করোনা-যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণে গোটা দেশকে পথ দেখাচ্ছে কেরল।
কেরলে পর পর ৩ দিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যার থেকে অনেক বেশি রোগী সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন৷ ওই রাজ্যে মোট রোগী ৩৫৭ হলেও, প্রকৃত রোগী ২৫৮ জন। আর ইতিমধ্যেই ছাড়া পেয়েছেন ৯৭, যা গোটা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এদিকে এখনই যে লকডাউন উঠবে না সেটা নিশ্চিত। কী ভাবে ধাপে ধাপে লকডাউন তোলা যায়, সব রাজ্যকেই তা ভেবে দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। ১৭ সদস্যকে নিয়ে গঠিত এই কমিটি তাঁদের প্রস্তাব পেশ করেছে বিজয়নের কাছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি ৩৬ পাতার ওই প্রস্তাবে, জানিয়েছে, ৩টি ধরনের ‘পরীক্ষায়’ পাশ করলে স্বাভাবিক জনজীবন ফিরতে পারে কোনও একটি নির্দিষ্ট জেলা। এক একটি পর্যায় পাশ করলেই লকডাউনে কিছু ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কেরলের এই রূপরেখা দেশের অন্যান্য রাজ্য ভেবে দেখতে পারে৷
কেমন সেই ৩ ধরনের পরীক্ষা !
? প্রথম ধাপ
একটি নির্দিষ্ট জেলা তখনই প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় পাশ করবে, যখন:
?পর্যালোচনার দিন থেকে আগের ৭ দিনে কোনও অবস্থাতেই মাত্র ১ জনের বেশি করোনা-রোগীর সন্ধান পাওয়া যাবে না।
?৭ দিন আগে জেলায় যত রোগী হোম কোয়ারান্টাইনে ছিলেন, পর্যালোচনার দিনে সেই সংখ্যাটা ১০ শতাংশের বেশি বাড়লে চলবে না।
?ওই জেলায় কোনও করোনা- হটস্পট থাকবে না।
পর্যালোচনার দিন যদি ১৪ এপ্রিল হয়, তা হলে ৭ থেকে ১৩ এপ্রিলের পরিস্থিতি দেখা হবে ওই নির্দিষ্ট জেলার।
◾◾প্রথম ধাপ উত্তীর্ণ হলে কী ভাবে লকডাউনে ছাড় মিলবে-
◾কোনও জেলা যদি প্রথম ধাপে পাশ করে, তা হলে সতর্ক ও নিয়ন্ত্রিত ভাবে সাধারণ মানুষ রাস্তায় বেরোতে পারবেন।
◾মাস্ক পরতেই হবে। সঙ্গে পরিচয়পত্র রাখত হবেই।
◾নিজের গাড়ি নিয়ে বেরোতে পারবেন তবে একদিন বাদ দিয়ে। অর্থাৎ প্রথম দিন গাড়ি নিয়ে বেরোলে আবার তৃতীয় দিন বেরোবেন।
◾গাড়িতে দু’জনের বেশি থাকলে চলবে না।
◾রবিবার রাস্তায় কোনও গাড়ি বেরোবে না।
◾ধর্মীয় স্থানে কোনও জমায়েত করলে চলবে না।
◾ব্যাঙ্কে ৫০ শতাংশ হাজিরা থাকতে হবে।
◾ট্রেন বা উড়ান চলবে না।
◾সুপার মার্কেট খুলতে হলে, একটা নির্দিষ্ট সময়ে ১০ জনের বেশি থাকবে না সেখানে।
? দ্বিতীয় ধাপ
?প্রাথমিক শর্ত হল পর্যালোচনার দিন থেকে আগের ১৫ দিনে একজনের বেশি করোনারোগীর সন্ধান না পাওয়া।
?১৫ দিন আগে যত জন হোম কোয়ারান্টাইনে ছিলেন, পর্যালোচনার দিন সেই সংখ্যাটা ৫ শতাংশের বেশি বাড়লে চলবে না।
?ওই জেলায় কোনও ভাবে করোনার হটস্পট থাকবে না৷
◾◾দ্বিতীয় ধাপ উত্তীর্ণ হলে কী ভাবে লকডাউনে ছাড় মিলবে-
◾অটো এবং ট্যাক্সি রাস্তায় নামতে পারে। কিন্তু একজনের বেশি যাত্রী তারা নিতে পারবে না।
◾রাস্তায় বাস নামবে, কিন্তু বাসে কেউ দাঁড়াতে পারবেন না।
◾বাসে স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক করতে হবে। যাত্রীকে বাসে ওঠার আগে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতেই হবে।
◾ছোট ব্যবসা খুলতে পারে।
◾বিয়ের অনুষ্ঠান হতে পারে তবে সেখানে কোনো ভাবেই ২০ জনের বেশি জমায়েত করতে পারবেন না।
◾২০ শতাংশ হাজিরার শর্তে বেসরকারি অফিসও খুলতে পারে।
? তৃতীয় ধাপ
?যে দিন পর্যালোচনা হবে, তার আগের ১৫ দিনে একজনও করোনারোগী থাকলে চলবে না ওই নির্দিষ্ট জেলায়।
?১৫ দিন আগে যত জন হোম কোয়ারান্টাইনে ছিলেন, পর্যালোচনার দিন সেই সংখ্যাটা ৫ শতাংশ কমতে হবে।
?করোনার কোনও হটস্পট ওই জেলায় থাকলে চলবে না।
◾◾তৃতীয় ধাপ উত্তীর্ণ হলে কী ভাবে লকডাউনে ছাড় মিলবে-
◾আন্তঃরাজ্য বা আন্তঃজেলা বাস পরিষেবা চালু হতে পারে।
◾শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবায় যুক্ত কর্মীদের জন্য উড়ান চলতে পারে। তবে বিমানে যাত্রী সংখ্যা, মোট আসন সংখ্যার ২০ শতাংশ হতে হবে।
◾জনজীবন পুরো স্বাভাবিক হলে তবেই আন্তর্জাতিক উড়ানে ছাড়পত্র।
◾বিদেশে থাকা মালয়ালিদের ফেরানোর জন্য বিশেষ উড়ান চলতে পারে৷ তবে তাঁদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে।
◾এই পর্যায়ে স্কুল খুলতে পারে শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্য।
কেরল সরকার কমিটির এই রিপোর্ট লাগু করলে এর্নাকুলাম, পালাক্কাড়, ওয়েনাড় জেলা প্রথম ধাপ অতিক্রম করবে৷ গত ৫ দিন এই জেলাগুলি থেকে কোনো করোনারোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি।বিশেষজ্ঞ কমিটির অভিমত, এ ভাবে একের পর এক ধাপ উত্তীর্ণ হলে আগামী ১ জুলাই থেকে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারে কেরল৷































































































































