৮ মে থেকে দেশে সুস্থতার হার দ্বিগুণ হচ্ছে কোন রহস্যে, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

0
1
কণাদ দাশগুপ্ত

দেশে করোনা- আক্রান্তদের সুস্থতার হার নিয়ে কি কারচুপি চলছে ?

শুক্রবার সকালে কেন্দ্র জানিয়েছে, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৭,৯২০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৬৮৫ জন৷

অথচ, স্বাস্থ্য মন্ত্রকেরই হিসেবে গত ১ মে থেকে ৭ মে, এই ৭ দিনে দেশে সুস্থ হয়েছিলেন ৬,৮৯৪ জন৷ এর অর্থ গড়ে প্রতিদিন সুস্থ হয়েছেন ৯৮৫ জন৷

প্রশ্ন উঠেছে, গত ৮ মে থেকে দেশের করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে এমন কি ‘বৈপ্লবিক’ উন্নতি হলো, যে সুস্থতার হার দুম করে দ্বিগুণ হয়ে গেলো ?
কেন্দ্রের এই দাবি কতখানি বিশ্বাসযোগ্য ? নাকি, করোনা সামলাতে ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সরকার মুখরক্ষায় সংখ্যার জাগলারি শুরু করেছে? এই মুহুর্তে দেশে সরকার-ঘোষিত সুস্থতার হার নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক মহলে জোরালো প্রশ্ন উঠেছে৷

কেন প্রশ্ন উঠছে, তার কারনও আছে৷

গত ৮ মে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক নতুন এক নির্দেশিকা জারি করেছে৷ নির্দেশিকায় মৃদু উপসর্গের করোনা আক্রান্তদের ১০ দিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ আর নতুন এই নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়েই বাড়ছে ডিসচার্জ হওয়া রোগীর সংখ্যা৷

গত ৮ মে নতুন ডিসচার্জ নির্দেশিকা জারির পরেই দেশের কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃদু উপসর্গযুক্ত করোনা রোগীর ১০ দিনের মধ্যে শেষ ৩ দিন জ্বর না থাকলে তাকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই রোগীকে ছাড়ার আগে কোনও করোনা পরীক্ষারও প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়েছে নির্দেশিকায়৷ দেখা যাচ্ছে, এই নির্দেশিকা জারির পরই দেশে লাফিয়ে বাড়ছে সুস্থতার হার৷

◾৮ মে-র পরিসংখ্যান বলছে সুস্থ হয়েছেন ১২৭৩ জন৷

◾৯ মে সুস্থ হয়েছেন ১৩০৭ জন৷

◾১০ মে ১৫১১ জন৷

◾১১ মে ১৫৫৯ জন৷

◾১২ মে ১৫৩৮ জন৷

◾১৩ মে আপাতত সর্বাধিক ১৮৪৯ জন৷

◾১৪ মে ১৬৮৫ জন৷

খেয়াল রাখতে হবে, নতুন নির্দেশিকা জারির আগে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকই জানিয়েছিলো,

◾গত ১ মে থেকে ৭ মে, এই ৭ দিনে দেশে গড়ে প্রতিদিন সুস্থ হয়েছেন ৯৮৫ জন৷ ফারাক বিশাল৷

শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে
এই মুহূর্তে ভারতে সুস্থ হয়েছেন ২৭,৯২০। গত ২৪ ঘণ্টা সুস্থ হয়েছেন ১৬৮৫ জন৷ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও, সমান্তরাল হারে বাড়ছে সুস্থতা। এই মুহূর্তে ভারতে সুস্থতা পৌঁছে গিয়েছে ৩৪ শতাংশে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতা বেড়েছে ০.৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী বেড়েছে ৫.০৮ শতাংশ। সুস্থতা বেড়েছে ৬.৪২ শতাংশ। অর্থাৎ ভারতে এখনও আক্রান্তের সংখ্যার থেকে বেশি সুস্থতার সংখ্যার হার।

বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি এত মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছেন ? হালকা উপসর্গের করোনা আক্রান্তদের ১০ দিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার অর্থ কি করোনা-মুক্তি ?স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নতুন এই
নির্দেশিকায় বিপদ বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা৷
শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ডাবলিং রেটের দাবি নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন
বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক মহল৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবারই দাবি করেছেন, দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সময় বেড়েছে। ২ সপ্তাহ আগে ১১.১ দিনে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছিলো, ৩ দিন আগে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩.৯ দিনে আর বর্তমানে ১৪ দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।

চিকিৎসকদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা স্বাস্থ্যমন্ত্রক যাই বলুন, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, নতুন সংক্রমণে প্রতিদিনই দেশে
তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড! শুক্রবারের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩,৯৬৭ জনের দেহে করোনাভাইরাসের হদিশ মিলেছে৷ শুক্রবার সকালে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮১,৯৭০ জন৷ একদিনে ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ দেশে আপাতত মৃত্যু হয়েছে ২,৬৪৯ জনের৷ এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের দাবি কতখানি সঠিক এবং কতখানি আশা জাগাচ্ছে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অথচ, স্বাস্থ্যমন্ত্রক বোঝাতে চাইছে, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও, একটা সমান্তরাল হারে বেড়ে চলেছে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা। অন্য দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দাবি, ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সময়সীমা আরও কিছুটা বেড়েছে। কিছু দিন আগেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছিল ১০ দিনে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানাচ্ছে এখন সেটা বেড়ে ১২.৬ দিন হয়েছে।

কেন্দ্রের এই সব তথ্যকে
‘উদ্বেগজনক’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ এবং
চিকিৎসকরা৷ তাঁদের কথায়, ‘এই ডিসচার্জ নীতি ফুলপ্রুফ নয়৷ সরকারের ডিসচার্জ নীতি হরেক প্রশ্ন তৈরি করছে৷ ১০ দিনের মাথায় কোনও রোগীকে কোভিড হাসপাতাল থেকে বিনা পরীক্ষায় ছেড়ে দেওয়ার ফল কী হতে পারে, সেই বিষয়ে কেউই নিশ্চিত নই৷ তাছাড়া, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর রোগীকে হোম কোয়ারান্টিনে থাকার কথা বলা হলেও ওই রোগীর সংস্পর্শে আরও কতজন সংক্রামিত হয়ে পড়বেন, সেই বিষয়ে অজানা আশঙ্কা কাজ করছে৷
সেই সঙ্গে ধরা পড়ছে সরকারি ব্যর্থতাও৷ নতুন স্বাস্থ্য নির্দেশিকাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, পরবর্তী রোগীর জন্য বেড খালি করতেই বিনা পরীক্ষায় তিন দিন জ্বর না থাকা রোগীকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে!