একুশের ভোটের (Assembly Election) জন্য বাম-কংগ্রেসকে (Left-Congress) জোটের (Alliance) বার্তা দিয়েছিলেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি (Abbas Siddique)। শুধু তাই নয়, আব্বাস ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছিলেন, গতকাল ৭ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ রবিবার। কারণ, তিনি জানতেন ওইদিন আসন সমঝোতা নিয়ে দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠক আছে। তার আগে আব্বাসের দলের সঙ্গে জোট করতে চেয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। কিন্তু সেই চিঠির উত্তর এখনও আসেনি। যেমনভাবে রবিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএম সদর দফতর বাম এবং কংগ্রেসে দীর্ঘ প্রায় দু’ ঘণ্টার বৈঠক ডাকা হয়নি আব্বাসকে। জানানোও হয়নি ফুরফুরা শরীফের পীরজাদার দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF)-এর সঙ্গে আদৌ জোট হবে কিনা, কিংবা জোট হলেও কত আসন ছাড়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, আব্বাসের প্রতি বাম-কংগ্রেসের সফট মনোভাব থাকেলও তাঁকে মাথায় তুলতে নারাজ দু’পক্ষই। তাই আলোচনার পথ খোলা থাকলেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বৈঠকে। তাই আপাতত জোট হচ্ছে না ধরে নিয়ে একা চলার পথে আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট।
এদিকে রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৯৩টি আসন ভাগ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ১০১টি আসনের জন্যই রবিবারের বৈঠক ছিল। শরিকদের মধ্যে আসন ভাগ করে দেওয়ার পর এবং কংগ্রেসের দাবি মেনে আসন ছাড়ার পর আব্বাসকে দেওয়ার মতো আসন থাকছে না, আলিমুদ্দিন ও বিধানভবন সূত্রে এমনটাই খবর।
আব্বাস অবশ্য নিজের জায়গা থেকে সরছে না। তাঁর দাবি ছিল, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, নদিয়া, মালদহ মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুরে তাঁর দলের যথেষ্ট সংগঠন রয়েছে। অন্তত পক্ষে ৫০ থেকে ৬০টি আসনে জয়ের জায়গায় রয়েছেন তাঁরা। আরও বেশকিছু আসনে নির্ধারক ভূমিকা নিতে পারে তাঁর দল। তাই বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে এখনও সেভাবে আগ্রহ না দেখানোয় আব্বাস বলেন, “জোট না হলে প্রয়োজনে আমরা একাই লড়ব। যেখানে যেখানে প্রার্থী দেব সেখানে সেখানে ৩০ থেকে ৫০ হাজার ভোট কাটার ক্ষমতা রয়েছে আমাদের। ওরা যদি বন্ধুত্বের হাত না বাড়ায়, তাহলে আমাদের একাই লড়তে হবে। তাতে যা হয় হবে।” এমনকি, শেষ পর্যন্ত জোট না হলে তাঁর দলের সমর্থকদের নোটায় ভোট দিতে বলবেন বলে জানিয়েছেন আব্বাস।
অন্যদিকে, নাম না-করে ফের আব্বাস সিদ্দিকি এবং মিম প্রধান সাংসদ আরশাদ উদ্দিন ওয়েইসিকে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী (Siddikulla Chowdhury)। ওয়েইসিকে খোঁচা মেরে সিদ্দিকুল্লা বলেন, ‘‘হায়দরাবাদ থেকে পাখি উড়ে আসবে বংলায়। ডিম দেবে। তা থেকে বাচ্চা হবে। আবার তার ডিম আমরা খাব। কেউ বিশ্বাস করবেন না। বাংলার মুসলমানরা যখন বিপদে পড়েছেন, হায়দরাবাদ থেকে কে কবে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন?’’
আব্বাস সিদ্দিককে তোপ দেগে সিদ্দিকুল্লার কটাক্ষ, ‘‘আর একজন পির সাহেব মাঠে নেমেছেন। বাংলায় তাবিজ-কবজের বিনিময়ে মানুষ ভোট দেন না। পুকুরের সিঁড়িতে নেমে স্নান করার যাঁর ক্ষমতা নেই, তিনি নেমেছেন পুকুরে সাঁতার কাটতে। একটা পঞ্চায়েত নির্বাচনে যিনি জিততে পারবেন না, তিনি নেমেছেন বিধানসভা নির্বাচনে ভোট চাইতে!’’
আব্বাস এবং ওয়েইসি পরোক্ষ ভাবে বিজেপিকে সাহায্য করছেন বলেও অভিযোগ সিদ্দিকুল্লার। সেই সঙ্গেই সংখ্যালঘু মানুষদের প্রতি সিদ্দিকুল্লার বার্তা, ‘‘মুসলিমদের নানা সংগঠন আছে। কিন্তু সাংগঠনিক বিভেদ ভুলে সবাইকে একই ছাতার নীচে আসতে হবে। সামনে বড় বিপদ।’’