বিতর্কিত রায় দিয়ে পদ খোয়ানোর মুখে বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি পুষ্পা গানেরিওয়াল

0
1

বিতর্কিত ‘Skin-to-Skin Contact’ রায়ের জেরে সুপ্রিম কোর্টের তীব্র আপত্তিতে থমকে গেল বম্বে হাইকোর্টের (Bombay Highcourt )

বিচারপতি পুষ্পা গানেরিওয়ালার (Justice Pushpa Ganediwala) স্থায়ী নিযুক্তি৷ সূত্রের খবর, বিচারপতির হিসেবে গানেরিওয়ালার স্থায়ী নিয়োগ আটকে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ সর্বোচ্চ আদালতের মন্তব্য, ওই বিচারপতির আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

বম্বে হাই কোর্টের ‘‘Skin-to-Skin Contact’’ রায় নিয়ে দেশজুড়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। সেখানেই না থেমে ওই একই বিচারপতি ফের কোনও নাবালিকার হাত ধরা বা প্যান্টের চেন খোলা ‘পকসো’ আইনে যৌন নির্যাতন নয় বলে রায় দিয়ে আগুনে ঘি ঢেলেছেন৷ বিচারপতি পুষ্পা গানেরিওয়ালার পর পর এ ধরনের রায়ে ‘বিরক্ত’ সুপ্রিম কোর্ট ৷ শোনা যাচ্ছে, বিচারপতি গানেরিওয়ালার স্থায়ী নিয়োগের সুপারিশ ফিরিয়ে নিয়েছে শীর্ষ আদালত।

বিচারপতির হিসেবে গানেরিওয়ালার স্থায়ী নিয়োগও আটকে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ এক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে পুষ্পা গানেরিওয়ালার নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। কিন্তু নাবালিকার যৌন হেনস্তার দু’টি মামলায় পরপর বিতর্কিত রায় দিয়ে আপাতত কাঠগড়ায় তিনি। এবং এই কারনেই গানেরিওয়ালার স্থায়ী নিয়োগের সুপারিশ ফিরিয়ে নিয়েছে শীর্ষ আদালত। সূত্রের খবর, কলেজিয়াম মনে করছে এ ধরনের মামলা সামলাতে আর প্রশিক্ষণের দরকার রয়েছে বম্বে হাইকোর্টের ওই বিচারপতির।

সংশ্লিষ্ট বিধি বলছে আদালতে স্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ বা বিচারপতিদের স্থায়ী আসন দিতে প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রের কাছে পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট। তাতে সিলমোহর দেয় সরকার। অনেক সময় প্রার্থীদের সম্পর্কে আরও তথ্য চেয়ে পাঠায় কলেজিয়ামের কাছে৷

প্রসঙ্গত, বম্বে হাইকোর্টের (Bombay High Court) ‘‘Skin-to-Skin Contact’’ রায় নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই সামনে আসে শিশুদের যৌন নির্যাতন নিয়ে আদালতের আরেক মন্তব্য। নাগপুর বেঞ্চের বিচারপতি পুষ্পা গানেরিওয়ালার সিঙ্গল বেঞ্চ জানায়, কোনও নাবালিকার হাত ধরা কিংবা প্যান্টের চেন খোলা ‘পকসো’ আইনে যৌন নির্যাতন (Sexual crime) নয়। তবে সেক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারা অনুযায়ী অবশ্যই যৌন অপরাধ। এক ৫ বছরের শিশুর উপরে হওয়া যৌন অপরাধের মামলায় এই রায় দেয় আদালত বা বিচারপতি `

পুষ্পা গানেরিওয়ালার সিঙ্গল বেঞ্চ৷এই মামলায় অভিযুক্ত ৫০ বছরের এক ব্যক্তি। নিম্ন আদালতে তার অপরাধকে পকসো আইনের ১০ ধারায় যৌন নির্যাতন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হয় অভিযুক্তর। নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, অভিযুক্তর প্যান্টের চেন খোলা ছিল। সে মেয়েটির হাতও ধরেছিল। মামলার শুনানিতে বম্বে হাইকোর্ট যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞায় ‘‘Skin-to-Skin Contact’’ শব্দটির ব্যাখ্যা করে জানিয়েছে, প্রত্যক্ষ শারীরিক সম্পর্ক অর্থাৎ যৌনাঙ্গ অনুপ্রবেশ ছাড়াই ‘‘Skin-to-Skin Contact’’।আদালতের নাগপুর বেঞ্চের বিচারপতি পুষ্পা গানেরেওয়ালা আরও জানান, যেহেতু এই মামলাটি 354A (1) ধারায় বিচার্য, তাই পকসো আইনের ৮, ১০ ও ১২ ধারায় ঘোষিত শাস্তি খারিজ করা হলো।

 

ওই বিচারপতির এমন বিতর্কিত রায় এটাই প্রথম নয়৷ এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি এই বেঞ্চেরই এক রায় নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ছিলো। আদালত জানিয়েছিল, পোশাকের উপর দিয়ে নাবালিকার স্তনে হাত দিলে ‘পকসো’ আইনের আওতায় তা যৌননিগ্রহ হিসেবে গ্রাহ্য হবে না। যৌন ইচ্ছায় ত্বকের সঙ্গে ত্বকের সংস্পর্শ বা ‘‘Skin-to- Skin Contact’’ হলে, তবেই তা যৌন নিগ্রহ হিসেবে গণ্য হবে। পকসো আইনের ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী এই রায় দেওয়া হয়।

বুধবার সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এবং তার পরেই শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, এ ধরনের মামলা সামলাতে আর প্রশিক্ষণের দরকার রয়েছে বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি পুষ্পা গানেরিওয়ালার৷ তাঁর স্থায়ী নিয়োগের সুপারিশও ফিরিয়ে নিয়েছে শীর্ষ আদালত।

Advt