দেশজুড়ে ক্রমেই চওড়া হচ্ছে করোনার কালো থাবা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গোটা দেশে লকডাউন করেও আটকানো যাচ্ছে না সংখ্যাবৃদ্ধি। লকডাউনের জেরেই এখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমস্যায় রয়েছে মানুষ। রোজগার নেই। নেই রুটি। ব্যতিক্রমী নয় ডায়মন্ড হারবারও। তবে তিনি থাকতে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের একজনও মানুষকেও লকডাউনে উপোস করতে হবে না। তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের প্রতিটি মানুষের খাদ্য সুরক্ষার ভার নিয়ে বেনজির “কল্পতরু” রূপে নিজেকে ধরা দিলেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই উদ্যোগ বাড়ে বাড়ে মনে করিয়ে দিচ্ছিল ভূপেন হাজারিকার সেই কালজয়ী গান, “মানুষ মানুষের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না…”।
এই সঙ্কটককালে অনেকেই তো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন। তাহলে অভিষেক কেন বেনজির? কেনইবা ব্যতিক্রমী? আসলে যেমন কথা তেমন কাজ। আজ, রবিবার ১২ এপ্রিল থেকে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের ৭টি বিধানসভা অঞ্চলে (ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, সাতগাছিয়া, বিষ্ণুপুর, মহেশতলা, বজবজ, মেটিয়াবরুজ) খাদ্য সঙ্কটে থাকা দল-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি অসহায় মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিলেন অভিষেক। অভিষেকের এই কর্মসূচি চলবে চলবে আগামী ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন। আসলে তিনি তিনি বিশ্বাস করেন, “সবার উপরে মানুষ সত্য”। লকডাউন ভঙ্গ করে মানুষকে খাবারের জন্য আসতে হয়নি। মানুষের বাড়ি পৌঁছে গেলো খাবার। আজ প্রথমদিনই ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের ৫৮ হাজার মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কল্পতরু প্রকল্প। এই নজির সারা দেশে আর কোনও সাংসদের নেই।
“কল্পতরু এই বিপুল মানুষের খাবার পৌঁছে যাচ্ছে কমিউনিটি কিচেন পরিষেবার মধ্য দিয়ে। অভিষেক তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য নজিরবিহীনভাবে ২১টি কমিউনিটি কিচেন তৈরি করেছেন। যেখানে ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে শুরু হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষের জন্য রান্নার কাজ। স্বেচ্ছাসেবকরা সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত পরিবেশে রান্না থেকে শুরু করে প্যাকেট তৈরি এবং তা মানুষের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন একেবারে সঠিক সময়ে।
পুরুষ থেকে মহিলা, আট থেকে আশি দুপুরে খিদের মুখে হাতে পেলেন গরম গরম খাবার। ভরলো পেট। মুখের কোণে তৃপ্তির হাসি। দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করলেন সুখ-দুঃখের সাথী প্রিয় সাংসদকে। সকলে একসুরে বললেন, “উনি আমাদের কাছে সাংসদ নয়। মানুষের মতো দেখতে ভগবানের রূপ। আজকের এই দিন আমরা ভুলবো না। উনি আমাদের পাশে যেমন আছেন। আমরাও ওনার পাশে আছি। আমাদের মুখে উনি অন্ন তুলে দিচ্ছেন। তাই দেশকে বাঁচাতে ওনার কথা মতোই আমরা করোনা যুদ্ধে না জেতা পর্যন্ত আমরা লকডাউন পালন করবো।”
এদিকে লকডাউন পর্বে ডায়মন্ড হারবারের মানুষের জন্য ০৩৩৪০৮৭৬২৬২ ফোন নম্বরটি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের কাজ করেছে। এই নম্বরেই ফোন করে গত ৯ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত খাদ্য সঙ্কটে থাকা মানুষ নিজেদের নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। প্রথমদিনই নাম নথিভুক্ত করা এমন একজনও মানুষ ছিলেন না, যাঁর ঘরে “কল্পতরু” অন্ন পৌঁছায়নি। যাতে একজনও অসহায় মানুষ বঞ্চিত না হয়, তার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দিনভর নজরদারি করেছেন অভিষেকও।
জানা নেই, করোনা মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের যে খেলায় নেমেছে তার কোথায় শেষ। মেঘনাথের মতো আড়ালে থেকে মারণ ছোবল মারছে নরখাদক ভাইরাস। এই যুদ্ধের শেষ পরিণতিও জানা নেই কারও। তবে করোনা যুদ্ধে মানুষ শেষ পর্যন্ত জিতবে কিনা জানা নেই। কিন্তু তার অনেক আগেই মানবিকতাকে জিতিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন অভিষেক। তাই তো আজ ডায়মন্ড হারবার বলছে, “ধন্য তুমি ধন্য …”।