ঠান্ডা মাথায় খুন করতে স্পেশাল ছুরি! ক্যাব চালকের বয়ানে চাঞ্চল্যকর তথ্য

0
2

হঠাৎ রাগের বশে নয়, একেবারে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা ও ছক করেই লক্ষ্মী দাসকে খুন করেছে ক্যাব চালক শিবশঙ্কর মান্না। পুলিশি জেরার মুখে সেকথা স্বীকার করলো সে।

কিন্তু গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে দিনদুপুরে কীভাবে কোনও বাধা ছাড়াই সার্দান এভিনিউয়ের মতো একটি জায়গায় খুন? ধন্দে পড়েছিলেন তদন্তকারীরা।

পুলিশের সামনে রহস্যের গিঁট খুলেছে অভিযুক্ত নিজেই। শিবশঙ্কর জানিয়েছে, খুব সহজভাবে খুন করতে রীতিমতো অর্ডার দিয়ে বিশেষ ধরণের ছুরি কিনেছিল সে। সেই স্পেশাল ছুরি এখন তদন্তকারীদের হাতে দোষীকে শাস্তি দিতে এখন সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

খুনের কয়েকদিন আগে বন্দর এলাকার নেপালগঞ্জের একটি দোকানে যায় শিবশঙ্কর। এরপর অর্ডার দিয়ে স্পেশাল ছুরির আনায়। গাড়িতে লুকিয়ে রাখে সেই ছুরি। অপেক্ষা করতে থাকে সুযোগের। তার গাড়ি থেকেই ছুরিটি উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। শিবশঙ্করের বয়ান মিলিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা নেপালগঞ্জের সেই দোকানে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জানা গিয়েছে।

ধারের টাকা চাওয়াতেই লক্ষ্মী দাসকে খুন করেছিল ক্যাব চালক শিবশঙ্কর, সেটা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। কিন্তু শিবশঙ্করের এতো টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল কেন?

জানা গিয়েছে, নিজের ক্যাব চালিয়ে শিবশঙ্করের মাসিক রোজগার খুব একটা খারাপ ছিল না। কিন্তু শিবশঙ্করের জীবনে ছিল লাগামহীন বিলাসিতা। ফলে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়ে গেছিল তার। দামি রিস্ট ওয়াচ থেকে শুরু করে সান গ্লাস কিংবা প্যান্ট শার্ট, সবই ছিল ব্র্যান্ডেড কোম্পানির।
শুধু তাই নয়, বন্ধু মহলে নিজেকে বস প্রতিপন্ন করার জন্য বিপুল টাকা খরচ করে নিয়মিত পার্টিও করত সে। শহরের নামি পানশালাতেও তার অবাধ যাতায়াত ছিল। মূলত, এই কারণেই গাড়ির কিস্তির টাকা শোধ করার সময় হাতে টান পড়ত।

লকডাউনে পকেটে আরও টান পড়ে। শিবশঙ্কর তখন প্রতিবেশি কাকিমা লক্ষ্মী দাসের কাছ থেকে টাকা ধার চায়।
লক্ষ্মীদেবী সুদের কারবারি ছিলেন। তাই আগেও দু’বার মিলিয়ে শিবশঙ্করকে মোট ৩৩ হাজার টাকা ধার দিয়েছিল।
কিন্তু সেই ধার সময় মতো শোধ না করায় এবার আর লক্ষ্মীদেবী তাকে টাকা দেয়নি। বরং, আগের টাকা শোধ করার জন্য শিবশঙ্করকে চাপ দিতে থাকে লক্ষ্মী। সেই রাগ থেকেই খুন বলে পুলিশি জেরায় জানিয়েছে শিবশঙ্কর। তাই
লক্ষ্মী কাকিমাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কোষতে থাকে সে। অবশেষে সেই সুযোগ মেলে।

গত শুক্রবার দুপুরে গাড়ির মধ্যেই লক্ষ্মীদেবীকে খুন করে শিবশঙ্কর। তাঁর দেহ নিয়ে গোটা শহর চষে বেড়িয়েছিল সে। সন্ধ্যায় নোনাডাঙার খাল পাড়ে দেহ ফেলে দিব্যি ভাড়াও খাটে শিবশঙ্কর। গভীর রাতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।