সদিচ্ছার জেরে ফের মাথা তুলেছে কাঁকুড়গাছি ESI-এর আজন্মের সঙ্গী ‘মৃতপ্রায়’ অশ্বত্থ

0
1

সদিচ্ছা থাকলে দৃশ্যত অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়৷

কাঁকুড়গাছি ইএসআই হাসপাতাল প্রাঙ্গনে দীর্ঘ ৭ দশক ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো এক অশ্বত্থগাছ৷ সাম্প্রতিক ভয়াল আমফান উপড়ে দেয় সেই মহীরুহকে৷ হাসপাতাল তৈরি হওয়ার প্রায় দু’দশক আগে থেকেই এই অশ্বত্থ ওখানেই ছিলো৷ গাছটি যাতে স্বস্থানে থাকতে পারে, সেজন্য হাসপাতাল ভবন তৈরি হয়েছিল অর্ধ গোলাকৃতি আকারে৷ তার মাঝেই সহজাত গাম্ভীর্যে অবস্থান করছিলো অশ্বত্থ৷

আমফানের কাছে এ ধরনের ঐতিহ্য, ইতিহাস বা বৃক্ষপ্রেম মূল্যহীন৷ তাই অবলীলায় ধ্বংস করেছে ওই অশ্বত্থগাছ আর গাছ ঘিরে জড়িয়ে থাকা হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মী, রোগী পরিবারের সেন্টিমেন্টকে৷ আবেগ এতটাই প্রবল ছিলো যে স্বজনের সুস্থতা কামনা করে রোগীর পরিবার মানত করে ঢিল পর্যন্ত বেঁধে দিতেন অশ্বত্থের ডালে৷ সেই গাছ উপড়ে যাওয়ায় মন খারাপ ছিলো সবারই৷ কেমন ফাঁকা হয়ে গিয়েছিলো জায়গাটি৷ ধরেই নেওয়া হয়েছিলো, অকালমৃত্যু হয়েছে ৭০ বছরের ‘যুবক’ অশ্বত্থের৷ ইতিমধ্যে কেটে ফেলাও হয় লুটিয়ে থাকা গাছের বেশ কিছুটা অংশ৷

দিনকয়েক আগে হঠাৎই কাঁকুড়গাছি ইএসআই হাসপাতালের সুপার ডাঃ ময়ূখ রায়ের নজরে এলো উপড়ে যাওয়া অশ্বত্থের কিছু অংশে প্রাণের উপস্থিতি ৷ চিকিৎসকের নজরে ধরা পড়ে, এখনও মারা যায়নি অশ্বত্থ৷ চেষ্টা করলে এখনও বাঁচানো সম্ভব৷ সুপার ডা. ময়ূখ রায় জানালেন, “অশ্বত্থগাছটি উপড়ে আমার গাড়ির উপরই পড়েছিল। গাড়ির অবস্থা সঙ্গীন হয়েছে৷ ওই গাছ মারা গিয়েছে ধরে নিয়েই কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়। কিন্তু জুনের ১২ তারিখ নাগাদ দেখি, নতুন ডাল, পাতা বেরিয়েছে।”
আর দেরি না করে সেদিনই ময়ূখ রায় যোগাযোগ করলেন পুর দফতরের সঙ্গে৷ কথা বললেন রবীন্দ্র সরোবরে গাছ প্রতিস্থাপন করে এমন একটি এজেন্সির সঙ্গেও৷ প্রতিস্থাপনে মোটামুটি ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে, জানা গেল তাও৷ গোটা হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মী এবং রোগীর পরিবার এগিয়ে এসে নিজেরাই তুলে ফেললেন ওই টাকা৷

অবশেষে শনিবার প্রায় ৮ ঘণ্টা চললো যুদ্ধ৷ হাসপাতাল চত্বরেই আগের অবস্থান থেকে দু’ফুট সরিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ পাওয়া ওই অশ্বত্থগাছটিকে৷ ফের মাথা তুলেছে সেই গাছ৷ ক্রেন দিয়ে মুখ থুবড়ে পড়া গাছটিকে তোলা হয়। শিকড় থেকে মাটি পরিষ্কার করে দেওয়া হয় বিশেষ হরমোন। জেসিবি এনে খোঁড়া হয় গর্ত। সেখানেই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ওই মহীরুহকে৷

‘চেহারা’ কিছুটা খারাপ হয়েছে বটে কিন্তু সদিচ্ছার জেরে ফের মাথা তুলেছে কাঁকুড়গাছি ইএসআইয়ের আজন্মের সঙ্গী সেই ‘মৃতপ্রায়’ অশ্বত্থ।