আদি-নব্য লড়াইয়ে বিজেপির অন্দরমহল এখন ছারখার

0
3

আদি- নব্য লড়াইয়ে রাজ্য বিজেপি এখন দ্বিধা বিভক্ত। এই লড়াই এখন এতটাই প্রকাশ্যে যে দলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বাম আমলের সেই পরিচিত শব্দবন্ধ ‘আমরা-ওরা’।

তৃণমূল থেকে ‘বাতিল’নেতাদের নেওয়া শুরু হয়েছে দলে। মনে করা হচ্ছে দল ভাঙিয়ে বোধহয় শাসক দলকে অস্বস্তিতে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু ঘরের মধ্যেই ঘর তৈরি হওয়ায় যার পর নাই ঘরোয়া লড়াইয়ে ব্যতিব্যস্ত হচ্ছে গেরুয়া শিবির। আরএসএস এই খেলা বন্ধ করতে বললেও দলবদলুরা এখন দলে এতটাই শক্তিশালী যে রাজ্য নেতৃত্ব কিছুটা কিংকর্তব্যবিমুঢ়। শুনতে হচ্ছে বিজেপি এখন তৃণমূলের ‘বি টিম’ কিংবা তৃণমূলের ‘অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশন’। আর এখান থেকেই শুরু হয়েছে ভোটে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে দলের মধ্যে হিসেব-নিকেশ। যার জেরে শৃঙখলার দাবিদার বিজেপি যেন এখন বিশৃঙখলার খোলা মাঠ।

নব্যদের মাথা মুকুল রায় এবং অধুনা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁরা চাইছেন দলে তাঁদের অনুগামীদের ঢুকিয়ে নিজেদের কণ্ঠস্বর আরও জোরাল করতে। এ নিয়ে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যার পর নাই বিরক্ত। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সে কথা বলেছেনও। কিন্তু ভোটের আগে একসঙ্গে চলার কথা বলায় তিনিও কিছুটা ব্যাকফুটে। যদিও তিনি বলতে ছাড়েননি আমরা এবার দলের দরজা দলবদলুদের জন্য বন্ধ করব। তবে তা যে বন্ধ হয়নি, তা পরিস্থিতিই বলে দিচ্ছে।

আর সেখান থেকেই দলে আওয়াজ তুলেছেন আদি বিজেপিরা। তাঁরা এবার দলের মধ্যেই বিধানসভায় প্রার্থী পদ নিয়ে তাঁদের প্রস্তাব দিতে শুরু করেছেন।

কী সেই প্রস্তাব? ২০১৯-এর লোকসভা ভোটকে তাঁরা মাপকাঠি ধরেছেন। লোকসভার পর যাঁরা দলে যোগ দিয়েছেন তাদের নব্য তালিকায় ফেলেছেন তাঁরা। লোকসভায় দল পেয়েছিল ১৮টি আসন। আর তার নিরিখেই দল এগিয়ে রয়েছে ১২১টি বিধানসভা আসনে। আদি বিজেপির দাবি, এই আসনগুলিতে আদিদের প্রার্থী করতে হবে। বাকি ১৭৩ আসনে নব্যরা লড়াই করুন, জিতে আসুন। শুধু তাই নয়, যেখানে বিজেপির নিশ্চিত জয়, সেখানেও দেওয়া হোক আদি প্রার্থীদের। যেখানে নব্যদের ছাড়াই দল জিতেছে লোকসভায়, সেখানে আদি প্রার্থীই থাকবে। যেমন আসানসোল এবং জিতেন্দ্র তেওয়ারি। দলে আসব আসব করছে জিতেন্দ্র। কিন্তু তাকে ছাড়াই বিজেপি সেখানে পরপর দুবার লোকসভায় জিতেছে। তাই জিতেন্দ্র এলেও যেন তাকে প্রার্থী করার কথা না ভাবা হয়। কারণ, বিজেপির লড়াইটা ছিল জিতেন্দ্রর বিরুদ্ধে। নইলে জনমানসে ভুল বার্তা যাবে। এ নিয়ে মুখ খুলে দলের দুই নেতা সায়ন্তন বসু ও অগ্নিমিত্রা শোকজ খেলেও তাঁরা এই লাইন থেকে সরতে নারাজ।

শুধু তাই নয়, বহু আসনে দলের এলাকার নেতারা লড়াই করে প্রার্থীদের জিতিয়ে এনেছেন। তাঁরা আশা করে রয়েছেন প্রার্থী পদ নিয়ে। সেখানে যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, দল বদলে তারা প্রার্থী হলে যে দলের বহু কর্মী বসে যাবেন, কাজ করবেন না বা বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নেবেন, তা প্রায় নিশ্চিত। দলের এক লড়াকু নেত্রী বলছেন, এই সব নব্যদের প্রার্থী করলে এলাকায় রাজনীতি করাটাই মুশকিল হয়ে যাবে। আবার টিকিটের প্রত্যাশী নব্যদের ভাগ্যে শিকে না ছিঁড়লে তাঁরাও যে দলবিরোধী কাজ শুরু করে দেবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের এই দ্বন্দ্বের কথা জানেন। অমিত শাহ নিজে বসে প্রার্থী বাছাই করলেও তাতে যে ক্ষোভ প্রশমিত হবে না তা বলাই বাহুল্য। কে কোথায় জিততে পারেন, তার রোড ম্যাপ তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলে। কিন্তু সেখানে যে প্রবল মতভেদ হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নব্যদের কেউ কেউ বলছেন, দল বিধানসভায় জিততে পারে এই ভাবনা বিজেপি মাথাতেই আনতে পারত না। এখন ভাবছে। তাই এক্ষেত্রে এত বাছ-বিচার করা ঠিক হবে না। পালটা আদি বিজেপি বলছে, লোকসভায় ১৮ আসন জেতার কারণেই তো এই উৎসাহ তৈরি হয়েছে। আর এই জয় এনেছে আদি বিজেপিরাই। ফলে বিধানসভার প্রার্থী বাছাইয়ে কেন পিছনের আসনে থাকবে?

ফলে আদি-নব্য লড়াইয়ে বিদীর্ণ বিজেপির অন্দরমহল এখন অগ্নিগর্ভ।