কেন্দ্রের কৃষি আইনের (farm law) বিরুদ্ধে মাসাধিককাল ধরে আন্দোলন চালানো প্রতিবাদী কৃষকদের বাগে আনতে না পেরে বদনাম ও কুৎসা রটিয়ে কৃষক আন্দোলনকে (farmers protest) দুর্বল করার চেষ্টা শুরু করেছে বিজেপিপন্থী শিবির। কৃষকদের কখনও খালিস্তানি, কখনও মাওবাদী বা জঙ্গি তকমা লাগানোর কুৎসিত চেষ্টা চলছে। সেই পরিকল্পনারই অংশ হিসাবে ফেক নিউজ ছড়িয়ে কৃষকদের সম্পর্কে জনমানসে ভুল বার্তা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হল। ইতিমধ্যেই আন্দোলনকে লঘু করে দেখাতে বিজেপির (bjp) মদতে পাঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকদের গাড়ির ছবি তুলে ধরে কুৎসা রটানোর চেষ্টা হয়েছে। বোঝাতে চাওয়া হয়েছে, এই চাষিরা মোটেই গরিব নয়, এদের আন্দোলনের কোনও যৌক্তিকতাই নেই। এবার সেরকম একটি ছবি ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। পরে ভাইরাল হওয়া ছবিটির তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, সেটি আদ্যন্ত ফেক নিউজ (fake news)।

ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গিয়েছে, সিঙ্ঘু সীমানায় কৃষকদের বিক্ষোভস্থলে অবিকল মার্সিডিস বেঞ্জের মতো দেখতে একটি বহুমূল্য গাড়ির মাথায় চড়ে খবরের কাগজ পড়ছেন এক শিখ ব্যক্তি। ওই ছবি দেখে নেট নাগরিকদের একাংশ বলতে শুরু করেছিলেন, দেশের গরিব চাষিরা মার্সিডিস বেঞ্জ চড়ছে! এত টাকা এল কীভাবে? মার্সিডিজের ওই গাড়ির দাম দেড় কোটি টাকা, সেটাও খুঁজে বের করেন সমালোচকরা। অবশেষে ছবির রহস্য উদঘাটন করে ভুয়ো খবর যাচাইকারী সংস্থা ‘অল্ট নিউজ’।
ছবিটি শেয়ার করা হয়েছিল নিশান্ত ইন্ডিয়া–র টুইটার হ্যাণ্ডেল থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও যে অ্যাকাউন্ট ‘ফলো’ করেন। টুইট করেছিলেন রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাঞ্চন গুপ্ত, লেখক কার্তিকেয় তান্না। ‘আই সাপোর্ট নরেন্দ্র মোদি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকেও পোস্ট করা হয়েছিল ছবিটি। ওই পেজের ফলোয়ার্স সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে এই ছবি সহ নেতিবাচক প্রচার পৌঁছে যাওয়ার পর সেটি সরিয়ে ফেলা হয় পেজ থেকে। কমেন্টে একজন লিখেছিলেন, ‘দেশের গরিব চাষির সস্তা জিপ।’ এরপরই সত্যতা অনুসন্ধান করে জানা যায়, গাড়ির মালিক হচ্ছেন মনপ্রীত সিং। টুইটারে প্রথম শেয়ার হওয়া ছবির সূত্র ধরে ‘অল্ট নিউজ’ খুঁজে বের করে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর– ‘পিবি ১২ জেড ৮২৮২’। পরে কেন্দ্রীয় সড়ক এবং পরিবহন মন্ত্রকের ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানা যায়, গাড়িটি মার্সিডিজ কোম্পানিরই নয়। ওটা ফোর্স মোটর কোম্পানির এসইউভি গুর্খা। যার দাম লাখ দশেক। গাড়িটির নকশা তৈরি করেছে কেরলের কোম্পানি ‘কালার গ্লো’। তারাই এই গাড়িটিকে মার্সিডিজ জি ওয়াগানের রূপ দিয়েছে।
গাড়ির মালিক মনপ্রীত ‘অল্ট নিউজ’কে বলেন, আমি নিজে ব্যবসা করি। কিন্তু বাড়ির সবাই কৃষক। গত ৫ ডিসেম্বর থেকে সিঙ্ঘু সীমানায় আমার যাতায়াত রয়েছে। কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে সব জায়গা থেকেই মানুষ আসছেন এখানে। আমার গাড়ি নিয়ে অনর্থক বিতর্ক হচ্ছে। আসলে এটা মার্সিডিসের মতো দেখতে। আমি নিয়মিত কর দিয়ে থাকি। এখন এটা ভেবে খারাপ লাগছে, আমার গাড়ির ছবি ব্যবহার করে বিজেপিপন্থী কিছু মানুষ পরিকল্পিতভাবে কৃষকদের অপমান করছে। তবে এতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি কৃষকদের পাশে দাঁড়াবই। কৃষকদের এই আন্দোলন সমর্থন করে আমার তরফে যা সাহায্যের দরকার তাও করব।
আরও পড়ুন:প্রেস ক্লাবের কলঙ্কিত রাত : চুলোয় যাক মান-সম্মান-দায়িত্ব, পদ তো রইল!




































































































































