আবার রাজ্যপালের পত্রবাণ। এবার চার পাতার। লিখলেন, আমি সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যেই কথা বলছি। কিন্তু আপনি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। সিন্ডিকেট চালাচ্ছে সরকার। রাজ্যে পুলিশের শাসন কায়েম হয়েছে। চারপাতার চিঠিতে ১৬টি বিষয় তুলে ধরেছেন। কী লিখেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়?
১. করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে স্বাস্থ্যকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু রেশন ব্যবস্থাকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। যার ফলে রাজ্যে একটা অরাজক অবস্থা তৈরি হয়েছে
২. করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ নিয়েও রাজনীতিকরণ হচ্ছে। মানুষ রাজ্য সরকারের আচরণ নিয়ে ক্ষুব্ধ। ধাপায় যা হচ্ছে তা আমাদের লজ্জার
৩. বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি রাজ্যকে সাহায্য করতে চাইলেও দুঃখের বিষয় হল মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, করোনায় মৃতদেহ দেখার জন্য বিরোধীরা শকুনের মতো অপেক্ষা করছে। এই কথা সঠিক নয় এবং মুখ্যমন্ত্রীর তা ফিরিয়ে নেওয়া উচিত। বিরোধীরা সাহায্যের হাত বাড়াতে গেলে তাদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও সরকারি দল বিনা বাধায় সবরকম কাজ করে চলেছে। এটা রাজনীতির সময় নয়। সকলকে এক সঙ্গে চলতে হবে।
৪. আপনি লিখেছেন রাজ্যপাল সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছেন। কিন্তু রাজ্যের মানুষ জানেন এই রাজ্যে কে সুপার পাওয়ারের উপরে এবং সংবিধানের উপরে ক্ষমতা ভোগ করছেন! আর আমি নিজের সম্বন্ধে বলতে পারি সংবিধানের ১৫৯ ধারা অনুযায়ী আইন মোতাবেক প্রত্যেকটা পদক্ষেপ করি
৫. সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ কোনও পোস্ট করলেই পুলিশ তার বাড়িতে কড়া নাড়ছে এবং তারপর যা হচ্ছে সকলেই জানেন। রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা সরকার হরণ করছে। এটা মারাত্মক ব্যাপার। একই কথা বলতে হয় সাংবাদিকদের ব্যাপারেও। এমন চাপে এর আগে তারা কাজ করেননি
৬. আপনি রাজ্যপালের ক্ষমতা এবং অধিকার সম্বন্ধে 8 নম্বর প্যারায় যা লিখেছেন তা অপরিপক্ক এবং অপেশাদার ভঙ্গিতে লেখা। মনে রাখবেন রাজভবনের যে ব্যক্তি বসে রয়েছেন, তিনি তাঁর বাধ্যবাধকতা, ক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা এবং সাংবিধানিক ক্ষমতা সম্বন্ধে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল
৭. স্বাস্থ্যক্ষেত্র এবং রেশন ব্যবস্থা রাজনীতির শিকার হয়েছে। আর এই বিষয়টাই আমি বারবার তুলে ধরার চেষ্টা করেছি
৮. আমার উদ্দেশ্য ছিল একটাই যাতে হতভাগ্য মানুষগুলো কিছুটা সুরাহা পায় আপনি জানেন বহু স্পর্শকাতর’ বিষয় নিয়ে আমি এখনও একটি কথাও বলিনি, পরে বলতে হবে। তার কারণ, আমার মনে হয়েছে করোনার হামলা প্রতিরোধ করাই এখন আমাদের প্রধান কাজ। আর সেই দিকেই আমি তাকিয়ে রয়েছি
৯. আমি প্রবাদপ্রতিম বিধানচন্দ্র রায়ের নাম উল্লেখ করে আমাদের হুঁশ ফেরানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। স্বাস্থ্য, গণবণ্টন এবং কৃষি ক্ষেত্রের কাজ নেই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন
১০. ‘চিত্ত যেথা ভয় শূণ্য উচ্চ যেথা শির’… গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই লাইন আমাদের শিক্ষার বিষয়। আর আপনি গুরুদেবের এই ধারণা থেকে কত দূরে তা বোঝা যাচ্ছে
১১. আমি ইস্যুগুলো আপনার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। কিন্তু আপনি সবসময়ই সেগুলো উপেক্ষা করে অন্যদিকে চলে গিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবের জমি যে বিস্ফোরক হয়ে রয়েছে অস্বীকার করছেন
১২. আপনি কার্যত হুমকি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার থেকে মাথায় রাখবেন এগুলো আমাকে ভাবায় না শুধু আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই আপনি সংবিধানের ১৬৬ নম্বর ধারাকে উপেক্ষা করছেন
১৩. আপনি বলছেন, জনতার ভোটে আপনি জিতে এসেছেন, তাই রাজ্যপালের কথা শুনবেন না। আসলে এটা স্বৈরাচারের নামান্তর, যা গণতন্ত্রে মানা যায় না। আপনি সাম্প্রতিক ইতিহাসগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন তাহলে আমার কথার অর্থ বুঝতে পারবেন। আমি আপনাকে বলতে চাই, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। সংবিধানকে রক্ষা করতে আমি চেষ্টা করছি মাত্র।
১৪. আপনার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করুন। সমস্যার সমাধান করুন। জেনে রাখবেন আমাকে পাশে পাবেন
১৫. মানুষ জানেন, রাজ্যের ভালোর জন্য আপনার সঙ্গে আমি বারবার কথা বলতে চেয়েছি। আপনার সময় মতো এবং পছন্দের জায়গায়! সেটাও কিন্তু সংবিধানকে মাথায় রেখে
১৬. শেষে বলি, এই তিক্ততা পিছনে পড়ে থাক। এখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়। আসুন হাতে হাত মিলিয়ে দেশকে বাঁচাই আমরা।