অগ্রাধিকার কীসে? জামলো মাকদাম দেখিয়ে দিল তৃতীয় বিশ্বে এই দ্বন্দ্ব চলবেইb

0
2

একটি মৃত্যু ফের প্রাসঙ্গিক করে দিল তৃতীয় বিশ্বে চিরকালীন দ্বন্দ্বের ছবিটা। প্রবল করোনা আতঙ্কের আবহে ১২ বছরের হতদরিদ্র কিশোরী জামলো মাকদামের ঘরে ফেরার লড়াই ও অকালমৃত্যুর পর আবারও সেই পুরনো প্রশ্নটাই উঠছে, কোন সমস্যাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? আমাদের অগ্রাধিকার কীসে? এই মুহূর্তে জরুরি কোনটা, স্বাস্থ্য সংকট নাকি অর্থনৈতিক বিপর্যয়? অনেক বেশি মানুষকে বাঁচানোর স্বার্থে নেওয়া নীতি যদি কিছু মানুষের বাঁচার পথকে আরও কঠিন করে দেয় তবুও তা নেওয়া ছাড়া বিকল্প আছে কি? নাকি এই চিরকালীন দ্বন্দ্বই আসলে এই তৃতীয় বিশ্বের ভবিতব্য?

জামলো মাকদাম এক অতি সাধারণ কিশোরী ছিল। ১২ বছর বয়সী ছত্তিশগড়ের এই গ্রাম্য কিশোরী স্কুলে যাওয়ার বদলে তেলেঙ্গানার লঙ্কাক্ষেতে কাজ করত। ভালবেসে নয়, স্রেফ বেঁচে থাকার জন্যে এই কাজটা তাকে করতে হত। চলতি করোনা সংক্রমণের আবহে দেশবাসীর ভালোর জন্য সরকার যখন লকডাউন ঘোষণা করেছে, তখন কাজ হারিয়ে অথৈ জলে পড়েছিল জামলো মাকদাম ও তার সঙ্গীরা। কাজও গিয়েছে, খাবারও জুটছে না। দিশেহারা হয়ে আগুপিছু না ভেবে খালি পেটে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করেছিল জামলো ও আরও কয়েকজন। তেলেঙ্গানা থেকে ছত্তিশগড়ের বিজাপুরের গ্রাম। টানা তিনদিন হাঁটতে হাঁটতে অবিশ্বাস্যভাবে ১৫০ কিলোমিটার পথ পেরোনোর পর আর মাত্র কয়েক কিলোমিটার বাকি থাকতে বাড়ির কাছাকাছি এসেও আর শেষরক্ষা করতে পারেনি দরিদ্র কিশোরীটি। প্রবল পথশ্রম, অভুক্ত শরীর আর ডিহাইড্রেশনের ত্রিফলায় মারা গেল সে। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর চাউর হতে সমবেদনা ছাড়াও সরকারের থেকে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে জামলোর হতদরিদ্র পরিবার। শেষমেশ নিজে মরে পরিবারকে বাঁচিয়ে দিল মেয়েটা।

জামলোকে আজ বাদে কাল হয়তো আমরা ভুলেই যাব। লকডাউনের প্রেক্ষাপটে এটি একটি ঘটনা হয়েই থেকে যাবে। কিন্তু একইসঙ্গে জামলোর মৃত্যু আমাদের কিছু প্রশ্নের মুখেও দাঁড় করাচ্ছে। এবং নিশ্চিতভাবেই এই প্রশ্নের কোনও সরল উত্তরও হয় না ।

যেমন, বিশ্বজোড়া ভয়ঙ্কর মহামারির পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সংকটের মোকাবিলাই কি আশু লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়? কিন্তু তা করতে গিয়ে ভারতের কয়েক কোটি মানুষ যে শুধু জীবিকার সংকট নয়, বরং জীবন-মৃত্যুর অনিশ্চিত সুতোয় ঝুলছে তা নিয়ে কী হবে রাষ্ট্রের ভূমিকা? এক লকডাউন যখন মারণ রোগের হাত থেকে বাঁচতে অসংখ্য মানুষের বর্ম হয়ে উঠছে, তখন সেই লকডাউনই জামলোদের মৃত্যু ডেকে আনছে। কাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা, হয় রোগে মরব, না হয় না খেতে পেয়ে। কিন্তু এই সরল ব্যাখ্যা নিয়ে তো রাষ্ট্রের চলবে না। তাকে মাপতে হবে ক্ষতির বহর কোনটায় বেশি! তাই কিছু জামলোর মৃত্যুর বিনিময়ে যদি আরও বেশি মানুষকে বাঁচানোর সুযোগ আসে রাষ্ট্র সেটাই করবে। তৃতীয় বিশ্বের সামনে এছাড়া আর বিকল্প কী?