Imp Tips: হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে কোভিড পজিটিভের কলম

অভিনব দত্তচৌধুরী

0
1

( করোনা পজিটিভ। ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। বয়স ৫০। কী চিকিৎসা, কী অভিজ্ঞতা, তাঁর নিজের লেখা হুবহু প্রকাশিত হল। নামটি শুধু ছদ্মনাম, তবে কাছাকাছি ।)

আমার চিকিৎসা ।
সবার সুবিধের জন্য লিপিবদ্ধ করলাম যাতে সবাই মনে একটু জোর পায়।

ILS দমদমে ভর্তি ছিলাম ডঃ পিনাকী দের আন্ডারে। ০৯/০৭ রাত ১১ টায় ভর্তি হই, জেনেরাল বেডে। ওখান থেকেই রিলিসড হই, ১৪/০৭। খরচ পড়েছে ৯৬০০০/-।যেহেতু এটা ন্যাশনাল ইন্সিওরেন্সের ক্যসলেসের টাই-আপ করা হাস্পাতাল, তাই এই রোগের জন্য জেনেরাল বেডের খরচ ফিক্সড। অবশ্য বেশিদিন থাকলে সেই হিসেবে খরচ বাড়বে।
আমি মাইল্ড টু স্লাইটলি মডারেট রেঞ্জের ছিলাম, আমার ৬ তারিখের পর আর জ্বর আসেনি, তাই আমাকে মাইল্ড ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছিল। আমার কোভিড টেস্ট হয় ৫/০৭ ও ০৭/০৭ সকালে আমার পসিটিভ রিপোর্ট আসে। আমি ডাঃ সিদ্ধার্থ চৌধুরীর আন্ডারে চিকিৎসা করাচ্ছিলাম। উনি আমাকে প্রথমে বাড়িতে রেখে চিকিৎসার কথা বলেন, সঙ্গে একটা পালস অক্সিমিটার ও বাড়িতে একটা অক্সিজেন সিলিণ্ডার রাখার কথা বলেন যা আমাদের বাল্যবন্ধু কিংশুক বাড়ি এসে দিয়ে যায় ও আমার স্ত্রীকে কিভাবে ওটা ব্যাবহার করতে হবে সেটা বুঝিয়ে দেয়।০৯/০৭ উনি আমাকে একটা থোরাক্সের সিটি স্ক্যান করতে বলেন সঙ্গে রক্তের কিছু পরীক্ষা তার মধ্যে ডি- ডাইমার, এছাড়া সোডিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদি ও ILS দমদম হাস্পাতালের ডাঃ পিনাকী দের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। ডাঃ পিনাকী দের ব্যাবস্থাপনায় আমাকে এম্বুলেন্স পাঠিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে এইসমস্ত টেস্টগুলো করানো হয়। কিন্তু সন্ধ্যেবেলা রিপোর্ট পেয়ে দুই ডাক্তারবাবু মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে সিটস্ক্যানের রিপোর্টে যেহেতু লাং ইনভলভমেন্ট রয়েছে, কাজেই কিছু চিকিৎসা যেটা এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসে দেওয়া সম্ভব নয় কাজেই ভর্তি হওয়াটা দরকার। সেইমত আমি ৯ তারিখ রাতেই ভর্তি হই ডাঃ পিনাকী দের আন্ডারে।
ওষুধ, মেইনলি স্টেরয়েড ইঞ্জেকসন, এন্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশান, ক্লেকশন ৪০ মিগ্রা ইঞ্জেকশন যাতে থ্রম্বসিস না হতে পারে। অক্সিজেন লেভেল কমলে অক্সিজেন দিতে হবে, যদিও আমার লাগেনি।তবে এরোগের এফেক্টে সুগার লেভেল এলিভেট করতে পারে তখন ইন্সুলিন ইঞ্জেকশন। এছাড়া ভিটামিন ডি সপ্তাহে একবার, ভিট সি, আর জিনকোভিট রোজ দুটো করে, আর এস্কোরিল সিরাপ ১০ মিলি তিনবার। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও খাইয়েছিল। প্রথমদিন ৪০০x২ বার, তারপর থেকে চারদিন ৪০০x ১ বার।
তবে এখন গভঃ রুল অনুযায়ী মাইল্ড পেশেন্টের রোগের ১০ দিন পর ও জ্বর না থাকলে, আর কোভিড টেস্ট না করেই ডিসচার্জ দেওয়া হচ্ছে সঙ্গে ৭ দিনের হোম আইসোলেশন। তারও ৭ দিন পর ডাক্তার দেখিয়ে তবে দৈনন্দিন জীবন।
এ এমন এক রোগ যে শরীরের অনেক কিছুকেই ভয়ানক দূর্বল করে দেয়।
খাওয়া-দাওয়া এই হাস্পাতালে সব ভেজ?? তবে ডাক্তারকে ম্যানেজ করতে পারলে ডিম পাওয়া যেতে পারে। আমি লাস্টে জানলাম।
এছাড়া লেবুর জল দিত, গরম জলে গার্গল আর স্টিম ইনহেলেশন দিনে ৪-৬ বার করে। আর স্পাইরোমিটার নামে একটা খেলনা(!) তাতে ফুঁ দিতে বা টানতে হয়।
৯০% আমার মত রুগীই ছিল।
আশা করি সবাইকে বোঝাতে পারলাম। এখন এই ৭ দিনের হোম আইসোলেশন টাও খুব সহজ নয়।
আর হাস্পাতালের নার্স – ডাক্তার- সাপোর্ট স্টাফ, নিচের রিসেপসনে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেগুলো কথা না বললেই নয়। হাসিমুখে সবার সব প্র‍য়োজন মেটাচ্ছে। আমি তো খুবই কনভিন্সড। বেশির ভাগ নার্স ও সাপোর্ট স্টাফেরা ত্রিপুরা, উড়িষ্যা থেকে এসে এখানে মেসে থেকে কি প্রচণ্ড লড়াই করছে চিন্তা করতে পারবেন না, বাঙালী ও আছেন, সঙ্গে RMO, এছাড়া ডায়েটেশিয়ান,ফ্লোর ম্যানেজাররা, জাস্ট ভাবা যায় না। এদের জন্য কিছু করা যায় কিনা, কুণাল কেএকটু ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। দুমাস আগেও এই মেয়েগুলোর বাজার বন্ধ করে দিয়েছিল পাড়ার লোকজন। আজ আমি যে মোটামুটি বিপদমুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছি তারজন্য যেমন আমার ডাক্তার- হাস্পাতাল- বন্ধুদের শুভেচ্ছা ও উদ্যোগ, আমার স্ত্রী দীপান্বিতা র অক্লান্ত পরিশ্রম সেবা ও সহ্য ক্ষমতা যে নিজের অসুস্থতার পরোয়া না করে আমার দেখভাল করে যাচ্ছে তাকেও কুর্নিশ জানাই। আমাকে এখনো ১৪ দিন এই লড়াইটা লড়তে হবে। দেখি মঙ্গলময়ের কি ইচ্ছা। ধন্যবাদ সবাইকে।