
পস্তাচ্ছে এবার সিপিএম। সাসপেন্ড করে এবার সাসপেনশন তোলার তোড়জোড় শুরু করে করে দিল বাংলার ৩৪ বছরের শাসকদল।
দলের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং এক সময়ে গড়বেতা অঞ্চলের ডাকাবুকো নেতা সুশান্ত ঘোষকে সাসপেন্ড করেছে সিপিএম। তিন মাসের সাসপেনশন। কিন্তু ঘটনার ৭২ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই দলের নেতৃত্ব বুঝেছে আলিমুদ্দিনের ঠাণ্ডা ঘরে বসে যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন, সুশান্ত ঘোষ যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং রক্তক্ষরণের এই সময়ে তাকে সাসপেন্ড করা মোটেই ভাল চোখে নিচ্ছেন না বাম কর্মী-সমর্থকরা। আর তাই মুখ রক্ষা করে কী করে তাকে তিন মাসের আগেই ফেরানো যায়, তার চেষ্টা শীর্ষ মহলে শুরু হয়ে গিয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরে সুশান্ত ঘোষের জনপ্রিয়তা যে এখনও অনেকটাই রয়েছে, তা বুঝতে পেরেছেন দলীয় নেতৃত্ব। তা সে যতই তাকে কঙ্কাল কাণ্ডে জড়ানো হোক না কেন, পার্টি কর্মীরা জানেন সুশান্তকে এই ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে। সাসপেনশনের পরেই গড়বেতা সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাম কর্মী-সমর্থকরা কার্যত প্রকাশ্যে এই সিদ্ধান্তের প্রবল সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলছেন, এটা আসলে পার্টির হারিকিরি। এই অসময়ে মানুষ যখন বামেদের থেকে সরে আসছেন তখন সুশান্তের মতো তৃণমূল নেতাকে প্রয়োজন ছিল। অথচ তাঁকে সংগঠনের জটিল আবর্তে ফেলে দু’বছর আগের লেখা বইকে শিখণ্ডী করে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে দলের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে, তাতে দলের মধ্যেই নতুন করে ‘বৃদ্ধ’ নেতাদের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর জোরালো হচ্ছে। একুশের ভোটের আগে যাতে এই কণ্ঠস্বরকে আপাতত ধামাচাপা দিয়ে রেখে সুশান্তকে তিন মাসের আগেই যাতে সসম্মানে দলে ফিরিয়ে আনা যায় তার রাস্তা খুঁজছেন বিমান-সূর্য-সেলিমরা।
দলের মধ্যে সুশান্তকে কোণঠাসা করতে একটা সময় জেলবন্দি সুশান্তের সঙ্গে পার্টি প্রায় সম্পর্কচ্ছেদ করেছিল। তবু সুশান্ত দল ছাড়েননি। শুধু তাই নয় সাসপেনশনের পরও তিনি গর্বিত ভঙ্গিতে একটি কথাই বলেছেন, নীতি ও আদর্শ কোনও সাসপেনশনের সৌজন্যে বিক্রি করা যায় না। ওটাই একমাত্র নিজের। ওটা কেড়ে নেওয়া যায় না। দলের তরফে নানা সময়ে বহু অভিযোগ তোলার চেষ্টা হয়েছে সুশান্তর বিরুদ্ধে। কখনও আর্থিক দুর্নীতি তো কখনও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। আবার কখনও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তো আবার কখনও শত্রু শিবিরে হাত মেলানোর অভিযোগ। কিন্তু সুশান্তর লেখা বই ছাড়া কোনও কিছুরই প্রামাণ্য তথ্য ছিল না সিপিএমের কাছে। কেন সমালোচনা করেছেন ‘বামফ্রন্ট জমানার শেষ দশ বছর’ বইয়ে, তার জবাবও দিয়েছেন কমিশনে। কোন মানসিক অবস্থায় তিনি লিখেছিলেন, তা পরিষ্কারও করেন। কমিশনের দুই সদস্য তাঁর যুক্তি মেনে নিয়ে স্বীকার করেন, পরিস্থিতি জটিল ছিল। তাঁরা কড়া ব্যবস্থা না নেওয়ার সুপারিশও করেন। ফলে বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে দলের বিরুদ্ধ লবিকে।
তবু যারা ভোটে জেতাতে পারে না। বিরুদ্ধ দলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে লড়াই করতে পারেন না। কমরেডদের সুখে-দুঃখে থাকতে পারেন না, তারাই এখন দলে ভারী। তারা দলকে ডোবাচ্ছেন, সমালোচনা করলেই শ্রেণিশত্রু তকমা দিয়ে দল থেকে পুরনো লোকজনকে তাড়াচ্ছেন। আসলে পুরনো পুষে রাখা হিংসে আর রাগ মেটাচ্ছেন! তাই তিনি সাইড লাইনের বাইরে।
সুশান্ত বলছেন, নীতি ও আদর্শের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা যায়। কিন্তু কোনও কিছুর জন্য নীতি-আদর্শ ত্যাগ করা যায় না।
আরও পড়ুন- করোনা-যুদ্ধের সরঞ্জাম ক্রয় স্বচ্ছতার সঙ্গেই, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট

































































































































