অতিমারী ভাইরাস সংক্রান্ত একটি চিঠি আপাতত ভাইরাল। সত্যতা যাচাই সম্ভব হয়নি। কিন্তু মূল বিষয়টি সকলের ভাবনার যোগ্য। এই চিঠির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কারুর কোনো বক্তব্য থাকলেও পাঠাতে পারেন।
চিঠিটি তুলে ধরা হল:
শ্রী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
প্রিয় সুজয়বাবু,
দ্বারোন্দার গ্রামবাসীদের পক্ষে আপনাকে এই চিঠি লিখছি।
আপনি আমাকে চিনবেননা। আমি বিশ্বভারতীর সংগীতভবনের প্রাক্তন ছাত্র। আমি শান্তিনিকেতনের অদূরে দ্বারোন্দা গ্রামের সেই উপাসনা রিসোর্টের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে বসবাস করি, যে রিসোর্টে
কয়েকদিন আগে কলকাতা থেকে প্রায় ছয় জনের একটা দল নিয়ে আপনি এলেন, ঘরোয়া অনুষ্ঠান করলেন, শান্তিনিকেতনের প্রিয়ম, ঋতপা এবং এক এস্রাজ শিল্পীকে রিসোর্টে নিয়ে এলেন। তারপর আপনার করোনা ধরা পড়ল, প্রিয়ম এবং ঋতপারও করোনা হয়েছে দেখা গেল। প্রিয়মের উদ্যোগে প্রায় ১০০ জনেরও বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা করতে হলো। হয়ত আরও হবে ।
আপনি কলকাতা থেকে ছয় জনের সঙ্গে আমাদের গ্রামে এসে সাতদিনের কোয়ারেন্টাইনে না থেকে শান্তিনিকেতনেও ঘুরে আসেন, হয়ত শান্তিনিকেতনকে ভালোবাসেন বলেই।
ভালো কথা যে আমাদের গ্রাম থেকে ফিরে করোনা ধরা পড়ার পর আপনি কলকাতার ভালো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাবার সুযোগ পেয়েছেন এবং ফেসবুকে একটা ইংরেজি পোস্ট দিয়ে জানিয়ে দিতে পেরেছেন যে বিগত কিছু দিনে আপনার সংস্রবে আসা সকলে যেন যা করনীয় তা করে। কিন্তু আপনি অন্তত দারোন্দা আর শান্তিনিকেতনে নির্দিষ্টভাবে কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করেছিলেন, আপনার সংস্রবে আসা কাদের করোনা পরীক্ষা করানো দরকার তা আপনি স্পষ্টভাবে জানালে অনেকের উপকার হতো।
আপনার রিসোর্টে গান গেয়ে আসার পর প্রিয়ম এবং ঋতপার করোনা ধরা পড়ে। প্রিয়ম আমার সহপাঠী।এখন তাঁদের মাধ্যমে শান্তিনিকেতনে আরও বহু মানুষের
করোনায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আপনার এবং প্রিয়মের পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে আপনারা নিজেদের বৃত্তের পরিচিতজনেদের করোনা পরীক্ষা করে নিজেদের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু দুঃখের এবং ভীষণ চিন্তার বিষয় এটাই, যে গ্রামের রিসোর্টে এসে চারটে ঘরে দিনকয়েক আপনারা কাটিয়ে গেলেন সেই রিসোর্টের অভাবী, ফেসবুক-না-থাকা, ইংরেজি-না-জানা, দ্বারোন্দা এবং পাশের একটি
গ্রাম থেকে এসে আপনাদের সেবা করা কর্মীদের ঘটনাটা জানিয়ে তাঁদের একবার সচেতন করে দেবার কথাটা কিন্তু আপনারা কেউই ভাবলেননা। তাঁরা প্রান্তিক মানুষ বলেই কি? এমনকী আমাদের গ্রামের যে ড্রাইভার আপনাদের তিনজনকে গ্রামের একটি গাড়ি করে শান্তিনিকেতনের সুবর্ণরেখায় নিয়ে যান, তিনিও জানলেননা যে তিনি দুদিন আগে যাঁদের তিনি গাড়িতে চাপিয়েছিলেন তাঁদেরই কারও করোনা হয়েছে। ওই গাড়ি অনেকে এখনও না
জেনে ব্যবহার করছে।আপনি নিশ্চয় একমত হবেন যে
আমাদের মতো অনেকের চূড়ান্ত দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার জন্য এই রোগ আজ মহামারীর আকার নিয়েছে।যে গ্রামকে করোনার কবল থেকে এতদিন আমরা আগলে রেখেছিলাম সেই গ্রামে করোনার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যাইহোক, আমরা গ্রামবাসীরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।
যাঁরা আমাদের গ্রামকে সতর্ক করে গত কয়েকদিনে আপনার এবং কলকাতা থেকে আগত আপনার বন্ধুদের সংস্রবে আসা আমাদের এবং সংলগ্ন গ্রামের মানুষদের চিহ্নিত করে করোনা পরীক্ষার দরকারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইল।বীরভূম জেলায় করোনা প্রতিরোধে জেলা পুলিশ খুব ভালো কাজ করছেন। এবিষয়েও তাঁরা প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে আবার আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন।
আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন।
পার্থ গুপ্ত
থিয়েটার কটেজ
দ্বারোন্দা