মমতাকে প্রণাম করেই বিজেপির সম্বর্ধনা সভায় হাজির সুনীল-বিশ্বজিৎ

0
1

দুপুরে একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিলো, সন্ধ্যায় দেখা গেলো ধারনাটি বোধহয় পুরোটাই ভুল৷

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানো বনগাঁর বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও নোয়াপাড়ার বিধায়ক সুনীল সিং সোমবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিধানসভায়৷ তখনই একটা জল্পনা তৈরি হয়, এই দুই বিধায়ক তাহলে তৃণমূলেই ফিরছেন৷ বিশ্বজিৎ ও সুনীল বহু আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তৃণমূল অন্দরের দাবি, সুনীল- বিশ্বজিৎকে ‘ঘরে ফেরাতে’ চেষ্টাও একটা চলছিলো৷
এদিন দুপুরে বিধানসভার করিডোরে হঠাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি পড়ে যান দু’জনই৷ বিশ্বজিৎকে দেখে মমতা বলেন, “কীরে, কিছু ভাবলি?” বিশ্বজিৎ উত্তর দেননি৷ এর কিছুক্ষণ পর দেখা যায়, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ঢুকছেন এই যুগল, বিশ্বজিৎ ও সুনীল। মুহুর্তে জল্পনা তৈরি হয়৷ উত্তর ২৪ পরগণার একাধিক তৃণমূল বিধায়ক তো বলেই দেন, “এই তো ফাইনাল হয়ে গেলো৷ এই দু’জন যে কোনওদিন তৃণমূলে ফিরছেন”৷

ওদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘর থেকে বেরিয়ে দুই বিধায়কই বলেন, “উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিলাম। বিধায়ক তহবিলের টাকা ও প্রকল্প আটকে আছে৷ সেই বিষয়েই কথা বললাম৷” এই কথার মধ্যেও অনেকেই দলবদলের ইঙ্গিত খুঁজে পান৷

বিষয়টি কিন্তু বেশিক্ষণ এতখানি মসৃন রইলো না৷ এমনিতে গেরুয়া-শিবিরের হালচালে বিশ্বজিৎ কিছুদিন ধরেই ক্ষুব্ধ৷ গেরুয়া সূত্রে জানা যায়, বিশ্বজিতের রাগ, বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর সক্রিয় এবার তাঁকে যাতে প্রার্থী করা না হয়৷ সুনীলের ‘অশান্তি’ আর এক বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংকে নিয়ে৷ ইদানিং অর্জুন নাকি সুনীলকে ‘সহ্য’ করতে পারছেন না৷ বিজেপি নেতারা আগে থেকেই এসব জানেন৷ কিন্তু পদ্ম-শিবির ভাবতেই পারেননি, সুনীল-বিশ্বজিৎ সরাসরি তৃণমূলনেত্রীর কাছে পৌঁছে যাবেন৷

বিধানসভায় যখন মমতা- বিশ্বজিৎ-সুনীল পর্ব চলছে, তখন হেস্টিংসে বিজেপি (BJP) পার্টি অফিসে দলে নবাগতদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছিল। তখনই দুই বিধায়কের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার খবর পৌঁছে যায়৷ পরিবেশ থমথমে হয়ে যায়। ভোটের মুখে দলবদল হলে মুখ পুড়বে৷ তাই তখনই হেস্টিংসের বিজেপির নির্বাচন অফিসে ডাকা হয় দু’জনকে৷ বনগাঁর বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও নোয়াপাড়ার বিধায়ক সুনীল সিং-র সঙ্গে দ্রুত বৈঠক করেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায় ও অর্জুন সিং৷ বোঝানো হয় দু’জনকে৷ প্রার্থীপদ নিশ্চিত করা হয়৷ সম্ভবত, কাজ হয় এতে৷ এরপর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাঝে পথে সুনীল-বিশ্বজিৎকে মঞ্চে তুলে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। আপ্লুত হন দুই বিধায়ক ৷ ওদের বডি -ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে কারো বোঝার উপায় ছিলো না, দুপুরে এদের নিয়েই জল্পনা ছিলো ‘ঘর ওয়াপসি’-র৷

রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার খবর ছড়িয়ে পড়ায় অনেকটাই লাভ হয়েছে সুনীল- বিশ্বজিতের৷ বিজেপিতে নিজেদের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন এবং প্রায় খাদের কিনারায় চলে যাওয়া দলের টিকিট ফিরে পাওয়ার মৌখিক গ্যারান্টি আদায় করেছেন গেরুয়া-নেতাদের কাছ থেকে৷

‘ঘর ওয়াপসি’ এ যাত্রা বোধহয় আর হচ্ছে না৷

p