মানুষের জীবনকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করার দিকে এক পা বাড়িয়ে দিলো রাজ্য ৷ প্রশ্ন উঠছে, বাংলার যে সব মানুষ শত কষ্ট সহ্য করে সেই ২৫ মার্চ থেকে শুধু প্রাণে বাঁচতে, লকডাউন বিধি, সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চললেন, তাঁরা কতখানি লাভবান হলেন? তাঁরা এসব না মেনে চললেই বা আর কত ‘ক্ষতিবৃদ্ধি’ হতো ?
শুক্রবারই স্বাস্থ্যদপ্তরের বুলেটিন জানিয়েছে, রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৭৭ জনের শরীরে মিলেছে করোনা ভাইরাস, ঠিক তখনই বাংলাকে কার্যত লকডাউন-মুক্ত, সামাজিক দূরত্ব বিধি মুক্ত করা শুরু হলো ৷ প্রশাসন এদিনই জানিয়েছে গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৭ জন করোনা রোগী। রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ২৩০। এর অর্থ এ রাজ্যে করোনা এখনও সক্রিয়৷ সরকারের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে৷ তবুও
সমস্ত সরকারি, বেসরকারি সংস্থার অফিস খোলায় এদিন সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে৷ সব ধর্মস্থান খুলছে৷ বাস চলবে যত আসন, তত যাত্রী নিয়ে৷ সামাজিক দূরত্ব বলে কিছু থাকবে না৷ প্রশ্ন উঠছে, আরও দ্রুতগতিতে করোনা সংক্রমণের পথ কি খুলে দেওয়া হলো ?
শুক্রবার জানানো হয়েছে,
◾ ৩১ মে চতুর্থ দফার লকডাউন শেষ হওয়ার পরের দিন থেকে রাজ্যে মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরদ্বার খোলায় বাধা থাকবে না৷ ১ জুন সকাল ১০ টা থেকে থেকে মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার, গির্জা খোলা যাবে৷ রেলে যদি হাজার হাজার লোক একসঙ্গে যাতায়াত করবে, তাহলে মন্দির, মসজিদ খুলতে পারে৷ যুক্তি হিসাবে বলা হয়েছে, শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে গাদাগাদি করে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানোর হলে, তাহলে ধর্মস্থান খুলতে কী দোষ! দুরন্ত যুক্তি৷ মানুষের জীবন নিয়েও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পাঞ্জা- লড়াই চলছে৷ প্রশ্ন উঠছে, যে কোনও ধর্মের ধর্মস্থান কীভাবে জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে? তাহলে কী বড় বড় ধর্মস্থান কর্তৃপক্ষের চাপে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো ? এতদিন ধরে বন্ধ থাকা ধর্মস্থানের “রোজগার”- এর দরজা খোলা হলো ?
◾বাইরে থেকে অনেকে করোনা নিয়ে এসেছেন৷ ফলে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ৷ প্রশ্ন উঠছে, এবার তো ঘর থেকেই করোনা -সংক্রমণ বাড়বে, তবুও কেন এই সিদ্ধান্ত ?
◾আগামী ৮ জুন থেকে সমস্ত সরকারি, বেসরকারি অফিস খুলে যাবে ৷ কাজ করা যাবে ১০০ শতাংশ কর্মী নিয়েই৷ একই সঙ্গে বলা হয়েছে, অফিস খুললেও মানতে হবে করোনা স্বাস্থ্যবিধি ৷ বজায় রাখতে হবে দুই ব্যক্তির মধ্যে ৬ থেকে ৮ ফুটের সামাজিক দূরত্ব ৷ প্রশ্ন উঠছে, অফিসে ১০০% কর্মীও আসবেন, আবার ৬-৮ ফুট দূরত্বও রাখবেন ? এটা কীভাবে সম্ভব ৷ অফিসগুলির আয়তন বাড়বে কোন জাদুতে ?
◾বাসে কম লোক নিয়ে চালাতে হচ্ছে, তাতে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে৷ বাস মালিকদের অনুরোধ, যতগুলো সিট আছে, তত যাত্রী নিন৷ এর অর্থ, বাসে সামাজিক দূরত্ব বিধি থাকছে না৷ কেন এই সিদ্ধান্ত ? বাসে যদি না থাকে, তাহলে অন্যত্র এই বিধি মেনে চলতে প্রশাসন বাধ্য করতে পারে কি ?
গত ২৫ মার্চ থেকে দেশজুড়ে চালু থাকা টানা লকডাউন কার্যকর করতে যে প্রশাসন সফল হয়নি, সেই প্রশাসন একাধিক বিধি প্রত্যাহার করার পর নাকি সামাজিক দূরত্ব বিধি যাতে পালিত হয়, সেদিকে নজর রাখবে ? প্রশাসনের এই দাবি বা ঘোষণা নিতান্তই হাস্যকর৷ প্রশ্ন উঠছে, লকডাউন থাকা অবস্থায়, নজরদারি চালিয়েও সামাজিক দূরত্ব বিধি কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে যারা, তারা এবার থেকে ধর্মস্থান, বাস বা অফিস-কাছারিতে এই বিধি কীভাবে মানাবে ? করোনার দাপটে এখনও গোটা দেশের নাভিশ্বাস চলছে৷ রাজ্যেও মারাত্মকভাবে সংক্রমণ বাড়ছে ৷ তারই মাঝে নানা মোড়কে ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করছে কেন্দ্র এবং রাজ্য, দুই সরকারই৷
জানা নেই, দেশবাসীর জন্য পঞ্চম লকডাউন অপেক্ষা করছে কি’না, জানা নেই, এ সবের বাইরে আরও কত ক্ষেত্রে কেন্দ্র দু-একদিনের মধ্যে ছাড় ঘোষণা করে! তবে এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে, করোনা-সংক্রমণ রুখতে ব্যর্থ সব প্রশাসন এখন চাইছে, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং নিয়ন্ত্রিত” দেখাতে৷ মানুষের নজর ঘোরাতে৷ এরপরে ধীরে ধীরে হয়তো সংক্রমণের তথ্যে দেখা যাবে দেশে- রাজ্যে দুম করে হ্রাস পেয়েছে করোনা সংক্রমণ৷ আর তারপরেও চেনা- পরিচিতের গণ্ডিতে যদি করোনা- আক্রান্তের হদিশ মেলে, তবে তা হবে নিতান্তই ‘বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত’ ঘটনা৷
—–































































































































