মুম্বই হামলার মূল ম্যানেজার সাজিদ মীরের সন্ধান দিলেই কয়েক কোটির আর্থিক পুরস্কার, ঘোষণা আমেরিকার

0
3
মুম্বই হামলার মূল ম্যানেজার সাজিদ মীরের সন্ধান দিলেই কয়েক কোটির আর্থিক পুরস্কার, ঘোষণা আমেরিকার

এক যুগ কেটে গিয়েছে মুম্বই হামলার। দেশবাসীর মনে আছে কীভাবে লস্কর-ই-তইবা হামলা চালিয়েছিল মুম্বইয়ে। পাকিস্তান থেকে জলপথে বাণিজ্যনগরীতে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গিরা। এরপর একযোগে নিশানা করা হয় মুম্বইয়ের একাধিক জায়গাকে। এই ঘটনার পর জীবিত অবস্থায় ধরা পড়েছিল আজমল কাসভ। ২০১২-র ১১ নভেম্বর কাসভকে পুনের ইয়ারওয়াদা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও অধরা লস্কর-ই-তইবার সেই অপারেশনের মূল ম্যানেজার সাজিদ মীর। এবার এই কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীর খবর দিতে পারলে মোটা অঙ্কের আর্থিক পুরস্কার দেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ইউএস রিওয়ার্ডস ফর জাস্টিস প্রোগ্রামের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, “২০০৮ সালে মুম্বই হামলায় অভিযুক্ত পাকিস্তানের লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি সংগঠনের সিনিয়র সদস্য সাজিদ মীরের সন্ধান চাই। এই হামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে কোনও দেশে তার আটক বা গ্রেফতারির হদিশ দিতে পারলে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে।” ভারতীয় মুদ্রায় যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি টাকা।

পাশাপাশি আমেরিকার ওই দফতরের তরফে আরও জানানো হয়েছে, মুম্বই হামলার দায়িত্বে ছিলেন সাজিদ মীর। গোটা হামলার পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল তার উপর। এই হামলায় অভিযুক্ত থাকার অভিযোগে ২০১১ সালে ২১ এপ্রিল ইলিনয়সের আদালতে সাজিদকে দোষী সাব্যস্ত করে। তার বিরুদ্ধে আমেরিকার বাইরে ভিন্ন রাষ্ট্রের সরকারি সম্পত্তি নষ্টের ষড়যন্ত্র, হামলার মেটেরিয়াল জোগানো, সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়া, দেশের বাইরে আমেরিকার নাগরিককে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে। এমনকী, হামলার সময় বন্দী মুক্তির বদলে এক হামলাকারীকে ছাড়িয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সাজিদ। মুম্বইয়ের ভিড়েঠাসা এলাকায় বিস্ফোরণ, হামলার সময় আগুন লাগিয়ে দেওয়া ও গ্রেনেড হামলারও নির্দেশ সাজিদই দিয়েছিল বলে ওই আদালত জানিয়েছিল। এরপর সাজিদ মীরের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ২২ এপ্রিল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ইলিনয়েসের ওই আদালত। ২০১৯ সালের এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড-এর তালিকায়ও নাম যোগ হয় মীরের।

২০১২ সালে আমেরিকার ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছিল, লস্কর-ই-তইবা সংগঠনে উচ্চপদে রয়েছে মীর। সেখানে সে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেয়। ২০০৫ সাল থেকে আমেরিকার নজরে রয়েছে সাজিদ। সে সময় সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছিল, বিদেশে মগজ ধোলাই, জঙ্গি নিয়োগ, আর্থিক তছরূপ এবং বিদেশে হামলার ছক কষার বিষয় লস্কর সংগঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে সাজিদ। আপাতত সে পাকিস্তানেই রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। ভারত একাধিক নথি এবং তথ্য দেওয়ার পরেও সাজিদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি ইসলামাবাদ। তাদের দাবি, সাজিদ-সহ একাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণই মেলেনি।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বই জঙ্গি হামলা ২৬/১১ নামেই পরিচিত৷ পাকিস্তান থেকে জলপথে মুম্বইয়ে ঢুকে ১০টিরও বেশি জায়গায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। সন্ত্রাসীরা করাচি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। তারা গভীর সাগর পর্যন্ত একই জাহাজে ছিল। সাগরে একটি ভারতীয় মাছ ধরার নৌকা ছিনতাই করে এবং মুম্বাই উপকূলে এসে তার নাবিককে হত্যা করে। দক্ষিণ মুম্বইয়ের ১০টিরও বেশি জায়গায় হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা৷ ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, তাজ হোটেল, লিওপোল্ড ক্যাফে, কামা হাসপাতাল, নরিম্যান হাউস, ইহুদি কমিউনিটি সেন্টার, টাইমস অফ ইন্ডিয়া ভবন ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পিছনের একটি গলি, মাজাগাঁও ও ভিলে পার্লের একটি ট্যাক্সির মধ্যেও বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল জঙ্গিরা।

আরও পড়ুন-করোনার পর এবার নোরোভাইরাস! ফের মহামারির আশঙ্কা