আদালত অবমাননা মামলায় প্রশান্ত ভূষণের শাস্তি ঘোষণা আজ, দেশজুড়ে প্রতিবাদ

0
1

আদালত অবমাননার মামলায় আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে গত ১৪ আগস্ট দোষী সাব্যস্ত করেছে শীর্ষ আদালত৷ আজ, বৃহস্পতিবার, এই মামলার সাজা শোনানোর কথা। প্রশান্ত ভূষণের
দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং আজ তাঁর শাস্তি ঘোষণা নিয়ে উত্তাল গোটা দেশের আইনি মহল৷ উঠে এসেছে একাধিক অভিমত৷

প্রশান্ত ভূষণের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ফৌজদারি অপরাধের মামলার শুনানি সাংবিধানিক বেঞ্চের সামনে হওয়া উচিত বলে মতপ্রকাশ করলেন শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ। কুরিয়েন বলেছেন, পাশাপাশি, তাঁর বক্তব্য, শীর্ষ আদালতের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করা আদালত অবমাননার একটি মামলায় প্রশান্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও তাঁকে আর্জি জানানোর সুযোগ দেওয়া উচিত।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফের বক্তব্য, প্রশান্ত ভূষণের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাকে ঘিরে অনেক আইনি প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের উপরেও যার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। ফলে শুনানি সাংবিধানিক বেঞ্চেই হওয়া দরকার। কারণ, সাংবিধানিক ব্যাখার বিষয়টি যদি সামনে চলে আসে, সে ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫ জন বিচারপতির বেঞ্চে মামলা আসা জরুরি। প্রাক্তন বিচারপতি জোসেফের মতে, আদালত অবমাননার এই মামলাগুলিতে শুধু দুই-একজন ব্যক্তির বিষয় জড়িয়ে নেই, বরং বিচারব্যবস্থার আরও বৃহত্তর বিষয় এর সঙ্গে জড়ানো। হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন সিএস কারনানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি যুক্তি দিয়েছেন, সেই সময়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সকলেরই মত ছিল, অন্তত ৭ সদস্যের বেঞ্চের সামনে মামলার শুনানি হওয়া উচিত।

বার অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া বলেছে, সমালোচনার সুযোগ দিলে সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদাহানি হবে না, বরং আরও বাড়বে। এদিকে প্রশান্ত ভূষণের দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং আজ তাঁর শাস্তি ঘোষণা নিয়ে উত্তাল গোটা দেশের আইনি মহল৷

দেশের প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি আইনজীবী শীর্ষ আদালতের কাছে আবেদন জানিয়ে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে দোষী সাব্যস্ত করায় বিচারব‍্যবস্থার প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ এই প্রতিবাদী আইনজীবীদের প্রশ্ন, “বিচার ব‍্যবস্থার ভুল নীতিগুলো প্রতিরোধ করতে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের পথ কেমন হবে?”
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন শ্রীরাম পাঁচু, অরবিন্দ দাতার, শ্যাম দিবান, মেনাকা গুরু-স্বামী, রাজু রামচন্দ্রন, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, নরোজ সেরভাই, জনক দ্বারকাদাস, ইকবাল চাগলা, দারিয়াস খাম্বাটা, বৃন্দা গ্রোভার, মিহির দেশাই, কামিনী জয়সওয়াল ও করুণা নন্দী প্রমুখ।
আইনজীবীদের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই রায় জনগণের কাছে আদালতের কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করছে না। বরং আইনজীবীদের স্পষ্টবাদী হতে নিরুৎসাহিত করবে। বিচারকদের কন্ঠ রোধ করার দিন থেকে এবং তার পরবর্তী দিনগুলিতে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রথম এগিয়ে এসেছিল বার কমিটিই। নীরব বার কমিটি কখনোই একটি শক্তিশালী আদালতের নেতৃত্ব দিতে পারে না।” বিবৃতিতে আইনজীবীরা বলেন, “স্বাধীন বিচার ব‍্যবস্থার অর্থ এই নয় যে বিচারকদের কাজের পদ্ধতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। কাজের মধ্যে কোনো ত্রুটি থাকলে তা জনসাধারণ ও বিচারকদের সামনে আনা আইনজীবীদের কর্তব্য। প্রশান্ত ভূষণের করা ট‍্যুইটের বিষয়বস্তু নিয়ে আমাদের মধ‍্যে ভিন্ন মতামত থাকতেই পারে কিন্তু আমরা সবাই জোর গলায় বলতে পারি আদালত অবমাননা করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না।”

উল্টোদিকে, আদালত অবমাননার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশান্তকে দোষী সাব্যস্ত করার পরে শীর্ষ আদালতের রায়ের সমালোচনা যাঁরা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন বিচারপতি ও প্রাক্তন আমলাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, সুযোগ পেলেই কেউ কেউ নাগরিক সমাজের নাম করে সুপ্রিম কোর্ট, সংসদ কিংবা নির্বাচন কমিশনের মতো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির শিকড়ে আঘাত করতে নেমে পড়েন। এই বিষয় নিয়ে সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছিলেন তাঁরা। প্রায় ১০০ জন স্বাক্ষরকারীর মধ্যে রয়েছেন বম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কে আর ব্যাস, সিকিম হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি প্রমোদ কোহলিরা।

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সুপারবাইকে চড়া এক ছবি সম্পর্কে ট‍্যুইটারে মন্তব্য করেছিলেন প্রশান্ত ভূষণ। বিচারপতির মাথায় হেলমেট না থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় এক ট‍্যুইটে শীর্ষ আদালতের কাজের পদ্ধতি নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। প্রশান্ত ভূষণের করা এই দুটি ট‍্যুইটকে কেন্দ্র করে তাঁর বিরুদ্ধে সুয়োমটো আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠে। গত ১৪ আগস্ট তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারপতি অরুণ মিশ্র, বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারিকে নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ। আজ ২০ আগস্ট এই মামলার শাস্তি ঘোষণার কথা৷