“খাবার পর একটা করে কথা দিয়েছ”। হাসিমুখে স্ত্রীর আবদার রেখেছিল অপু। এই এক দৃশ্যেই পর্দায় অপু-অপর্ণার অমরগাথা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তৈরি হয়েছিল সৌমিত্র-শর্মিলা জুটি। শুধু আমার প্রথম ছবির হিরোই নয়। সুদীর্ঘ ছয় দশকের কেরিয়ারে একসঙ্গে একাধিক ছবি করেছি দুজনে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল সৌমিত্র-শর্মিলা জুটি। বন্ধুত্বের সেই রসায়ন পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছিল ‘দেবী’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘বর্ণালী’র ভিত।
ক্যামেরার নেপথ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল আমাদের। আজ আমার জীবনের এক গভীর শোকের দিন। অনেক দিন ধরেই ভুগছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
‘অপরাজিত’ আমার প্রথম ছবি। কখনও মনে হয়নি, আমি একটা বড় ছবিতে অভিনয় করছি। মনে হয়নি, আমার পাশে দাঁড়ানো নায়ক মানুষটি আমার চাইতে ১০ বছরের বড়। বয়সের পার্থক্য থাকলেও সৌমিত্রর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বে কোনও কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। অনেকগুলো ছবিই তো করেছি ওঁর সঙ্গে। ‘অপুর সংসার’, ‘দেবী’, ‘কিনু গোয়ালার গলি’, ‘বর্ণালী’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘আবার অরণ্যে’।
সৌমিত্র ছিলেন সেই বিরল এক মানুষ, যিনি যে কোনও সময়ে যে কোনও বিষয়ে অনর্গল কথা বলে যেতে পারতেন। ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবির শ্যুটিংয়ে উত্তরবঙ্গের এক ডাকবাংলোয় সৌমিত্র, শুভেন্দু ও আমি ছিলাম। রোজ কাজের পরে আমাদের আড্ডা জমত নানা বিষয়ে। বেশিরভাগ দিনই আড্ডার মধ্যমণি হতেন সৌমিত্র। কী বিষয় নিয়ে যে কথা হত না! রাজনীতি থিয়েটার, ফুটবল, গান। উনি এত বিষয়ে গভীর ভাবে জানতেন যে, বারে বারে মুগ্ধ হয়েছি। এই অভাব অপূরণীয়। শেষ সময় সেই ছবির অনেকেই আজ নেই- সমিত ভঞ্জ, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, কাবেরী বসু রবি ঘোষ এবার চলে গেলে সৌমিত্রও।
উনি ছিলেন আমার বহু পুরনো বন্ধু। ওঁর মতো আর কেউ নেই। এমন একটা মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব, যিনি একই সঙ্গে অভিনেতা, লেখক, কবি, চিত্রকর, সঙ্গীতশিল্পী, আবৃত্তিকার। কী নন! ফুটবল থেকে কবিতা, ক্রিকেট থেকে গিরিশ ঘোষ, যে কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন, এমন মানুষের দেখা কমই পেয়েছি। উনি আমাদের মধ্যে অনেক দিন বেঁচে থাকবেন।
আরও পড়ুন:সৌমিত্র বলেছিল: আমাদের জুটিটা ভেঙে গেল