হটকারি হবে না তো লোকাল ট্রেন চালানো! নানা আশঙ্কায় সব মহল

0
1

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে কলকাতা মেট্রো। ভাইরাস সংক্রমণের জেরে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে বন্ধ মেট্রো। এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠছে কবে চালু হবে লোকাল ট্রেন? চালু হলেই বা কীভাবে মানা হবে স্বাস্থ্যবিধি? দেশে যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তাতে লোকাল ট্রেন চালানো হিতে বিপরীত হবে না তো? এই প্রশ্নগুলি ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ থেকে সরকারের মনে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, লোকাল ট্রেন চালানো শুরু হলে সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়বে।

অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর বলেন, “শিয়ালদহ, হাওড়া এবং খড়গপুর ডিভিশনে গড়ে ২৫ লক্ষ থেকে ২৭ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। ট্রেন চালানোর আগে, দেখতে হবে এই বিপুলসংখ্যক যাত্রীর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে কত জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। একই সঙ্গে দেখতে হবে কতগুলি ট্রেন চালানো হবে।” স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন চালাতে গেলে যাত্রী কাটছাঁট করা বাধ্যতামূলক মনে করছেন তিনি। সেটা না করলে সংক্রমণের মাত্রা বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে প্রাক্তন রেলকর্তা। তাঁর কথায়, “সব ট্রেনকে শিয়ালদহ বা হাওড়া পর্যন্ত চালানোর প্রয়োজন আছে কিনা সেটাও পর্যালোচনা করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিধাননগর স্টেশনে অনেক যাত্রী নেমে যান। সেক্ষেত্রে সেই ট্রেন বালিগঞ্জে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ যাত্রীই কলকাতাকেন্দ্রিক।”

চিকিৎসক ধৃতিমান মৈত্রর মতে, “মেট্রো স্টেশনগুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ। মেট্রো স্টেশনে চেকিং এর ব্যবস্থা থাকে। সেই পরিকাঠামো লোকাল ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে নেই। এই পরিস্থিতিতে লোকাল ট্রেন চালানো বিপজ্জনক হবে।” লোকাল ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে রাজ্যে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় সাধারণ মানুষের যাতায়াত অনেক সহজ হবে। ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি। তাঁর কথায়, লোকাল ট্রেনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না সেটা পর্যালোচনা করতে হবে। সেই পর্যালোচনা জন্য পরিকাঠামো আছে কি না সেটাও দেখা প্রয়োজন।

এই বিষয়ে আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী বলেন, “লোকাল ট্রেনের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। খুব স্বাভাবিক ভাবেই লোকাল ট্রেন চালু হলে সংক্রমণ আরও বাড়বে। কে সংক্রমিত হয়েছেন, আর কে হননি তা বোঝার উপায় নেই। শুধুমাত্র থার্মাল গান দিয়ে সংক্রমিত কি না বোঝা যায় না।” আবার অন্যদিকে মফস্বলের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর কথায়, “লোকাল ট্রেনের উপর অনেকের জীবিকা নির্ভর করে। অর্থনৈতিক দিক থেকে চরম সংকটের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা।” লোকাল ট্রেন চালাতে গেলে আরও বেশি সংখ্যক ট্রেন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। একইসঙ্গে গ্যালোপিং ট্রেন চালানো হলে কিছুটা হলেও সুরাহা হবে বলে মনে করছেন অয়ন চক্রবর্তী।

এই বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়া ডোনা রায় বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় যাতায়াত পুরোটাই ট্রেনের উপর নির্ভরশীল। আপাতত বাড়িতে অনলাইন ক্লাস চলছে। কিন্তু ট্রেন চালু হলে যদি প্রাইভেট টিউশনে যেতে হয় সেক্ষেত্রে সংক্রমণের ভয় থেকেই যাচ্ছে। ফলে ট্রেন চললে যেমন যাতায়াতের সুবিধা হবে, তেমনই আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হবেন।” এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী বলেন, “ট্রেন চলছে না বলে বাড়িতে বসেই কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু লোকাল ট্রেন শুরু হলে অফিস যেতে হতে পারে। লোকাল ট্রেনের যে ছবি দেখে আমরা অভ্যস্ত, তেমনটাই যদি হয় তাহলে সংক্রমণের সংখ্যা আরও বাড়বে।”

গত ৩৮ দিনের নিরিখে দৈনিক সংক্রমণে সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম ভারত। প্রতিদিন প্রায় ৯৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। রাজ্যে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজারের আশেপাশে। এই আবহে লোকাল ট্রেন চালানো কতটা যুক্তিযুক্ত সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আবার অন্যদিকে গত ছয় মাস ধরে বন্ধ লোকাল ট্রেনের চাকা। লোকাল ট্রেনের উপর জীবিকা নির্ভর করে এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, প্রবল টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে সরকারও। লোকাল ট্রেন চালালে পরবর্তীকালে কী হবে তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

আরও পড়ুন-বিজেপির পাখির চোখ বিহার নির্বাচন, পেট্রোলিয়াম সেক্টরে তিন প্রকল্পের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর