সাত সকালে হঠাৎ গুলির শব্দ। আঁতকে উঠলেন পাড়া-প্রতিবেশীরা। কোথায় কী হল? ক্ষণিকের মধ্যে চেঁচামেচি-কান্নাকাটি! ক্লাস টেনের ছাত্রটি চেঁচিয়ে বলছে, আমার দিদিটা খুন হয়ে গেল! গুলি চলেছে। ক্ষতি-বিক্ষত গলার নলি। দৌড়াদৌড়ি শুরু। এখনও হয়তো ধরে প্রাণ আছে। না, হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, আগেই মৃত্যু হয়েছে।
এবার পাড়াশুধু কান্নার রোল। এমন ফুটফুটে একটা মেয়েকে কেউ মারতে পারে? এই তো কাল বিকেলেও পাড়ার বাচ্চাগুলোর সঙ্গে খেলছিল নিষ্পাপ মেয়েটি। আজ সে নেই। ভাবতেই পারছেন না কেউ।
বছরখানেক আগে বাবাকে হারিয়েছে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সকলের প্রিয় প্রিয়াঙ্কা। তারও আগে থেকে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই। দাদার ছেলে-মেয়েকে মানুষ করার জন্য নিজেদের সুখের কথা ভাবেনি তাঁরা। সেই পিসিরা হতবাক। মেয়েটাকে মেরেই ফেললো। লোকের বাড়ি কাজ করে মানুষ করেছে। বড় করেছে। পড়াশুনা শিকিয়েছে। পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে। কত স্বপ্ন, নিমেষে সব শেষ!
প্রতিবেশীরাও বলছেন, এমন মেয়ে হাজারে একটা মেলে। হতদরিদ্র পরিবার। দরমার ঘরে থেকে আধপেটা খেয়ে পড়াশুনা করছিল। নিজের পড়াশুনার খরচ তুলতে কিছু টিউশন করতো। বাড়ি থেকে কলেজ আর কলেজ থেকে বাড়ি, এর বাইরে প্রিয়াঙ্কা আর কিছু বুঝতে না। তাঁর এরকম পরিণতি? ভাবতেই পারছে না প্রতিবেশীরা!
ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারে। ভাঙতেও পারে। তার জন্য জীবন দিতে হবে। খুন হতে হবে। বিবাহিত প্রেমিক জয়ন্ত হালদারের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। কোথা থেকে সে এত সাহস পেলো? কোথা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র পেলো? প্রশ্ন তুলছেন প্রতিবেশীরা। এই ছেলে আগামীদিনে আরও বড় ক্রিমিনাল হবে। আতঙ্কে এলাকাবাসী।
সকলে চাইছেন অভিযুক্ত জয়ন্ত হালদারের কঠোর থেকে কঠোরতম বাড়তি হোক। তার সাজা শুধু জেল নয়, ফাঁসির দাবি করছেন প্রতিবেশীরা!!!
উল্লেখ্য, বিবাহিত জানার পরও অভিযুক্ত জয়ন্ত হালদারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা পুরকাইত। জানা গিয়েছে, প্রণয়ের সম্পর্ক থাকায় প্রায় প্রত্যেকদিনই জয়ন্তর সঙ্গে দেখা করত সে। প্রিয়াঙ্কার বাড়িতেও অবাধ যাতায়াত ছিল জয়ন্তর। প্রিয়াঙ্কার বাড়ির প্রত্যেক সদস্যই তাদের সম্পর্কের কথা কমবেশি জানত। কিন্তু সম্প্রতি প্রিয়াঙ্কা জানতে পারে, জয়ন্তর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। আর তারপরই তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। রিজেন্ট পার্কের পশ্চিম আনন্দপল্লিতে কলেজছাত্রী খুনের ঘটনায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার সকাল আটটা নাগাদ প্রিয়াঙ্কা পুরকাইত নাম ওই কলেজছাত্রীর বাড়িতে ঢুকে গুলি করে খুন করে জয়ন্ত। প্রতিবেশীদের দাবি, শুধু গুলি নয়, এরপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রিয়াঙ্কাকে কোপায় প্রেমিক জয়ন্ত। এক পিসির পাশে শুয়েছিল প্রিয়াঙ্কা। ঘুমের মধ্যেই এই মর্মান্তিক ঘটনা!
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়ন্ত তাদের বাড়ির অদূরেই থাকে। প্রিয়াঙ্কার জামাইবাবুর পরিচিত। আর সেই সূত্র থেকেই প্রেম হয় তাদের মধ্যে। জয়ন্ত বিবাহিত, সেকথা জেনেও কিছুদিন সম্পর্ক বজায় রাখে প্রিয়াঙ্কা। ঘোরাফেরা, খাওয়াদাওয়া একসঙ্গেই সবকিছুই হতো। পরিবারের দাবি, স্ত্রীয়ের সঙ্গে যে সম্পর্ক ভালো নয়, সেকথাই বারবার প্রিয়াঙ্কাকে বোঝাত জয়ন্ত। কিন্তু সম্প্রতি প্রিয়াঙ্কা জানতে পারে, জয়ন্তর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পরও কীভাবে গর্ভবতী জয়ন্তর স্ত্রী? প্রশ্ন জাগে প্রিয়াঙ্কার মনে!
এরপরই নিজের ভুল বুঝতে পেরে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায় প্রিয়াঙ্কা। জয়ন্তর সঙ্গে যোগাযোগও কমিয়েও দেয় সে। কিন্তু নাছোড়বান্দা জয়ন্ত ঘটনার কয়েকদিন আগেই নাকি জয়ন্ত বাড়ি এসে প্রিয়াঙ্কা হুমকি দিয়ে যায়। সম্পর্ক না রাখলে পরিবারের সবাইকে খুন করে দেবে বলে শাসিয়ে যায় প্রিয়াঙ্কাকে, এমনকি তার এন্ড্রয়েড ফোনও নিয়ে চলে যায় সে। এরপরই শনিবার সকালে ঘরে ঢুকে খুন করে পালায় জয়ন্ত।
পরিবারের আফসোস, সেসময় থানায় খবর দিলে, আজকে এভাবে খুন হতে হত না প্রিয়াঙ্কাকে! দিনের পর দিন হুমকি দিলেও প্রিয়াঙ্কার পরিবার দুর্নামের ভয়ে কোনও অভিযোগ জানায়নি পুলিশে! অবশেষে এমন পরিণতি!!!