
তিনি তৃণমূল প্রার্থীকে গত লোকসভা ভোটে দার্জিলিং পাহাড় থেকে লিড তো দূরের কথা উল্লেখ করার মতো জনসমর্থন দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। নিজে উপনির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরেছেন আড়ালে থাকা বিমল গুরুংয়ের প্রার্থীর কাছে। সেই তিনি মানে বিনয় তামাং তাই বিমল গুরুংয়ের পাহাড়ে ফেরা আটকাতে মরিয়া। রোজই নিজের লোকজনদের জড়ো করিয়ে নানা এলাকায় বিমল বিরোধী মিছিল করাচ্ছেন। অথচ, বিমলের অনুগামীরা দাবি করছেন, বিনয় আসলে বিমল ফিরলে যাতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কোনও সমস্যায় পড়তে না হয় তা নিশ্চিত করতেই সচেষ্ট। এমনকী, গুরুং অনুগামী তিন জন নেতা ও একজন আইনজীবীর সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে বিনয়ের। সূত্র বলছে, সকলেই বিনয়কে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বাধ্যবাধকতার বিষয়টি মাথায় রেখেই বিমল গুরুং পদক্ষেপ করবেন।
শনিবার, কার্শিয়াং শহরে বিনয় তাঁর অনুগামীদের দিয়ে মিছিল করিয়েছেন। সেই ছবি, ভিডিও কলকাতায় নবান্ন, তৃণমূল দফতরে পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু, ভিড় ও মিছিলকারীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা যে তেমন নেই তা অনেকেরই চোখে পড়েছে। পাহাড়ের এক গুরুং অনুগামী নেতা জানান, দার্জিলিঙে ফেরার পরে বিনয়কে ডেকে যদি গুরুং কোনও নির্দেশ দেন তা তিনি বিনা বাক্যবয়ে মানবেন বলেই তাঁরা মনে করেন। অনীত থাপা তো অতীতে বিমল গুরুংয়ের কোনও নির্দেশ অমান্য করেননি—এ কথাও জানান ওই নেতা।
আসলে রাজ্য সরকার গুরুংকে কতটা গার্ড দিয়ে পাহাড়ে পাঠাতে চায় তা বোঝার চেষ্টা করছেন বিনয় শিবিরের অনেকেই।
কারণ, অতীতে মদন তামাং খুনের ঘটনার পরে প্রায় গোটা পাহাড় বিমলকে কাঠগড়ায় তুলেছিল। বিক্ষোভ হয়েছিল। কিন্তু, বাম সরকারের আমলে বিমলকে পাহাড়ে ফেরানোর পরে দেখা গিয়েছিল গোটা পাহাড় ফের গুরংয়ের কব্জায়।
এখন যা পরিস্থিতি তাতে বিমল তিন বছর আড়ালে থেকেও পাহাড়ে বিজেপিকে সব ভোটেই জিতিয়েছেন। আগামী বিধানসভা ভোটে আড়ালে না থেকে সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে থেকে পাহাড়ের তিন আসন ও সমতলের নেপালু ভাষী অধ্যুষিত ১৩ আসনে জয় নিশ্চিত করে দিতে চান বিমল।
বিনয়-অনীতদের হয়ে এখন পাহাড়ে যতই মিছিল হোক না কেন, আলাদা রাজ্যের আন্দোলনের সময় ঘরদোর ছেড়ে জঙ্গলে লুকিয়ে বেড়ানো, শতাধিক মামলায় জেরবার গুরুং কিন্তু এখনো পাহাড় ও সমতলের নেপালিভাষীদের অনেকের নয়নের মণি। গত লোকসভা ভোটে দার্জিলিঙয়ে অপরিচিত রাজু বিস্তের রেকর্ড ভোটে জেতা, উপনির্বাচনে বিজেপির জয় সে কথাই বলে।
তাই গুরুং বিরোধী মিছিল করে নিজের অনুগামীদের ধরে রাখার চেষ্টায় বিনয়-অনীতরা মরিয়া হলেও পাহাড়ে সিংহভাগ কিন্তু গুরুং ফিরলে ঠিক আরও বেশি স্বশাসন মিলবে বলে আশাবাদী।