
চন্দননগরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দেবদত্তা রায়। কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। প্রশ্ন উঠেছে দেবদত্তাকে কেন কলকাতার কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা গেল না! কোভিডের বিরুদ্ধে যাঁরা যুদ্ধ করছেন, মানুষের পাশে থাকছেন, নিশ্চিতভাবে দেবদত্তা তাদের অন্যতম, ফ্রন্ট লাইন ওয়ারিওর। তাহলে কেন আক্রান্ত হওয়ার শুরুতেই তাঁর জন্য কোভিড হাসপাতালের একটি বেড জুটল না!
দেবদত্তার বাড়ি দমদমের লিচুবাগানে। তাঁর সঙ্গে স্বামীও করোনায় আক্রান্ত হন। প্রথমে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন বারাকপুরে। অবস্থা খারাপ হওয়ায় শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে আনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়। কেন তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম কিংবা বেলেঘাটা আইডিতে ভর্তি করা গেল না! কেন রাজ্যের একজন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাকে সেরা চিকিৎসা দেওয়া গেল না! পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা শাসকের দফতরে অনুরোধও গিয়েছিল বলে খবর। কিন্তু বেড মেলেনি। দেবদত্তাকে একটু ভাল চিকিৎসা দেওয়া যায়নি।
এখানেই প্রশ্ন, রাজ্য সরকার প্রত্যেকদিন ঢাকঢোল বাজিয়ে বলছে, এই হাসপাতালে এত বেড, ওই হাসপাতালে এত কোভিড বেড রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে কী? কোন হাসপাতালে কত বেড খালি রয়েছে তা হাসপাতালের বাইরে ডিসপ্লে বোর্ডে থাকবে না কেন! পৃথক কোভিড ওয়েবসাইট করে সেখানে কেন ঘন্টায় ঘন্টায় আপ ডেট করা হবে না সরকারি-বেসরকারি কোভিড-নন কোভিড বেডের হিসাব? কেন শুভ্রজিৎ, অশোকদের রেফারের জাঁতাকলে বারবার প্রাণ দিতে হবে, অথচ প্রশাসনের চক্ষু উন্মীলন হবে না! কোনও কোনও বেসরকারি হাসপাতাল সরকারের চোখের সামনে কেন টাকা লুঠ করবে? কোভিড চিকিৎসার প্যাকেজ কোন যুক্তিতে ঢাকঢোল বাজিয়ে কলকাতারই বেসরকারি হাসপাতাল বলবে ১০লক্ষ টাকা! চিকিৎসা কেন শুধু পয়সাওয়ালাদের জন্য হবে? কেন সরকার কোভিড চিকিৎসার খরচ বেঁধে দেবে না। টেস্টের মূল্য যদি বেঁধে দেওয়া যায়, তবে কোভিড চিকিৎসার নয় কেন?
দেবদত্তার মৃত্যুর পর মায়া কান্না কেঁদে কোনও লাভ নেই। এই লড়াই দীর্ঘকালীন। তাই প্রশাসন তেলা মাথায় তেল না দিয়ে আসল কাজটা করুক। রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফেরানো যাবে না, এসব গালভরা সিদ্ধান্তের মস্করা বন্ধ হোক। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত সব কর্তাব্যক্তিরা রাস্তায় নামুন। হাল দেখুন, হাল শোধরান, হাল বদলান। নইলে শিওরে সর্বনাশ। হ্যাঁ, বলছি, সবদিক দিয়েই সর্বনাশ। তখন কে সামাল দেবে!!