সিপিএমের পক্ককেশী নেতার একটা ভুল স্ট্রোক। আর সেই সুযোগের বাজিমাত নতুন প্রজন্মের প্রাক্তন বাম নেতার। যাকে বলে ক্লিন বোল্ড! সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা পোস্ট, তার পাল্টা পোস্ট, সমালোচনাও স্বপ্নে বিভোর সুজন চক্রবর্তীকে কার্যত টেনে-হিঁচড়ে মাটিতে নামালেন বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে পা রাখা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়!
তথ্য-পরিসংখ্যান বলছে, মাইক্রোসফটের এক রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের ৬৪% মানুষ ভুয়ো খবরের পাল্লায়! শুধু তাই নয়, গোটা বিশ্বের মধ্যে ভারতেই সবচেয়ে বেশি ভুয়ো খবরের রমরমা। এবং অদ্ভুতভাবে মানুষ সাময়িক সময়ের জন্য সেই ভুয়ো খবরেই বিশ্বাসী। আর ভুয়ো খবরের রমরমা সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক মহলে। কিছু একটা হলেই হলো। মাতামাতি শুরু। আমফানের থেকেও সে সাইক্লোনের গতি বেশি! খুব স্বাভাবিকভাবে সমাজে যার বিরূপ প্রতিক্রিয়াও পড়তে বাধ্য। মুহূর্তে উত্তপ্ত হয় দেশ তথা রাজ্যের রাজনীতিও।
এবার সেই উত্তাপের কাজটা দাবানলের মতো ছড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন যাদবপুরের সিপিএম বিধায়ক তথা বিধানসভায় বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণ হতে গিয়ে কার্যত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিলেন অভিজ্ঞ এই সিপিএম নেতা। এত ঘটনায় তাঁর রাজনৈতিক পরিপক্কতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আর সুজনকে ক্লিন বোল্ড করার দায়িত্ব নিয়েছে একদা তাঁরই দলের সম্ভাবনাময় নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সুজন চক্রবর্তীকে তুলোধনা করতে সিপিএম-কে একহাত নিলেন রাজ্যসভায় বামেদের প্রাক্তন সাংসদ তথা বর্তমানে তৃণমূল নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নিশানায় বাম পরিষদীয় নেতা ড. সুজন চক্রবর্তী। সিপিএম বিধায়কের একটি টুইটকে হাতিয়ার করেই বাম নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন ঋতব্রত।
সস্তায় প্রচার পাওয়ার তাগিদে স্থান-কাল-পাত্র বিচার না করে দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি পোস্ট করেন সুজনবাবু। পরে তা বিলকুল ভুয়ো প্রমাণিত হয়। ভুয়ো প্রমান করেন ঋতব্রত। যেখানে অতিবৃষ্টিতে বেহাল এক রাস্তার একটি ছবি সম্প্রতি টুইট করেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। ছবিতে রাস্তা জুড়ে তৈরি হওয়া ছোট-বড় গর্ত দেখা যাচ্ছে। তাতে বৃষ্টির জল ভরে গিয়েছে। ওই গর্তই অনেকটা ভারতের মানচিত্রের মতো দেখতে লাগছে। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, “সব ক্ষেত্রেই বাংলার অবস্থা করুণ। জরাজীর্ণ রাস্তার অবস্থা।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইটার অ্যাকাউন্টকে ট্যাগ করে অতি উৎসাহী বাম নেতার প্রশ্ন ছিল, “ভারতের মানচিত্রের আদলে রাস্তার গর্তই তার সাক্ষী! তাই নয় কি?”

সুজন চক্রবর্তীর এই টুইটকেই হাতিয়ার করে পালটা তোপ দেগেছেন তৃণমূল নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে সুজনকে নিশানা করে তিনি বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলার সিপিএম কর্মীরা যে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, তা অজানা নয়। তবে আপনিও বিজেপি নেতাদের মতো অসত্য খবর এবং ভুয়ো তথ্য ছড়াবেন, এটা আশা করিনি। অত্যন্ত আশাহত।”
আরও পড়ুন- এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না, চিনের হুঙ্কারের পর পাল্টা দিল ভারতও

সুজন চক্রবর্তীর টুইট যে ভুয়ো তার প্রমাণে শিল্পপতি আনন্দ মহিন্দ্রার একটি টুইট শেয়ার করেছেন ঋতব্রত। দু’বছর পুরনো ওই টুইটে একই ছবি পোস্ট করেছিলেন মহিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান। সেই টুইট থেকেই ছবিটি যে মহারাষ্ট্রের থানে জেলার ভিওয়ান্ডি শহরের, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন ঋতব্রত!

এছাড়াও ছবিটি গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খুঁজে দেখলে ২০১৮ সালের “Indiatimes”- এর একটি নিউজ রিপোর্ট পাওয়া যাবে। যেখানে ছবির উৎস সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শিল্পপতি আনন্দ মহিন্দ্রার টুইটেও স্পষ্ট করে সেই উল্লেখ রয়েছে।
এই বিষয়ে প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যয় বলেন, “একটা সময় আমিও এই দলটি অন্তর থেকে করতাম। তবে এখন বামেদের এই অবস্থা হবে আশা করিনি।”
প্রসঙ্গত, এর আগেও টুইটে সুজন চক্রবর্তীকে নিশানা করেছেন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। লকডাউনের সময় শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ এনে টুইট করেছিলেন বাম পরিষদীয় নেতা। যার সমালোচনা করে “সংকটের সময়ে রাজনীতি”র অভিযোগ করেছিলেন ঋতব্রত! ফের তথ্য-প্রমাণ সহ তোপ দাগলেন তিনি।

আরও পড়ুন- “ময়ূর-ভিডিও পোস্ট না করে বেকারদের কথা ভাবুন”, মোদিকে বিঁধলেন নুসরত





 
 
 
























































































































