অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে চামুন্ডা রূপে দুই ভয়ানক অসুরের রক্তপান করেন দেবী দুর্গা

0
1

অসুর নিধনে দেবীর অকাল বোধন। সেই রীতি অনুসারে আশ্বিনের শুক্লাষ্টমীর বিশেষ মাহেন্দ্রক্ষণে দেবী দুর্গার সন্ধি পুজো হয়। ১০৮ লাল পদ্ম উত্‍সর্গ করা হয় দুর্গার পায়ে। জ্বলে ওঠে ১০৮ প্রদীপ। মহাঅষ্টমী আর মহানবমী তিথির শুভ সন্ধিক্ষণে এই পুজো হয়ে থাকে। তিথির হিসেবে মহাঅষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও মহানবমীর প্রথম ২৪ মিনিট অর্থাৎ, এই ৪৮ মিনিটে সন্ধি পুজো করতে হয়।

মন্ত্রের অণুরণনে মুখরিত হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। পটকা, দামামা, শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বাদ্যি, উলুধ্বনি, ঘন্টা সব মিলিয়ে শব্দের স্রোত যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায় চারপাশ। মন্ত্রোচ্চারণ আর ১০৮ প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে দুর্গার ঘামতেলযুক্ত মুখমন্ডল। অষ্টমীতিথির বিদায় আর নবমীর আগমনে এই সন্ধি পুজা সনাতনী ধর্ম মতে খুব মাহাত্ম্য রয়েছে।

পুরাণ অনুসারে, দেবী দুর্গা নাকি এই দুই তিথির মিলনক্ষণেই আবির্ভূতা হন দেবী চামুন্ডারূপে। পুরাণমতে চন্ড এবং মুন্ড নামক দুই ভয়ানক অসুরকে তিনি এই সন্ধিক্ষণে বধ করেছিলেন। অন্যদিকে রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করার জন্য আশ্বিনমাসে রামচন্দ্রের অকালবোধনের যে উল্লেখ পাওয়া যায় কৃত্তিবাসের রামায়ণে, সেখানেও রামচন্দ্র সন্ধি পূজা সমাপন কালে দেবীর চরণে ১০৮ পদ্ম নিবেদন করার আশায় হনুমানকে দেবীদহ থেকে ১০৮টি পদ্মফুল তুলে আনতে বলেন। হনুমান ১০৭টি পদ্ম পান। দেবীদহে আর পদ্ম ছিল না।

দেবীদহে একটি পদ্ম কম ছিল। তার কারণ হিসেবে কথিত আছে , দীর্ঘদিন অসুর নিধন যজ্ঞে মা দুর্গার ক্ষত বিক্ষত দেহের অসহ্য জ্বালা দেখে মহাদেব কাতর হন। মায়ের সারা শরীরে একশো আটটি স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। মহাদেব তাঁকে দেবীদহে স্নান করতে বললেন সেই জ্বালা জুড়ানোর জন্য। দেবীদহে মায়ের অবতরণে একশো সাতটি ক্ষত থেকে সৃষ্টি হয়েছিল একশো সাতটি পদ্মের। মহাদেব দুর্গার এই জ্বালা সহ্য করতে না পারায় তাঁর চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু নিক্ষিপ্ত হয় মায়ের একশো আটতম ক্ষতের ওপর। দেবীদহে স্নানকালে সেই অশ্রুসিক্ত ক্ষতটির থেকে যে পদ্মটি জন্ম নিয়েছিল সেটি মা নিজে হরণ করেছিলেন। কারণ স্বামীর অশ্রুসিক্ত পদ্মফুলটি কেমন করে তিনি চরণে নেবেন।

আরও পড়ুন: ‘আমার সমস্ত পাণ্ডুলিপি, গান,রচনা, যেন ধ্বংস করা হয়’, নিজের ইচ্ছাপত্র পোস্ট করলেন কবীর সুমন

আবার কৃত্তিবাসের রামায়নে পাওয়া যায়, রাবণ নিধন যজ্ঞের প্রাক্কালে রামচন্দ্র বলছেন “যুগল নয়ন মোর ফুল্ল নীলোত্পল সংকল্প করিব পূর্ণ বুঝিয়ে সকল ।। একচক্ষু দিব আমি দেবীর চরণে ” রাম ধনুর্বাণ নিয়ে যখন নিজের নীলোত্পল সদৃশ একটি চক্ষু উত্পাটন করতে উদ্যত তখন দেবী রামচন্দ্রের হাত ধরে তাঁকে নিবৃত্ত করে বলেন “অকালবোধনে পূজা কৈলে তুমি, দশভুজা বিধিমতে করিলা বিন্যাস। লোকে জানাবার জন্য আমারে করিতে ধন্য অবনীতে করিলে প্রকাশ। রাবণে ছাড়িনু আমি, বিনাশ করহ তুমি এত বলি হৈলা অন্তর্ধান”