এই মুহূর্তে এক অশুভ শক্তির অদৃশ্য আগ্রাসী মরণাস্ত্রের মুখোমুখি ভারত তথা গোটা পৃথিবী। মানবসভ্যতাটাকে সে ভয় দেখিয়ে অধীনত করতে চায়, সে বোঝাতে চায় যে তাকে ভয় করে না চললে, তার স্বৈরতন্ত্রী আধিপত্য মেনে না নিলে, তার একনায়কতন্ত্রী বাণিজ্যব্যবস্থায় শামিল না হলে সে প্রত্যেকের সর্বনাশ করে দেবে।
আজ আমাদের দেশ আক্রান্ত অথচ এই মরণাস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমরা নিজেদেরই অর্থনীতির সর্বনাশ করে, কর্মদিবস কে অলসদিবসে পরিবর্তিত করে, সমস্ত সম্বলকে কেবলমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক করে ফেলে, নিজেদের গৃহবন্দি করে রেখে, দিন গুনে যেতে বাধ্য হচ্ছি। কী অসহায় অবস্থায় এনে ফেলা হয়েছে গোটা বিশ্বকে, ভাবা যায়?
সারা বিশ্বজুড়ে ইদানিং জাতীয়তাবাদের উত্থান হচ্ছিল, নিজেদের দেশ, নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের পূর্বকীর্তি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছিলো, পরনির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার একটা প্রয়াস ঘটছিল ব্রেজিল থেকে নিয়ে ভারত, আমেরিকা থেকে নিয়ে ইংল্যান্ডে। তাতে বিশ্বের বাণিজ্য মানচিত্র ধীরে ধীরে বদলে যেত, বস্তুতঃ গোটা বিশ্বে এই প্রথমবার, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ না করেই সম্পদের বিন্যাস পাল্টে যেত। আটকে দেওয়া হলো, প্রত্যেকটি দেশের ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ অবস্থা করে দেওয়া হলো।
আমেরিকার মতন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিমান এবং অর্থবান দেশও আজ হাঁটু মুড়ে বসে আছে, ইউরোপ বিধ্বস্ত, এশিয়া আর আফ্রিকা জুড়ে রক্তক্ষরণ চলছে। বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে, ভারী শিল্প থেকে নিয়ে কুটির শিল্প – সমস্ত উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে, রোজগার বন্ধ, যাতায়াত বন্ধ, উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ স্থগিত, শুধু বাঁচার লড়াই চলছে – সারা বিশ্বজুড়ে এমন গভীর সংকট এর আগে আর কখনো সৃষ্ঠি হয়নি। এমত অবস্থায় প্রতিআক্রমন হবেই এবং সেটা আমেরিকা থেকেই শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
চিন এবং আমেরিকা দুটোই ভয়ঙ্কর দেশ। দুজনেই চায় পৃথিবীটাকে শাসন করতে। এবং দুটো দেশই একমাত্র নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বোঝে না। তবে একটা মস্ত বড় পার্থক্য আছে দেশদুটোর মধ্যে, সেটা হলো গণতন্ত্র। এর ফলে, আমেরিকা দুনিয়া জুড়ে মানুষ মেরে বেড়াতে পারলেও নিজের দেশের একজন নাগরিকের গায়েও হাত দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। আর চিন? ওখানে কম্যুনিস্ট পার্টি নামক গুটিকতক একনায়কতন্ত্রী পিশাচের দল শাসন করে যাদের কাছে নিজেদের দেশ আর পরের দেশ বলে কোনো পার্থক্য নেই, ওরা নিজেদের পার্টির প্রয়োজনে যা ইচ্ছে ধ্বংস করে দিতে পারে।
এই দুটো লোভী দেশের মধ্যে এবার একটা চরম বোঝাপড়ার সময় এসে গেছে কারণ গণতান্ত্রিক আমেরিকার নির্বাচিত সরকারের পক্ষে এত হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুকে নীরবে হজম করে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। চিনের ৭০% খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল এবং আর্থিক প্রতিবন্ধন সেখানে মহামারী সৃষ্টি করতে পারে। আবার আমেরিকা আজকের দিনে একরোল টয়লেট পেপারের জন্যেও চিনের ওপর নির্ভরশীল, ফলে উল্টোদিক থেকেও চাপের যথেষ্ট জায়গা আছে। তাই দুই শক্তির লড়াইটা সামরিক না হয়ে মূলত অর্থনৈতিক, ভূরাজনৈতিক এবং সাইবারক্ষেত্রে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আজকের এই পরনির্ভরশীল অর্থনীতির দুনিয়ায় অন্যের সর্বনাশের ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে নিজের আধিপত্য কায়েম করা যায়না। যে ঘৃণ্য মতবাদ মুষ্টিভর পিশাচকে ১৫০ কোটি নিরীহ মানুষের ওপর স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে উদ্বুদ্ধ করে, তাদের বিদায় হয়তো আসন্ন। কোরোনার সন্ত্রাস সৃষ্টি করে শেয়ারবাজারে তারা ধস নামিয়েছে এবং সারা বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের ভিখারি করে দিয়ে কানাকড়ির দামে সেই সম্পদ সুনিয়োজিতভাবে কিনে নিয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর এই দুষ্কর্মের প্রভাব পড়বেই। আজ অর্থের বিনিময়ে পাশ্চাত্যের মিডিয়াকে চীন আত্মপ্রচারে যতই ব্যবহার করুক না কেন, কোরোনা পরবর্তী আর্থিক সংকটের পরিস্থিতিতে তার উৎসকে ক্ষমা করার ক্ষমতা হয়তো গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে আর নেই।
চিনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সভ্যতার আর আমেরিকার সাথে সখ্যতার। এই মুহূর্তে আমাদের নিজেদের শক্তিও কিছু কম নয় আর এই দুই দস্যুর দ্বৈরথ থেকে আমাদের লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। এটা কোনো কুরু-পাণ্ডবদের যুদ্ধ নয় যে আমাদের ধর্ম-অধর্মের বৈচারিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিজেদের কোনো একটি খেমায় ঠেলে নিয়ে যাওয়ার বিন্দুমাতে প্রয়োজন নেই, কারণ ভূগোল আমরা বদলাতে পারবো না আর একা ইতিহাস গড়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।
আমরা আত্মসংরক্ষণ এবং আত্মস্বার্থরক্ষার পক্ষ নেবো বলেই আমার বিশ্বাস। আগামী দিনগুলো বিশ্বের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আমি এর মধ্যে ভারতের সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট উত্থানপথ দেখতে পাচ্ছি। তবে সবচেয়ে আগে আমাদের কোরোনামুক্ত হতে হবে। আপাততঃ সেদিকেই গোটা দেশের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাক।































































































































