘দুয়ারে’ যাওয়ার পরামর্শ কমিশনের

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে, ৩ ফেব্রুয়ারি বামফ্রন্টের ডাকা শেষ ব্রিগেড সমাবেশের সময়ও অসুস্থ ছিলেন বুদ্ধবাবু৷ তবুও মনের জোর এবং চিকিৎসকদের অনুমতিকে সঙ্গী করে সেবারও তিনি পৌঁছে যান ব্রিগেড ময়দানে৷ ক্রনিক সিওপিডি (COPD)রোগী বুদ্ধবাবুকে ধুলোর কারনে মঞ্চে ওঠার অনুমতি দেননি তাঁর চিকিৎসকরা৷ তবুও ব্রিগেড ছাড়েননি৷ মঞ্চের পিছনে এনে দাঁড় করানো হয় তাঁর গাড়ি৷ অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে সেই গাড়িতে বসেই কমরেডদের বক্তৃতা শুনেছিলেন তিনি৷ ছবিতে দেখা গিয়েছিলো সেদিন যখন কাচ তোলা গাড়িতে বসে ভাষণ শুনছিলেন, তখনও তাঁর নাকে ছিলো অক্সিজেনের নল৷ মঞ্চে সেদিন উঠতে পারেননি তিনি৷
আজকের মতো সেদিনও দলের প্রায় সবাই তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন, বক্তৃতা দিতে হবে না, একবার অন্তত মঞ্চে উঠে হাত নাড়ুন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ আজকের মতো সেদিনও বলা হয়েছিলো, ফ্রন্ট বা সিপিএম মানে আজও তাঁকেই বোঝায়৷ তাঁকে একবার চোখের দেখা দেখলেই বাড়তি ‘চার্জড’ হবেন দলের কর্মী- সমর্থকরা৷ কিন্তু সেই অনুমতি চিকিৎসকরা সেদিনও দেননি, এবারও দিলেন না৷ ফলে কাচ-বদ্ধ গাড়িতে বসেই ব্রিগেডে সমাবেশে থাকতে হয়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। সেখান থেকেই তিনি ফিরে যান পাম অ্যাভিনিউয়ের ছোট্ট বাড়ির নিভৃতিতে। তার পর থেকে আর তাঁকে বিশেষ জনসমক্ষে দেখা যায়নি। গত ২০১৫ সালে ২৭ ডিসেম্বর, কলকাতায় সিপিএমের প্লেনাম উপলক্ষে ডাকা ব্রিগেড সমাবেশেই সম্ভবত শেষবারের মতো ভাষণ দিয়েছেন বুদ্ধবাবু৷

কিছুদিন আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন বটে, তবে বাইরে বেরোনোয় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। দিনের পর দিন কাটছে পাম অ্যাভিনিউয়ের বড়ই ছোট্ট একটি ঘরে, যেখানে ন্যূনতম চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও কার্যত অসম্ভব৷ তবুও বাড়িতেই তাঁর জরুরি চিকিৎসার কিছুটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এখনও হয়তো তাঁর মনের কোনায় সেই ছাত্র- রাজনীতির সময়কালের তেজ, উদ্দীপনা রয়েছে, এখনও হয়তো লাল পতাকায় মোড়া ব্রিগেড তাঁকে হাতছানি দেয়, কিন্তু শরীরের জোর আজ আর তাঁর নেই। চিকিৎসকরাও সেই পরামর্শ এবারও তাঁকে দেননি৷ তাই এবারও দলের নেতা-কর্মী- সমর্থকদের প্রবল ইচ্ছায় এবারও সাড়া দিতে পারলেন না বুদ্ধদের ভট্টাচার্য ৷

Advt

আরও পড়ুন-নারী ক্ষমতায়নের বার্তা নিয়ে মোদির ব্রিগেডের পরদিনই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাজপথে মমতা

২৮-য়ের ব্রিগেড সমাবেশ ডাকার সময় থেকেই দলের ছাত্র-যুবরা আলিমুদ্দিনে দরবার করেছিলেন, মঞ্চে দশ মিনিটের জন্য একবার তোলা হোক বুদ্ধদেবকে৷ এটা সম্ভব না হলে পাম অ্যাভিনিউ থেকে অন্তত বুদ্ধদেবের ‘ভার্চুয়াল’ ভাষণের ব্যবস্থা করা হোক৷ কারন, আজও বাম ছাত্র-যুবদের কাছে বুদ্ধদেবের গলায় ল়ড়াইয়ে নামার ডাকের তাৎপর্য সর্বাধিক৷ কিন্তু সেটাও সম্ভবত হচ্ছে না৷ দলের তরফে বুদ্ধদেবের পরিবার এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা হয়েছে৷ কিন্তু তা ইতিবাচক হয়নি শারীরিক কারনেই৷

তবে এখনও চেষ্টা চলছে বুদ্ধবাবুর ভার্চুয়াল-বার্তা পাওয়ার৷ আর সেটাও না হলে শেষ আশ্রয় ‘লিখিত বার্তা’৷ আলিমুদ্দিন আশাবাদী, লিখিত বার্তা পাঠাবেনই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ বুদ্ধবাবুর লিখিত বার্তাই পাঠ করা হবে ব্রিগেড ময়দানে৷ আর সেই বার্তায় থাকবে আগুন, যে আগুন বাম-আন্দোলনের আগামীদিনের পথ চলার দিকনির্দেশ করবে ৷