মন্ত্রিত্ব, পদ, দল ছেড়ে বিজেপিতে (BJP) যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary)। তারপর একের পর এক সভা, মিছিল। পুরোনো দলকে খুলে আক্রমণ। তার উপর অমিত শাহর সৌজন্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সমতুল্য JIC চেয়ারম্যান পদ। এককথায় সোনায় সোহাগা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দারুণ ফুরফুরে মেজাজ ও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
কিন্তু হঠাৎ করে তাল কাটলো তাঁর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামে (Nandigram)। দলবদলের পর একাধিক কর্মসূচি নিয়ে শুভেন্দু নন্দীগ্রামে গেলেও গতকাল, শুক্রবারই ছিল তাঁর প্রথম জনসভা। শুরুটা ঠিক ছিল, তবে শেষটা ভালো হয়নি নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়কের জন্য। নিজের জমিতে দাঁড়িয়ে তৃণমূলকে নিশানা তো করতেই পারলেন না, বরং “আমিত্ব” দেখতে গিয়ে শুভেন্দু বুঝলেন, তাঁর প্রতি তাঁর বর্তমান দলের প্রকৃত মনোভাব। আদি বিজেপি সমর্থকরাও সঙ্গ দেননি। অনুগামীদেরও ছিল গা ছাড়া ভাব। সভা শেষে তাই এদিন নন্দীগ্রামের রেয়াপারায় খুঁজে পাওয়া গেল “দামাল” নয়, আপাত নিরীহ এক শুভেন্দুকে। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর শরীরী ভাষা কখনই এতটা ‘হতাশাজনক’ লাগেনি।
সভা শেষে নিজের সহায়তা কেন্দ্রে বসে বিচলিত ভাবে একের পর এক ফোন করে যাচ্ছিলেন শুভেন্দু। কখনও দলীয় কর্মীদের, কখনও বা অন্যান্য নেতাদের। সবাই ঠিকমতো বাড়ি পৌঁছে গিয়েছেন কিনা মূলত সেই খোঁজই নিচ্ছিলেন। এরপর সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ নন্দীগ্রাম ছেড়ে কাঁথির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি।
মেদিনীপুরে অমিত শাহের মঞ্চে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় গেরুয়া সমর্থক ও জেলা নেতৃত্বের মন পেতে নিজেকে একজন “সাধারণ কর্মী” হিসেবেই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু নন্দীগ্রামের সভামঞ্চে কৈলাস, মুকুল, দিলীপদের সামনে যখন একটা উৎশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, ঠিক সেই সময় নিজেকে সবচেয়ে বড় নেতা প্রমাণ করার তাগিদে বিজেপি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতির হাত থেকে মাইক ছিনিয়ে নিয়ে বলে ওঠেন, “আমি আছি তো, আমি শুভেন্দু। আমার ওপর ভরসা রাখুন। সব সামলে নেব।” আর তখনই স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের সম্মানে ধাক্কা লাগে। জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েকের উপরই দায়িত্ব ছিল সভা পরিচালনা করার। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি ক্রমাগত “জয় শ্রী রাম ধ্বনি”ও দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই মঞ্চে
অবতীর্ণ হন “আমি শুভেন্দু”!
স্থানীয় সূত্রে খবর, শুভেন্দুর এই আমিত্বকে একেবারেই ভালভাবে দেখেনি জেলা নেতৃত্ব। একইসঙ্গে আদি বিজেপি নেতা-কর্মীদের সরিয়ে মঞ্চে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের বারে বারে উঠে আসার মধ্যেও অন্য সমীকরণ দেখছে গেরুয়া শিবিরের একাংশ। সবমিলিয়ে নন্দীগ্রামের প্রথম জনসভাতেই শুভেন্দুর ফ্লপ-শো।
আরও পড়ুন:রাস্তা ফেরতের দাবিতে ছাতিমতলায় অনশন- অবস্থানে বিশ্বভারতীর উপাচার্য