৩৫ বছর পরেও অধরা মহুয়ার মৃত্যু-রহস্য

0
2

৪০ বছর আগে যেমন বাঙালির ম্যাটিনি আইডল চলে গিয়েছিলেন এই জুলাই মাসে, তার ঠিক পাঁচ বছর পর এই জুলাই মাসেই চলে গিয়েছেন সেই সময় বাংলা ছবির অত্যন্ত জনপ্রিয় নায়িকা এবং বাঙালি দর্শকের কাছে ‘ঘরের মেয়ে’ মহুয়া রায়চৌধুরী। বাইশে জুলাই পেরিয়ে গেল তাঁর প্রয়াণ দিবস। ৪০ বছর পরে উত্তমকুমারকে যেভাবে দর্শক মনে রেখেছেন, মহুয়ার স্মৃতি ততটা উজ্জ্বল নয়। কিন্তু আজও একটা প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে তা হল মহুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৩৫ বছর আগে মৃত্যু হয় বাংলা ছবির এই জনপ্রিয় নায়িকার। কিন্তু এখনও সেই রহস্যের সমাধান হয়নি।

তাঁর মৃত্যু নিয়ে বিভক্ত টলিউড। মহুয়ার খুব কাছের বন্ধু অভিনেত্রী রত্না ঘোষাল মনে করেন এটা আত্মহত্যাই। কারণ তাঁর মতে, মহুয়া রায়চৌধুরী ছিলেন অত্যন্ত জেদি এবং একগুঁয়ে প্রকৃতির। তাঁর “যখন যেটা চাই, তখন সেটা সেইমাত্রই চাই”- এমনই ছিলেন রত্নার বন্ধু মৌ। আর তিনি ছিলেন অ্যালকোহলিক। রত্নার কথায়, সামান্য টেনশনেও প্রচুর পরিমাণে মদ খেতেন মহুয়া। এবং মদ্যপানের পর তিনি একেবারে অন্য মানুষ। চেনা লোকেরাও তাঁকে তখন চিনতে পারতেন না।

তাঁর মৃত্যুর পরে উঠে এসেছিল দুর্ঘটনার তত্ত্বও। বলা হয়, ছেলের জন্য দুধ গরম করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। তারপরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ১০ দিন ৯০ শতাংশ ঝলসে যাওয়া শরীর নিয়ে তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করেছেন তিনি। জ্ঞান ছিল তাঁর। কিন্তু তাও সরাসরি কারও নামে কোন অভিযোগ করেননি। তিনি আর এর ফলেই রহস্য আরও বেড়ে যায়।
ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁকে মহুয়া মায়ের মতো শ্রদ্ধা করতেন সেই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায় অবশ্য এটিকে ‘খুন’ বলেই মনে করেন। তার মতে, মহুয়ার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে এক্ষেত্রে তাঁর স্বামী তিলক চক্রবর্তী নির্দোষ বলেই মত মাধবীর। তাঁর কথায় পরিবারের অন্যরা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। মাধবী মুখোপাধ্যায়ের ইঙ্গিত মহুয়ার শ্বশুর এবং খুড়শ্বশুরের দিকে। তাঁর কথায়, তৎকালীন কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক নাকি তাঁকে জানিয়েছিলেন, মহুয়ার মুখে টেপ লাগানো ছিল। এবং তিনি পিছন দিক থেকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মাধবী মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, কেউ যদি আত্মহত্যা করবে তাহলে তার শরীরের পিছনের অংশ পুড়ে যায় কী করে?
এই বিষয়ে সেভাবে কোনদিন মুখ খোলেননি ও মহুয়ার স্বামী তিলক চক্রবর্তী। এবছর ৮ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আর মহুয়ার পুত্র মিউজিক অ্যারেঞ্জার তমাল চক্রবর্তী এ বিষয়ে কোনদিন প্রকাশ্যে কোনো আলোচনায় জড়াননি। সত্যিই কী হয়েছিল সেই রাতে? কীভাবে বাংলা ছবির সেই ‘মিষ্টি মেয়ে’ আগুনে ঝলসে যান সে রহস্য এখনও অধরা।