বইমেলা ২০২১। ২৮-৩১ জানুয়ারি। আমহার্স্ট স্ট্রিট, হৃষিকেশ পার্ক। পশ্চিমবঙ্গ প্রকাশক সমন্বয় কমিটির বইমেলা ঘিরে শীতের শহরে প্রবল উৎসাহ। মঙ্গলবার ধর্মতলা থেকে বইপাড়া পর্যন্ত এসি ট্রামে বইমেলার ‘টিজার ক্যাম্পেন’ ঘিরে উৎসাহ, উদ্দীপনা, বই পিপাসুদের জিজ্ঞাসা বুঝিয়ে দিয়েছে, কলকাতা বাস্তবতই এমন এক উদ্যোগের অপেক্ষাতেই ছিল।
কলকাতার বড় বইমেলা এবার হচ্ছিল না। শুরুর আগেই সমন্বয় কমিটি যেভাবে প্রকাশকদের তরফ থেকে অকুণ্ঠ সাড়া পেয়েছে, তা দেখে হঠাৎই শীত ঘুম ভেঙেছে গিল্ডের। আর তাই তড়িঘড়ি তারা ঘোষণা করেছে, জুন-জুলাই মাসে নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক বইমেলাটি হবে। নির্দিষ্ট দিন নেই। স্বভাবতই বইপ্রেমীদের মনে এই হঠাৎ উদ্যোগ, তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত এবং বায়বীয় দিন ঘোষণায় কয়েকটি প্রশ্ন জেগেছে। গিল্ডের কাছে বেশ কিছু প্রকাশক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং বইপ্রেমীদের প্রশ্ন…
এক. জুন-জুলাই মাসেই যদি বইমেলা হবে, তাহলে তা আগে কেন ঘোষণা করা হল না?
দুই. করোনার কারণকে সামনে রেখে এবার নির্দিষ্ট সময়ে বইমেলা করা হয়নি। প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, জুন-জুলাই মাসেই যে করোনা লেজ গুটিয়ে পালাবে, এমন নিশ্চয়তা গিল্ডকে কে দিল?
তিন. জুন-জুলাই মূলত বাংলায় ঘোর বর্ষাকাল। প্রশ্ন উঠেছে, ঘোর বর্ষায় মেলা কোন জায়গায় হবে? বৃষ্টি এড়াতে শুধু স্টল নয়, গোটা বইমেলা চত্বর ঢাকতে হবে। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলি ব্রিগেড বা শহিদ মিনারে বর্ষায় সমাবেশ করতে ভয় পায়, সেখানে বইমেলা করা ‘দুঃসাহস’ হয়ে দেখা দেবে না তো! প্রকাশক আর বইপ্রেমীদের বিপদে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলেও অনেকে অভিযোগ তুলেছেন।
চার. সমন্বয় কমিটি প্রথমবার মেলা করতে গিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, প্রকাশকদের বিনামূল্যে স্টল দেওয়া যায়। অনেকেরই প্রশ্ন, গিল্ডের মেলাতেও এবার থেকে বিনামূল্যে স্টল দেওয়া হবে তো? যদি না দেওয়া হয়, তাহলে বইমেলা সমন্বয় কমিটি তাদের ক্ষুদ্র উদ্যোগ নিয়ে পারছে কীভাবে?
পাঁচ. বিনামূল্যে স্টল দিতে পেরেছে বলেই হৃষিকেশ পার্কের বইমেলায় প্রত্যেক প্রকাশক তাদের প্রত্যেকটি বইয়ে ২৫ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। তাহলে গিল্ড কেন মাত্র ১০ শতাংশ ছাড়ে বই বিক্রি করবে?
প্রকাশক, লেখক, বইপ্রেমীদের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ ওঠার পাশাপাশি সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রকাশক বলছেন, সমন্বয় কমিটির বইমেলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, বড় বইমেলা ঢেলে সাজানো উচিত। কারণ, এই মুহূর্তে সম্ভব-অসম্ভবের বিষয়টা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।
ভোটের আগে বইমেলা না করে তাকে ঘোর বর্ষায় ঠেলে দেওয়ার মধ্যে অনেকেই গভীর রহস্য দেখছেন। এক প্রখ্যাত লেখকের কটাক্ষ, শুরুর আগেই সমন্বয় কমিটির বইমেলায় ব্যাপক সাড়া মিলেছে। সেই সাড়ায় বিচলিত গিল্ড। আর এই কারণেই ‘প্রায় বাতিল’ আন্তর্জাতিক বইমেলা ‘বায়বীয় সময়ে’ করার ভাবনা। সেটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কারও।
হৃষিকেশ পার্কের মাঠে দাঁড়িয়ে প্রতীক্ষিত বইমেলার প্রস্তুতির ঘ্রাণ নিতে নিতে বইপ্রেমী সুদেষ্ণা সরকার বললেন, একেই বলে বোধহয় ঠেলার নাম বাবাজি।


































































































































