করোনা-যুদ্ধে দেশের মডেল হতে পারে কেরল

0
3

অ মনে থাকবে, দেশের প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী ছিলেন কেরল রাজ্যের বাসিন্দা৷ তখন কারোর ন্যূনতম ধারনাও ছিলোনা, করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ বলতে কী বোঝায়? এই ভাইরাস কতখানি রাক্ষুসে ? মানব-নিধনে এই ভাইরাস কতখানি দক্ষ ? বিক্ষিপ্তভাবে বিদেশ থেকে আসা কিছু খবরই ছিলো একমাত্র হাতিয়ার ৷

লড়াই শুরু হয় সেই সীমাবদ্ধ জ্ঞান নিয়েই৷

আর আজ, এ যুদ্ধ কীভাবে লড়তে হয়, দেশকে তার পথ দেখাচ্ছে
কেরল৷ করোনা সংক্রমণ রুখে দিয়ে দেশের তো বটেই, বিদেশেরও নজর কেড়েছে এই কেরল।

করোনা সংক্রমণ রুখে দিতে ঠিক কোন পথে হেঁটেছে কেরল ?

১) অস্বাভাবিক সংখ্যায় পরীক্ষা করেছে, যা এই মুহুর্ত পর্যন্ত কোনও রাজ্য করে উঠতে পারেনি৷ বিপুল হারে পরীক্ষা চালিয়ে খুঁজে বার করেছে
করোনাভাইরাস কতখানি রোগ ছড়িয়েছে৷

২) ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা মানুষদের অনেক বেশিদিন কোয়ারেন্টাইনে রাখা। এ জন্য রাজ্যজুড়ে হাজার হাজার শেল্টার তৈরি করা৷

৩) অর্ধাহারে ও অনাহারে থাকা মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া।

মূলত এই ৩ পথ ধরে এগিয়েই করোনা-সংক্রমণ রুখে দিয়েছে কেরল৷

বাংলা নববর্ষের দিনের খবর, গোটা দেশের যা ছবি, ঠিক তার উল্টো ছবি এখন কেরলে৷ কেরলে গত ১ সপ্তাহ যাবৎ নতুন যতজন করোনা- সংক্রমণের শিকার হয়েছেন, তার থেকে অনেক বেশি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া রোগীর সংখ্যা৷ সোমবারের পর কেরলে আপাতত সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমেছে৷ এবং ছাড়া পাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা বেড়েছে। তাই কেরল এখন দাবি করছে, করোনা-গ্রাফ ‘সমান’ হচ্ছে কেরলে।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের পরিসংখ্যান দেখিয়েছে, তার আগের সপ্তাহের তুলনায় কেরলে করোনা সংক্রমণের পরিমাণ কমে গিয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। দু’‌জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। ৩৪ শতাংশ করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।
সন্দেহ নেই, দেশের যে কোনও মহল্লার তুলনায় এই পরিসংখ্যান ঈর্ষা করার মতো। গোটা দেশে এই কারনেই উদাহরণ হয়ে উঠছে ছোট এই রাজ্যটি। কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা বলেছেন, “আমরা লড়াইটা শুরু করেছিলাম অন্যরকমভাবে৷ আমরা সবসময় ভালো কিছুর আশা করেছি, কিন্তু ২ঘ ঘন্টা তৈরি থেকেছি খারাপ কিছুর জন্য। এখন কেরলে রোগের প্রকোপ কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমরা জানি না পরের সপ্তাহে কী হতে চলেছে।’”

আগাগোড়া কেরল হেঁটেছে কঠোর পথে৷ কোনও ছিদ্রপথেও দলীয় রাজনীতি ঢুকতে দেননি মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন৷ এমনকী নিজের দল সিপিএমকেও এই সংকটকালে সস্তা রাজনীতি করতে দেননি৷
নীতি ছিলো একটাই, কঠোরতা এবং আরও কঠোরতাতবে, কিন্তু তা মানবিকতাবোধ ভুলে গিয়ে নয়।

কেরলে বেশ কয়েক দশক ধরেই বিদেশিদের আনাগোনা বেশি৷ কেরলের বহু ছাত্রও চিনে, আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিতে যায়৷ কেরলের বিশাল সংখ্যক শ্রমিক ভিনরাজ্যে কাজ করেন।

করোনার ইতিহাস বলছে, এমন রাজ্যই করোনাভাইরাসের আদরের ঠিকানা ৷ তাই সংক্রমণের আশঙ্কা কেরলেই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তবুও কেরল’ই রুখে দিতে পেরেছে করোনার ‘জয়যাত্রা’। ভারতে হু–এর প্রতিনিধি করোনা রুখতে একমাত্র ‘কেরল মডেল-এরই’‌ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।

ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ থেকেই বিমানবন্দরে নজরদারি চালানো হয়েছে৷ কেরল সরকার এমনিতেই রাজ্যজুড়ে কড়া ব্যবস্থা ‌নিয়েছে। ইতালির এক দম্পতি করোনা সংক্রমণ নিয়ে প্রায় ৯০০ লোকের সংস্পর্শে এসেছিলেন। কেরল সরকার সেই সমস্ত লোকেদেরও খুঁজে বের করেছে।

কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “দেশের ৬’টি রাজ্য সংক্রমণ রোখার পদ্ধতি জানতে চেয়েছে কেরলের কাছে৷ পাশাপাশি বলেছেন, কেরলের গ্রহণ করা মডেল অনুসরণ করা সম্ভব নয়। কারণ, কেরল দীর্ঘদিন ধরে গণস্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছে। তাঁদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম এতবড় এক সংকটের মুখে কাজে এসেছে। এই পরিকাঠামো না থাকলে সাফল্য পাওয়া হয়ত সম্ভব ছিল না। ‌