ক্যামেরা, কলম, তুলি, সুর। এই নিয়েই সত্যজিৎ। অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়। ৫০ দশকে দাঁড়িয়ে যে সিনেমা তৈরি শুরু করেছিলেন, তা আজও গো গ্রাসে গেলে বাঙালি। কী নেই সেখানে! ক্যামেরার কাজ থেকে সম্পাদনা, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর থেকে সুর। নিজেই সামলেছেন সবটা। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। আজকের ডিজিটাল যুগে সেই সিনেমাগুলি প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। বরং বারবার মন কেড়েছে দর্শকদের।
সত্যজিত রায় তাঁর সিনেমার মধ্যে তুলে ধরেছেন সমাজের বিভিন্ন দিক। গণশক্র থেকে আগন্তুক কিংবা অপু ট্রিলজি প্রতিটা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বার্তা দিয়েছেন সমাজকে। আবার শুধু পরিচালনাতে থেমে থাকেননি। সিনেমার ক্ষেত্রে সুর কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাও বুঝিয়েছিলেন। গুপী গাইন বাঘা বাইনের অন্যবদ্য সুর গুন গুন করে নতুন প্রজন্মও। এমনই প্রভাব সত্যজিতের। নিজেই লিখেছেন ফেলুদার মতো গোয়েন্দা সিরিজ। আবার তাকেই চলচ্চিত্রে রূপ দিয়েছেন। ‘ফেলুদা ‘ নামে জলজ্যান্ত একটা চরিত্র তৈরি করে দিয়েছেন অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রকার।
১৯২১ সালে ২ মে উত্তর কলকাতার গড়পার রোডে তাঁর জন্ম। বাংলা সিনেমার মাইলফলক তিনি। কোনও সিনে ইনস্টিটিউশন বা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের চার দেওয়ালের মধ্যে সত্যজিতের সিনেমা বোঝা সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সত্যজিৎ রায় যে মানের চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন তা বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করেছিল। জাপানি চিত্রপরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া বলেছিলেন, “যিনি সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র কখনো দেখেননি তিনি যেন এই পৃথিবীতে বাস করেও সূর্য এবং চন্দ্র দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত করেছেন নিজেকে।”
তবে সত্যজিৎ রায়ের সীমাবদ্ধতা শুধুমাত্র চলচ্চিত্র জগতে নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরে এমন প্রতিভা বাংলা আর কটা পেয়েছে তা খুঁজতে বসতে হবে। যখনই যা ভেবেছেন তাই করেছেন। আর তাতেই সেরা হয়ে উঠেছেন সত্যজিৎ।
রোল, ক্যামেরা, অ্যাকশনের বাইরেও আরও এক বিরাট জগৎজুড়ে রয়েছে তিনি। বাংলা বা বাঙালি নয়। বিশ্ব জুড়ে তাঁর খ্যাতি। সাহিত্যিক, সুরকার, ক্যালিগ্রাফিতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার।
বাংলা উপন্যাসেও তাঁর অবদান নেহাত কম কিছু নয়। লিখতে বসলে হারিয়ে গিয়েছি মনে হয়। তাঁর রচিত ফেলুদা-র খ্যাতি জগৎজোড়া। এমনকী ফেলুদার ভাবধারাকে বজায় রেখে আজকের দিনেও পরিচালকরা তৈরি করে চলেছেন ডিটেকটিভ সিনেমা। একই সঙ্গে সত্যজিৎ সুরের ছন্দে মাতিয়েছেন তাঁর দর্শকদের। চলচ্চিত্রে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, সুরের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাও বুঝিয়েছিলেন অস্কারজয়ী পরিচালক। তাই তাঁকে কোনও গণ্ডিতে বেঁধে রাখা যায় না। তিনি সত্যজিৎ। যিনি আজও সমান প্রাসঙ্গিক।




























































































































