আজকাল-ও এবার কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে, দফতরে ডামাডোল

0
1

দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। আজকাল সংবাদপত্রের জট খুলতে খুলতেও খুলছে না। বরং সেই জট আরও জটিল হতে চলেছে দফতরে কর্মী ছাঁটাইয়ের খবর চাউর হয়ে যাওয়ায়।

গত কয়েক বছর আগেও আজকাল দপ্তরটি ছিল খোলামেলা। কর্মীরা বেতন কম পেলেও, কাজকর্ম করতেন হাসিমুখে। কর্মীদের মধ্যে ছিল যেন একটি পারিবারিক সম্পর্কের বুনন। যদিও প্রচারসংখ্যা ক্রমশ কমেছে। একসময়ের নামকরা কাগজ, দ্বিতীয় কাগজ এখন পঞ্চম স্থানে নেমেছে। যুগে যুগে নানারকম সাহায্য পেলেও বিচিত্র কারণে অর্থসঙ্কট থেকে বেরোতে পারেনি। নতুন ‘মালিক’ সত্যম রায়চৌধুরী এই কাগজে লগ্নি করার পর থেকে আস্তে আস্তে পুরো পরিবেশটাই গেছে পাল্টে। তিনি অনেক দিন ধরেই চাইছিলেন কাগজটির ব্যবস্থাপনায় কর্পোরেট চেহারা আনতে। নিন্দুকেরা বলেন, তিনি নাকি সেই কাজে বাধা পাচ্ছিলেন বারে বারে। এবার তাই আটঘাট বেঁধে নেমেছেন। সত্যম চেয়েছেন আজকালকে প্রচারে এবং আর্থিক কাঠামোগত দিক থেকে আবার শক্তিশালী করে তুলতে। আজকাল-এর হাল ফেরানোর মরিয়া চেষ্টায় বন্ধুস্থানীয় এমন একজন প্রাক্তন কর্পোরেট কর্তাকে এনে তিনি বসিয়েছেন, যিনি শিব গড়তে বাঁদর গড়ে ফেলতে এতটুকু দেরি করেননি! সত্যমবাবুর নির্দেশে ‘এগজিকিউটিভ বোর্ড’ আজকাল পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব নেয় গত ফেব্রুয়ারিতে, যাঁর মাথায় চড়ে বসেন বিদেশে ২২ বছর কাটিয়ে-আসা ওই ভদ্রলোক, খবরের কাগজের খ-ও যাঁর অজানা। তাঁর আস্ফালনে এখন আজকালের সাধারণ কর্মীরা তিতিবিরক্ত। তিনি নাকি সদম্ভে বলেছেন, ‘ইউনিয়ন-টিউনিয়ন আবার কী, ওসব আমি মানি না।’ জানা গেছে, সেই তিনিই কারুর পরামর্শে আজকাল পত্রিকার ইউনিয়ন নেতাদের ‘টাইট’ দিতে গিয়ে হিতে বিপরীত ঘটিয়ে ফেলেছেন। কাগজ উগ্র মমতাপন্থী হওয়া সত্ত্বেও তিনিই আবার গোপনে যোগাযোগ রেখে চলেছেন কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে, যাতে অদূর ভবিষ্যতে এই কাগজের সম্পাদককে সরিয়ে খুব সন্তর্পণে সংবাদপত্রটিকে বিজেপি-র মুখপত্র বানিয়ে তোলা যায়। এ নিয়ে মুরলীধর লেনে রাজ্য বিজেপি দপ্তরে হাসাহাসিও হয়েছে। খবরে প্রকাশ, লকডাউনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই বিদেশ-ফেরত ভদ্রলোকের এখন প্রধান লক্ষ্য কাগজের কর্মী ছাঁটাই। করোনার কারণে ইতিমধ্যেই ৩০% পর্যন্ত বেতন কাটা গেছে কর্মীদের। তাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে। এই দুর্যোগে হাঁড়িকাঠ নিয়ে হাজির প্রাক্তন কর্পোরেট কর্তাটি। জানা যাচ্ছে, অন্তত ২৪ জনের ছাঁটাই-তালিকা তৈরি। এই পরিস্থিতিতে পোড়-খাওয়া সম্পাদকের মুখে কুলুপ। আর ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন এক প্রাক্তনী ও তাঁর এক স্যাঙাত, যিনি সংবাদপত্রেরই অনেক দিনের কর্মী, এখন কর্মীদের চোখে ‘বিভীষণ’। এর সঙ্গে জুটেছেন ওই এগজিকিউটিভ বোর্ডের আরেক সদস্য, যিনি মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে এসে কিছুই করতে না পেরে এখন কর্মী ছাঁটাইয়ে মূল ভূমিকা নিতে মাঠে নেমে পড়েছেন। অভিযোগ যে, প্রাক্তন কর্পোরেট কর্তা, তাঁর পরামর্শদাতা আর তাঁর স্যাঙাত মিলে এত দিনের ঐতিহ্যের সংবাদপত্রটিকে লাটে তুলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। অবধারিত ভাবে এই কাণ্ড নিয়ে সত্যমবাবুর সাধের এগজিকিউটিভ বোর্ডের গরিষ্ঠ সংখ্যক সদস্য এই মুহূর্তে চূড়ান্ত বিরক্ত। তাঁরা এমনকী ভাবছেন শিগগিরই পদত্যাগ করবেন। এসব নিয়ে আজকাল দপ্তরে এখন ডামাডোল চরমে। ফলে সত্যমবাবু সাধ করে আজকালে লগ্নি করলেও তাঁর অজান্তেই তাঁর প্রতিনিধিরা তাঁর সঙ্গে কর্মীদের বিস্তর দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছেন। এদিকে পরিচালকমণ্ডলী সূত্রের খবর, আর্থিক সঙ্কটের কারণেই কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। কর্মীদের অবশ্য বক্তব্য, পরিচালকদের দু একজনের অ্যাটিটিউড প্রবলেমের জন্যেই অকারণে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।