ভ্যাম্পায়ারের কথা তো এর আগেও শুনেছি আমরা। কিন্তু এই প্রাণীর কাণ্ডকারখানা জানলে আপনিও অবাক হবেন। সারাদিন অন্ধকার স্থানে ঘুমায় আর রাত হলেই শিকার ধরে তার রক্ত চুষে খায়। আর এই ভ্যাম্পায়ার দেখতে অবিকল বাদুড়ের মতো । একে অধিকাংশই রক্তচোষা বাদুড় নামে চেনেন। মূলত তিন প্রজাতির বাদুড়কে সাধারণভাবে ভ্যাম্পায়ার ব্যাট বলা হয়। কারণ, এরাই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যারা খাদ্য হিসেবে শুধুমাত্র জীবিত প্রাণীর উষ্ণ রক্ত পান করে। এই তিন প্রজাতির বাদুড়ের সঙ্গে অন্যান্য বাদুড়ের খুব কমই মিল আছে। প্রাণিবিদ্যা বলছেন, এই রক্তখেকো প্রাণীদের বিবর্তন একবারই হয়েছিল এবং তারা সবাই একটি সাধারণ পূর্ব পুরুষ থেকেই এসেছে।
নিশ্চয়ই ভাবছেন আপনার আশপাশেও কি থাকতে পারে এমন বাদুড়? ভয় পাবেন না,
তাদের শুধুমাত্র উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়। এই বাদুড়ের নাক চ্যাপ্টা, তাতে ‘ইউ’ আকৃতির খাঁজ রয়েছে। নাকে একটি বিশেষ তাপ সংবেদী অঙ্গ রয়েছে যার মাধ্যমে শিকারের একদম চামড়ার কাছে কোথায় রক্তের স্রোত বইছে তা খুঁজে বের করতে এদের জুড়ি নেই। এছাড়াও, তাদের মস্তিষ্কে একটি ইনফ্রারেড রিসেপ্টর পাওয়া গিয়েছে, যা সাপের সংবেদী অঙ্গের মত একই জায়গায় থাকে এবং অন্ধকারে শিকারের অবস্থান বুঝতে পারে। ভ্যাম্পায়ার ব্যাট সাধারণত ঘুমন্ত প্রাণীর রক্ত খেয়ে থাকে। তারা ধারালো দাঁত দিয়ে প্রথমে শিকারের চামড়ায় একটি ফুটো করে। সেই ফুটো থেকে রক্ত পরা শুরু করলে জিভ দিয়ে চেটে চেটে খায়। রক্ত খাওয়ার সময় বাদুড়ের মুখ থেকে একধরনের লালা বের হয়, ফলে রক্ত জমাট না বেঁধে একটানা বের হতে থাকে। ভ্যাম্পায়ার ব্যাট প্রায় তিরিশ মিনিট পর্যন্ত একটানা রক্ত খেতে পারে কিন্তু শিকার একদমই টের পায় না।
বাদুড় যে পরিমাণ রক্ত খায় তাতে শিকারের কোন ক্ষতি হয় না ঠিকই, তবে বাদুড়ের কামড় থেকে ইনফেকশন বা অন্যান্য রোগ হতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, ১০০টি বাদুড়ের একটি কলোনি বছরে প্রায় ২৫টি গরুর রক্তের সমান রক্ত খেয়ে থাকে। তারা সাধারণত গরু, ছাগল, ঘোড়া, শুকর ইত্যাদি প্রাণীর রক্ত খায়। তবে সুযোগ পেলে মানুষের রক্তও খায়।
শিশু বাদুড় রক্তে জন্ম নেওয়া এক ধরনের ভাইরাস, ‘এন্ডোজেনাস রেট্রোভাইরাসের’ বিরুদ্ধে তাদের শরীরে বেশ শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে। এই ভাইরাস তাদের জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালের কপি হোস্টের জিনোমে ঢুকিয়ে দেয়।
অন্যান্য বাদুড় প্রজাতি যেখানে মাটিতে হাঁটা একদম ভুলেই গেছে সেখানে ভ্যাম্পায়ার বাদুড় খুব ভালোভাবে মাটিতে হাঁটতে, লাফাতে এমনকি দৌড়াতেও পারে। এজন্য তারা পিছনের পায়ের চেয়ে বেশি সামনের ডানার উপরে নির্ভরশীল। আইইউসিএন (IUCN) আসলে ভ্যাম্পায়ার বাদুড় অন্যান্য বাদুড়ের মতই নিরীহ একটি প্রাণী। শুধুমাত্র খাদ্যের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনও কারণে তারা কারও ক্ষতি করে না।
Sign in
Welcome! Log into your account
Forgot your password? Get help
Password recovery
Recover your password
A password will be e-mailed to you.