একুশের লক্ষ্যে এবার সংখ্যালঘু ভোটকে (Minority Vote) পাখির চোখ করতে চাইছে প্রদেশ কংগ্রেস (Pradesh Congress)। একটা সময় সংখ্যালঘু একটা বিরাট অংশের ডিভিডেন্ড পেতো কংগ্রেস। কিন্তু এ রাজ্যে তৃণমূলের (TMC) শক্তি শক্তি বৃদ্ধির পর ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে কংগ্রেস। খুব স্বাভাবিকভাবেই সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ কংগ্রেস থেকে গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতে। একইভাবে বামেদের সংখ্যালঘু ভোটও ঝুঁকেছে ঘাসফুল শিবিরের দিকে। আর বাংলায় ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে অনেক আসনের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ভোট নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে মালদা, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর, দুই চব্বিশ পরগনার অনেক আসনে সংখ্যালঘুরা ফ্যাক্টর। যার বেশীরভাগটাই বর্তমানে শাসক শিবিরের অনুকূলে।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সেই সংখ্যালঘু ভোটেই ফের থাবা বসাতে চাইছে কংগ্রেস ও তাদের দোসর বামেরা। তারা চাইছে “মহাজোট” ((Matakot) করে তৃণমূলকে বিপাকে ফেলতে। আর এই মুহূর্তে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি (Abbas Siddiqui)। যিনি মুসলিম যুব সমাজের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়। ২৫ বছর বয়সী আব্বাস নিজেও দল গড়েছেন। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট নামক রাজনৈতিক দল গড়ে আব্বাস সিদ্দিকী বাম ও কংগ্রেসকে মহাজোটের ডাক দিয়ে আসছেন। বিমান বসু-সূর্যকান্ত মিশ্র কিংবা অধীর চৌধুরী-আব্দুল মান্নারা শুরু থেকেই আব্বাসের প্রতি সফট মনোভাব দেখাচ্ছেন।
এবার আব্বাসের দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সরাসরি সোনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) অনুমতি চাইল প্রদেশ কংগ্রেস। এই মর্মে আজ, বৃহস্পতিবার কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান (Abdul Mannan)। চিঠিতে গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের (Congress) সংখ্যালঘু ভোট কমার কথা উল্লেখ করেছেন মান্নান। এ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ, মালদা ও উত্তর দিনাজপুরের কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি
সোনিয়া গান্ধীকে লেখা চিঠিতে মান্নান (Abdul Mannan) আবেদন করেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা ভোটে (Assembly Election) বামফ্রন্টের সঙ্গে যেমন জোট নিয়ে আলোচনা চলছে, তেমনই বাংলায় আরও বেশি সংখ্যায় আসন জেতার লক্ষ্যে মহাজোটের (Grand Alliance) আরও একটি সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করতে চাই। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস (Congress) পার্টি বরাবরই সংখ্যালঘুদের সমর্থন পেয়ে এসেছে। কিন্তু লোকসভা ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যালঘুদের ভোট (Minority vote) অনেকটাই কমেছে কংগ্রেসের। যার অন্যতম দৃষ্টান্ত মুর্শিদাবাদ জেলা। প্রায় ৭০ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলার মতো কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। প্রত্যেকটি বিধানসভা কেন্দ্রেই পিছিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। একই ছবি মালদাতেও। আর উত্তর দিনাজপুরে তো কার্যত সংখ্যালঘুরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।”
এখানেই শেষ নয়, সোনিয়া গান্ধীকে লেখা চিঠিতে আব্দুল মান্নান উল্লেখ করেছেন, “বাংলার মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মুসলিম। তারমধ্যে ৯০ শতাংশ বাংলাভাষী। স্বাধীনতার পর থেকে যাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমরা সেই সমর্থন ধরে রাখতে পারিনি। এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পটভূমিতে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (IFS) নামে একটি নতুন দলের সংযোজন হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছেন হুগলির ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী (Abbas Siddiqui)। মুসলিম, দলিত, আদিবাসী ও অন্যান্য অনগ্রসর জাতি-উপজাতির মানুষদের সমর্থন আদায় করাই তাদের লক্ষ্য। এখন সুবক্তা আব্বাস সিদ্দিকী শুধু যে মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় এমনটা নয়। তিনি দলিত ও আদিবাসীদের মধ্যেও সমান জনপ্রিয়। তাই (Left front) বাম-কংগ্রেস (Congress) জোটের সঙ্গে যদি IFS যোগ দেয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটে তা গেম চেঞ্জার হতে পারে।”
আব্বাস সিদ্দিকির (Abbas Siddiqui) সঙ্গে বাংলার বাম-কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলেই সোনিয়াকে লেখা তাঁর চিঠিতে জানিয়েছেন মান্নান। এবার হাইকমান্ডের অনুমতি নেওয়ার পালা।
উল্লেখ্য, জোট নিয়ে বাম-কংগ্রেসকে ইতিমধ্যেই সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন আব্বাস সিদ্দিকি। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, বিধানসভা ভোটে (Assembly Election) কি জোট করে লড়বেন? ৭ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ আগামী রবিবার পর্যন্ত জোট নিয়ে বাম-কংগ্রেসকে ভাবার সময় দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের মধ্যে আসন রফা চূড়ান্ত করতে ৭ ফেব্রুয়ারিই বৈঠকে বসছে বাম-কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। আসন ভাগাভাগিতে আপাতত বামফ্রন্ট ১০১ এবং কংগ্রেস ৯২টি আসনে প্রার্থী দেবে বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থির হলেও এখনও আরও ১০১ টি আসনে সমঝোতার বিষয়ে এখনও কিছু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। যদি আব্বাসের দলকে শেষ পর্যন্ত সঙ্গে নিয়ে ভোটে লড়তে চায় বাম-কংগ্রেস, সেক্ষেত্রে বাকি ১০১টি আসনের মধ্যে থেকেই হয়তো আসন আব্বাসের ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে আসন ছাড়া হবে।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দুই ২৪পরগণাতে আসন বন্টন নিয়েই আপাতত ধন্দে বাম-কংগ্রেস নেতারা। আর এই জেলাগুলিতেই সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে আব্বাসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সেক্ষেত্রে আব্বাস বাম-কংগ্রেসের কাছে ৫০ থেকে ৬০টি আসন দাবি করতে পারেন।
আরও পড়ুন- প্রাইমারি টেটে ঠিক ভাবে মানা হয়নি এনসিটিই-এর নিয়ম, ক্ষোভ পরীক্ষার্থীদের